ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

করোনার কোন টিকার কী কাজ

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৩, ১০ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১২:৩৪, ১০ জুলাই ২০২১
করোনার কোন টিকার কী কাজ

করোনার মহামারি থামাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় টিকা উদ্ভাবন হয়েছে। অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় কম সময়ের মধ্যেই আমরা করোনার টিকা পেয়ে গেছি। এটা থেকে বোঝা যায়, করোনার টিকা উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা কতই না নিবেদিত ছিলেন। প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নও একাজকে ত্বরান্বিত করেছে। এখন বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কেবল একটি নয়, বিভিন্ন ধরনের করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে।

টিকাগুলো বিভিন্ন ধরনের হলেও মূল কাজ কিন্তু একটাই- মারাত্মক করোনাভাইরাসকে দূরে রাখতে অ্যান্টিবডি তৈরি করা।এসব টিকাকে ভিন্নভাবে ডিজাইন করা হয় বলে অনন্য উপায়ে ইমিউন রেসপন্সকে উদ্দীপ্ত করে। এখানে পাঁচ ধরনের করোনার টিকা ও কীভাবে কাজ করে তা সম্পর্কে বলা হলো।

* মেসেনজার আরএনএ (এমআরএনএ) ভ্যাকসিন

এ টিকাতে এক ধরনের নির্দেশনা থাকে। টিকাটি ইমিউন রেসপন্সকে উদ্দীপ্ত করতে কোষগুলোকে সক্রিয় করে, যা মারাত্মক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে এমআরএনএ ভ্যাকসিন একটি প্রোটিন বা করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের অংশবিশেষ তৈরি করতে কোষগুলোকে নির্দেশনা দেয়। এটি শরীরের ইমিউন রেসপন্সকে উদ্দীপ্ত করে। এই ইমিউন রেসপন্সে শরীরে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়, যা প্রাণনাশক করোনাভাইরাসকে রুখে দিতে কাজ করে। এভাবে সৃষ্ট কৃত্রিম স্পাইক প্রোটিন মূল ভাইরাসের মতো প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে না। ফাইজার ও মডার্নার করোনার টিকা মেসেনজার আরএনএ (এমআরএনএ) টেকনোলোজির মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে।

* ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন

টিকাটিতে কোনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শরীরে ইমিউন রেসপন্স ও অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করতে আরেকটি ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। মূলত ভিন্ন ভাইরাসের পরিমার্জিত সংস্করণ ব্যবহার করা হয়, যা একটি ভেক্টর হিসেবে পরিচিত।কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে ঠান্ডার ভাইরাস অ্যাডিনোভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি শরীরের কোষে প্রবেশ করে কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের অংশবিশেষ (স্পাইক প্রোটিন) তৈরি করে। শরীরের ইমিউন সিস্টেম এই স্পাইক প্রোটিনকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে এবং প্রতিহত করতে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে ও অন্যান্য ইমিউন সেলকে সক্রিয় করে। গুজব রটেছে যে ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন মানুষের ডিএনএ পরিবর্তন করে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের ভাষ্যমতে এটা সত্য নয়। রাশিয়ার স্পুটনিক ভি এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকায় ভাইরাল ভেক্টর টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে।

* প্রোটিন সাবইউনিট ভ্যাকসিন

এ টিকাতে একটি ভাইরাসের সেই অংশকে ব্যবহার করা হয়, যা প্রাণঘাতী জীবাণুকে রুখতে ইমিউন সিস্টেমকে সবচেয়ে বেশি উদ্দীপনা যোগাতে পারে। টিকাটি গ্রহণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়, কারণ এর দ্বারা সৃষ্ট ইমিউন রেসপন্স তুলনামূলক দুর্বল। একারণে শক্তিশালী ইমিউন রেসপন্স পেতে অ্যাডজুভেন্ট প্রয়োজন হয়। অ্যাডজুভেন্ট হলো এমন একটি উপকরণ যা টিকার কার্যকারিতা বা ইমিউন রেসপন্স বৃদ্ধি করে। আমেরিকান বায়োটেকনোলজি কোম্পানি নোভাভ্যাক্স প্রোটিন সাবইউনিট ভ্যাকসিন ভিত্তিক করোনার টিকা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

* ডিএনএ-বেসড ভ্যাকসিন

থার্ড জেনারেশন ভ্যাকসিন হিসেবেও পরিচিত ডিএনএ-বেসড ভ্যাকসিনে বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিবর্তন সাধিত ডিএনএ ব্যবহার করা হয়। এটিও মারাত্মক ভাইরাসকে হঠাতে কার্যকরী ইমিউন রেসপন্স সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই নতুন টিকা প্রচলিত টিকার তুলনায় বেশি উপকারে আসতে পারে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ডিএনএ বেসড ভ্যাকসিনের স্থায়িত্ব বেশি, সংক্রমণ সৃষ্টিকারী জীবাণু নেই ও প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা যায়।’ ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি জাইডুস ক্যাডিলার করোনার টিকাতে ডিএনএ টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে।

* ইন্যাক্টিভেটেড ভাইরাস ভ্যাকসিন

এ টিকাতে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। এসব ভাইরাসকে ল্যাবে তৈরি করে নিষ্ক্রিয় করা হয়, যেন টিকা গ্রহণকারীর সংক্রমণ না হয়। এ ধরনের টিকা নিলে শরীরে ইমিউন রেসপন্স তথা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, কিন্তু অসুস্থ হয় না। তবে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর কিছু উদাহরণ হলো পোলিও, হেপাটাইটিস এ এবং ফ্লু ভ্যাকসিন। চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের করোনায় টিকায়ও নিষ্ক্রিয় করোনাভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে। ইমিউন রেসপন্স বাড়াতে অ্যাডজুভেন্টও রয়েছে। টিকা দুটিতে অনেক প্রোটিন রয়েছে বলে শরীরে উল্লেখযোগ্য অ্যান্টিবডি তৈরিতে ভালো অবদান রাখতে পারে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়