ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শহর ছেড়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে একদিন 

জাহাঙ্গীর আলম বকুল  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩২, ১৯ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৭:১১, ২১ মার্চ ২০২১
শহর ছেড়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে একদিন 

দিন শুরু হয় প্রত্যুষে। অফিসে ঢুকতে হয় ৮টার আগেই। এরপর নিরবচ্ছিন্ন কি-বোর্ডের খটখট, ই-মেইল ডাউনলোড, নিউজ পোস্ট, ইন্টারনেটে সার্চ, মনিটরে অপলক সজাগ-সতর্ক নজর... সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফেরা। অফিস কিন্তু বন্ধ হয় না। বিকেলে দায়িত্ব নেন অন্য শিফটের সহকর্মীরা। একইভাবে তাদের কর্মযজ্ঞ চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। আর মধ্যরাতে যিনি শুরু করেন, তার দায়িত্ব সকাল ৮টার আসা কর্মীদের কাছে বুঝে দেওয়া পর্যন্ত। যেহেতু অনলাইনে প্রতি মুহূর্তের খবর পাঠকের পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে আমরা, তাই আমাদের কার্যত ২৪ ঘণ্টা দায়িত্বের মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু ১৭ মার্চ দিনটি ছিল অন্যরকম।  

এই দিনে চিরায়ত কর্মব্যস্ততা ছিল না। ছিল অন্যরকম ব্যস্ততা। সেদিন আমরা আরও প্রত্যুষে ঘুম থেকে জেগে অন্যরকম উত্তেজনা নিয়ে অফিসের গেটে হাজির হলাম সকাল সাড়ে ৭টায়। নিউজ, কি-বোর্ড ফেলে শুরু হলো ভিন্ন অভিযান। অন্যরকম দিনের শুরু এখান থেকে। 

কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে উঠে পড়লাম কয়েকটি মিনিবাসে। বাস ছুটে চললো শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে শান্ত-নিস্তব্ধ সবুজে ঘেরা পথধরে। উঁচু-নিচু পথ ধরে ছুটে চলেছে বাস। সবাই বাইরের সবুজ বনানী আর পূর্বাচলের তিনশত ফিট সড়ক ধরে উন্নয়নযজ্ঞ দেখছি। মেসবাহ য়াযাদ জানাচ্ছিলেন– পূর্বাচলের কোনস্থানে কোন গুরুত্বপূর্ণ অফিস হচ্ছে, কোন সড়কের নিচ দিয়ে বিকল্পপথে যাতায়তের ব্যবস্থা থাকবে… ইত্যাদি। আধুনিক ঢাকা গড়ার পরিকল্পনা শুনতে শুনতে এগিয়ে চলেছি। এর মধ্যে তাসলিমা পারভীন বুলাকী তার মোবাইল দিয়ে কীভাবে যেন বাসের স্পিকারে ছাড়লো চেনাজানা সব গান। সেই গানে গলা মেলালো সবাই। আর বাস এগিয়ে চললো। 

ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে; ঢাকার অদূরে সি শেল পার্ক অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে। গ্রামের মধ্যে গাছগাছালিতে ভরা পার্ক। সঙ্গে কয়েকটি খেলার মাঠ। ওই দিন একটি মাঠ ছিল আমাদের দখলে। অবশ্য আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পিকনিকে আসে সেখানে। 

সকালের নাস্তার পর্ব সেরে কিছুক্ষণের অবকাশে চারপাশ দেখে নেওয়ার সুযোগ মিললো। সবাই দলে দলে বেরিয়ে পড়লো। আম গাছ-জাম গাছ-বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে রয়েছে কাঠ-বাঁশ দিয়ে তৈরি হেঁটে চলার পথ। সেই পথে বসে বসন্তের বাতাসে গাছের পাতা ঝরা দেখার সুযোগ। বনে-বাদাড়ে থোকায় থোকায় ফুটে রয়েছে নাম না জানা ফুল। শাহ মতিন টিপুর সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির ডাকের মধ্যে বসে প্রকৃতিকে দেখার সুযোগ খুব আনন্দের। অল্পকথা তিনি মানুষকে কৈশোর-যৌবনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তার এ গুণ মুগ্ধ করে।

