ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

তাবেলা  সিজার হত্যা: ৮ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
তাবেলা  সিজার হত্যা: ৮ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলার বিচার ৮ বছরেও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ মামলার বিচার শেষ হবে নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। তবে তারা বলছেন, আগামী বছর মামলার বিচার শেষ হবে। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে। এদিকে আসামিপক্ষ বলছে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আশা করছি, আসামিরা খালাস পাবেন।

২০১৫ সালের এই দিনে (২৮ সেপ্টেম্বর) গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে দুবৃর্ত্তদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিওবিডির কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। ওই দিনই তার সহযোগী আইসিসিও এর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিক বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জেহাদ হোসেনকে জেরার তারিখ ধার্য ছিল। ওই দিন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। তবে তা শেষ হয়নি। আগামী ২৫ অক্টোবর অবশিষ্ট জেরার তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জেহাদ হোসেন সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন।

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, তাবেলা সিজার হত্যা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষের দিকে। মামলাটিতে এখন দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জেহাদ হোসেনের জেরা চলছে। করোনাকালীন সময়ে আমরা কোনো কাজ করতে পারেনি। এখন আবার বিচার শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, মামলাটির বিচারে আসামিপক্ষ কালক্ষেপণ করছে। তাদের কালক্ষেপণে বিচার শেষ হচ্ছে না। আশা করছি, এ বছর মামলার সাক্ষ্য শেষ হবে। আগামী বছরের শুরুর দিকে মামলাটির বিচার শেষ হবে। আলোচিত এ মামলায় দোষীদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয় আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। 

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে জগিং করার সময় দুবৃর্ত্তদের গুলিতে নিহত হন ইতালির নাগরিক ও নেদারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিওবিডির কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। তাবেলা সিজার নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও কো-অপারেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৬ সালের ২২ জুন ডিবি পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এতে বিএনপি নেতা এমএ কাইয়ুমসহ (কাইয়ুম কমিশনার) সাত জনকে অভিযুক্ত করা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে এই পরিকল্পনা করা হয়।

২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। মামলাটিতে এখন পর্যন্ত চার্জশিটভূক্ত ৭০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

মামলার অপর আসামিরা হলেন-কাইয়ুম কমিশনার, তার ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ ও মো. সোহেল ওরফে ভাঙ্গারী সোহেল। আসামিদের মধ্যে কাইয়ুম কমিশনার ও ভাঙ্গারী সোহেল এখনও পলাতক রয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত পাঁচ জনের মধ্যে আবদুল মতিন ছাড়া বাকি চার আসামিই ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলাটিতে কাইয়ুম কমিশনার ও সোহেল পলাতক। মতিন জামিনে এবং বাকি চার আসামি কারাগারে রয়েছে।

আসামি কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিনের পক্ষের আইনজীবী  ইনজামুল হক সুমন জানান, বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্য হণ পর্যায়ে রয়েছে।  প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে সাক্ষী হাজির হচ্ছে, আমারও এই সাক্ষীদের জেরা করছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সাক্ষী এই আসামির বিরুদ্ধে কোনো কিছুই বলেনি। সাক্ষীদের মাধ্যমে সত্যটা প্রকাশ পাচ্ছে। এই আসামি ঘটনার কিছুই জানেন না। কোনো প্রকার রাজনীতিও করেন না। তার একটাই অপরাধ তিনি সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমের ভাই।এই আসামিকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানোর জন্য চার্জশিটে তার নাম এসেছে। 

তিনি বলেন, চার্জশিটে নাম আসার পর এই আসামিকে গ্রেপ্তার করে ১৯ দিন গুম করে রাখা হয়েছিলো। পরবর্তীতে তাকে কোর্টে হাজির করা হয়। উচ্চ আদালত এই আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। এখন প্রতি ধার্য তারিখে হাজিরা দিয়ে আসছেন। আশা করছি, মামলার সকল কার্যক্রম শেষে এই আসামি ন্যায় বিচার পাবেন।

অন্যান্য আসামিদের আইনজীবী এস এম শওকত হোসেন মিয়া বলেন, আমরা এই পর্যন্ত যতগুলো সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশাবাদী, আসামিরা নিশ্চয় ন্যায় বিচার পাবেন। তবে মামলাটিতে একটি রাজনৈতিকভাবে মোড় নেওয়ার চেষ্টা করেছে।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়