ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘অযোগ্য ডাক্তারদের ঢাকায় রাখেন মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন’

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ২০ জানুয়ারি ২০২৫  
‘অযোগ্য ডাক্তারদের ঢাকায় রাখেন মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন’

ঢাকার আশেপাশে কোন ভালো ডাক্তার রাখেননি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। ভালো ভালো ডাক্তারদের দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছে অযোগ্য ডাক্তারদের ঢাকায় রেখেছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে এসব কথা বলেন তিনি।

এদিন ভোরে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মনসুরাবাদ হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়।

বিকেল ৫টার দিকে রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। মোস্তফা জালালের অসুস্থতার কথা আদালতকে জানান তার আইনজীবীরা।  বিচারকের কাছে চেয়ার প্রার্থনা করে সেখানে বসার অনুমতি চান। বিচারক অনুমতি দেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শুনানি চলে।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সহযোগী ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা তাদের পরামর্শে ছাত্র জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়েছেন। নিউ মার্কেট এলাকায় ১৯ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্মিলিত গুলি বর্ষণে সেদিন ব্যবসায়ী ওয়াদুদ মারা যান।”

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. খায়ের উদ্দিন শিকদারসহ কয়েকজন শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, “তিনি মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি। তিনি কারো কোনো ক্ষতি করেননি। মামলায় হয়তো ওনার নাম আছে, কিন্তু তিনি কাউকে গুলি করেছেন, এটা কেউ বলতে পারবে না। সবার কাছে উনি একজন প্রিয় মানুষ। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গেও ওনার ভালো সম্পর্ক। সবার কাছেই উনি একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ। ঘটনার এক মাস ২ দিন পর দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় এ আসামির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। ওনাকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। তিনি সরকাীর কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। তাহলে তিনি কীভাবে হুকুমের আসামি হন।”

তিনি আরো বলেন, “তিনি লালবাগ চকবাজার এলাকার সাবেক এমপি। এ ঘটনা সেখানকারও না। তিনি ডাক্তার ও বয়স্ক মানুষ। বর্তমানে তিনি অনেক অসুস্থ। তার সময় ডাক্তারি ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা ওনার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করছি।”

এরপর প্রসিকিটর ফারুকী বলেন, “ওনারা বেশি বললে আমাদেরও বেশি বলতে হয়। উনি স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। উনি ভিন্ন মতের কোনো ডাক্তারদের নির্বাচনের সুযোগ দেননি। ঢাকার আশেপাশে কোন ভালো ডাক্তার রাখেননি। ভালো ভালো ডাক্তারদের দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছে অযোগ্য ডাক্তাদের ঢাকায় রেখেছেন।  এ এলাকা ছিল হাজী সেলিমের এলাকা। তিনি এখানে নির্বাচন করলেও পুরো ঢাকা শহরে ওনার প্রভাব রয়েছে।”

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, “আমরা আপনার কাছে ন্যায়বিচার চাই। ওনার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। রিমান্ড দেওয়া হলে উনি সহ্য করতে পারবেন না। এছাড়া উনি অনেক জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত।”

এরপর মোস্তফা জালালকে লক্ষ্য করে বিচারক বলেন, “আপনি কিছু বলতে চান? এরপর মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বলেন, আমার নামে যেসব কথা বলা হয়েছে, সেটা সত্য না। বিএনপির পক্ষ থেকে মাজেদ স্যারসহ অনেকে নির্বাচন করেছেন। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন বিএনপি-জামায়াতের কারো সঙ্গে অন্যায় করিনি। তাদের সবার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। সেজন্য ডাক্তাররা আমাকে মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রথমে সেক্রেটারি, এরপর সভাপতি করেন। বিএনপি জামায়াতের কেউ আমার কাছে কোন কিছু চেয়ে পায়নি, এমন হয়নি। আমার বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ নেই।”

তিনি বলেন, “আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমার বড় ভাই যুদ্ধে হারিয়ে গেছেন। দেশের মেডিক্যাল অঙ্গনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা অনেক কাজ করেছি। আমার একটাই অপরাধ, আমি শেখ হাসিনার রাজনীতি করেছি।আমার নির্বাচনী এলাকা চকবাজার, লালবাগ, বংশাল ও কোতোয়ালি এলাকা। এ এলাকার কোনো মানুষের আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ নাই। নিউমার্কেট এলাকার এসব হত্যার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ মানুষ। সরকারের কোনো সিদ্ধান্তে আমি ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে।”

এরপর আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

ঢাকা/মামুন/এসবি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়