আমরা যন্ত্রসভ্যতার মানুষেরা, খুব ব্যস্ত। চারপাশে পা-বাড়ালে ফুল, পাখি, প্রকৃতির দেখা মেলে, তা উপভোগ করি না। দমকা হাওয়ায় শুকনো পাতার ঝরঝর করে ঝরে যাওয়া দেখি না। তাকিয়ে দেখি না সামনের নীলাকাশ। রাইজিংবিডির চড়ুইভাতিতে ছুটে চলা জীবনে কিছুক্ষণের জন্য সেই অনেক দিনের না-দেখাকে দেখার সুযোগ হয়।  

চড়ুইভাতির কষ্ট-সাধ্য আকর্ষণ শুরু হয় চৈত্রের দুপুরে খেলার মাঠে।  সহকর্মীর হৃদ্যতা ভুলে শত্রু-শত্রু খেলা। উপদেষ্টা সম্পাদক উদয় হাকিম যার নাম দেন- ‘২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ’। টস শেষে যথানিয়মে খেলা শুরু হলো এবং এগিয়ে চললো। কয়েকবার ছক্কা হাঁকিয়ে বল হারিয়ে ফেললেন রেজা পারভেজ। সেই সব চার-ছয় ঠেকাতে গিয়ে হাকিম মাহির ফিল্ডিং ছিল চোখে পড়ার মতো। একবার তো তাকে ধরে তুলে দাঁড় করিয়ে দেন দর্শকরা। গোল বল তাও আবার আকারে ছোট; সহজে বাগে আনা যায় না। এর কারণে মারুফ খানের হাত ফসকে কীভাবে যে কয়েকটি ছয় হয়ে যায়। যদিও ফুটবল ম্যাচে একমাত্র গোলটি করেন এই মারুফ খানই।   

খেলা ছিল ১০+১০ ওভারের। কিন্তু হাসান মাহমুদ, ইবনুল কাইয়ুম সনি, নুরুজ্জামান তানিমের বোলিং নৈপুণ্যে তা আর ২০ ওভারে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ব্যাটসম্যানরা অতিরিক্ত ৫ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পান। আর আগে ব্যাট করা রিপোর্টার টিমকে সময়ক্ষেপণের দায়ে তিন বল জরিমানা করেন আম্পায়ার মিলটন আহমেদ। যদিও আম্পায়ারের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির বিস্তর অভিযোগ ছিল। তবে সেই অভিযোগ আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। 

আর খেলায় কারা জয়ী হয়, সে কথা বলতে চাই না। যদিও রিপোর্টার টিম থেকে ডেস্কের বিরুদ্ধে জনি সোমকে ভাড়ায় খেলানোর অভিযোগ তোলা হয়। তবে ফুটবল ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার পর কোনো অজুহাত দাঁড় না করিয়ে তাদের নীরবে ফলাফল মেনে নিতে দেখা যায়। 

খেলার মাঠে ৫ ইভেন্ট শেষ করতে করতে দুপুর গড়িয়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে মাঠ থেকে চলে আসতে হয় রেস্তোরাঁয়। কিন্তু বহুদিন পরে ডুব দিয়ে গোসল করার সুযোগ কেউ কেউ হাতছাড়া করতে চাননি। হাফ প্যান্ট পরে লাফিয়ে পড়েন সুইমিং পুলে। নদীর স্বাদ সুইমিংপুলে মেটানো আর কি! সুইমিং পুলে লাফ-ঝাঁপ করে কেউ কেউ সেটা ভিডিওতে ধারণ করেন। কেউ আবার এই সুযোগে সাঁতারও শিখে নেন।

মধ্যহ্নভোজ পর্বের পর মঞ্চে উঠে মেসবাহ য়াযাদ ঘোষণা দেন র‌্যাফেল ড্র ও পুরস্কার পর্ব অনুষ্ঠানের। যথারীতি তা শুরু হয়। নিয়ম অনুসারে প্রথমে ছোট পুরুস্কার। ক্রমান্বয়ে বড়। দুরু দুরু বুকে সবাই অপেক্ষা করতে থাকেন। যখন একটা নম্বর ঘোষণা হয়, নাম না উঠায় হাঁফ ছাড়েন। অপেক্ষা করতে থাকেন শেষে দিকে নম্বর উঠার জন্য। শেষের দিকে উঠলেই ভালো। অবশ্য এক পর্যায়ে নম্বর উঠার জন্য তাদের দোয়া-দুরুদ পড়তেও দেখা যায়। তারপরও তাদের অনেকের নম্বর আর ওঠেনি। 

মাঝপথে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভ্যানিটি ব্যাগ জুটে যায় ষাটোর্ধ্ব তরুণ কিসমত খন্দকারের ভাগ্যে। তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন, এটা দিয়ে কী করবেন? মেসে নিয়েই বা কাকে দেবেন? অবশেষে মঞ্চেই তার এক প্রিয়মানুষকে ব্যাগটি উপহার দিয়ে নিজেকে ভারমুক্ত করেন। এরপরে ভ্যানিটি ব্যাগ পান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এম. এম. কায়সার। উনার নাকি বড় সাইজের একটা মানি ব্যাগ দরকার ছিল।   

তবে ভাগ্যবান বলতে হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাইজিংবিডিতে ইন্টার্ন করতে আসা রাখীকে। বল ব্যালেন্সিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি র‌্যাফেল ড্রয়ের প্রথম পুরস্কার ফ্রিজ জিতে নেন তিনি। সেক্ষেত্রে নারী সহকর্মীদের ভাগ্যটাই মন্দ। এত দোয়া-দুরুদ পড়েও ছিঁকে ছিড়লো না। তবে বিশেষ কর্তৃত্বের পুরস্কার অর্জন করলেন শামীমা। ফুটবল টিমের একমাত্র নারী সদস্য হিসেবে তাকে প্রকাশক এস এম জাহিদ হাসান দিলেন অর্থ পুরুস্কার। 

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো। বিদায়ের আগে আগে সব চেয়ে বড় পুরস্কার হয়ে হাজির হলেন রাইজিংবিডির মালিক-প্রতিষ্ঠান স্কাইরুট মিডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম মাহবুবুল আলম খালিদ। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও বেশকিছুটা সময় দিলেন। বললেন তার প্রতিষ্ঠান রাইজিংবিডিকে তিনি কোথায় দেখতে চান। দিক-নির্দেশনা দিলেন তার জন্য কী করতে হবে। উৎসাহ দিলেন, দিলেন বিশাল অঙ্কের অর্থ পুরস্কারের ঘোষণাও। তিনি বললেন, উদয়-অস্ত ছুটতে ছুটতে আমরা হাসতেও ভুলে গেছি। সবাইকে নিয়ে কিছুটা সময় হাসলেনও। 

দিনটি ছিল ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন, সরকারি ছুটি। ছুটির দিনে পরিবারকে সময় না দিয়ে রাইজিংবিডির আমন্ত্রণে ওয়ালটন গ্রুপের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক সরকার, নজরুল ইসলাম সরকার, হুমায়ুন করীব, নির্বাহী পরিচালক শাহজাদা সেলিম, সিনিয়র উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান, মিডিয়া উপদেষ্টা এনায়েত ফেরদৌস পুরোটা সময় সঙ্গে থেকেছেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সার্বিক বিষয় তদারকি করেছেন প্রকাশক এস এম জাহিদ হাসান। সহকর্মীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে হাসি-আড্ডা-ঠাট্টায় পুরো অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখেন উপদেষ্টা সম্পাদক উদয় হাকিম। তাদের অংশগ্রহণ চড়ুইভাতিতে ভিন্নমাত্রা পায়।

 

সব শেষে এবার বাড়ি ফেরার পালা। রাতে বিশ্রাম নিয়ে সকালে ফিরতে হবে অফিসে। তবে ফেরার পথে বাসে সনির ‘গেঞ্জি-খোলা’ নৃত্যের কথা দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
 

ঢাকা/বকুল     

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