শেষ সময়ে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়
হাসান মাহামুদ : রাত পোহালেই ঈদ। তাই শেষ সময়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটছে ঘরমুখো মানুষ।
ঈদে রাজধানী ছাড়তে যাত্রীদের একটি বড় অংশ নির্ভর করে বাস সার্ভিসের ওপর। রাজধানীর বাস কাউন্টার ও টার্মিনালগুলোতে গেলেই এর প্রমাণ মেলে। রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এখন শুধু বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়।
মূলত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যাত্রীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বাস স্টেশনগুলো। এ দিন শেষ কর্মদিবস হওয়ায় যাত্রীদের ভিড় ছিল বেশি। যারা আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলেন, তারা কিছুটা নির্বিঘ্নে যাত্রা করতে পেরেছেন। আর যারা টিকিট কাটেননি তাদের টিকিটের জন্য এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহস্পতিবারের সেই ধাক্কা আজো রয়ে গেছে। আজো সকাল থেকে রাজধানীর প্রায় সকল বাস টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ।
দেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায় সায়েদাবাদ টার্মিনাল ও মানিকনগর বাসস্টপ থেকে। শুক্রবার সকাল থেকেই এখানে যাত্রীদের স্রোত লক্ষ্য করা গেছে। সরাসরি বাস সার্ভিসগুলোর আগেই টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তবুও এসব বাসের কাউন্টারে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। বাসে ওঠার অপেক্ষায় বসে আছে শত শত যাত্রী। সপরিবারে ব্যাগ গুছিয়ে সবাই বসে আছে, কখন বাসে উঠবে সে আশায়।
তবে এসব কাউন্টার সার্ভিসসহ লোকাল বাসেও শেষ দিনে বাড়তি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের প্রায় প্রতিটি গাড়ি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, ইউনিক সার্ভিস, টিআর ট্র্যাভেলস, শ্যামলী পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, হানিফ পরিবহন ইত্যাদি। এসব বাস সায়েদাবাদ থেকে ছাড়ে।
এ ছাড়া একই রুটের কিছু গাড়ি আরামবাগ, রাজারবাগ, মতিঝিল ও ফকিরাপুল থেকেও ছাড়ে। এসব পরিবহনেও শুক্রবারের সার্ভিসে বেশি ভাড়া আদায় করেছে বলে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
স্বাভাবিকভাবে স্পেশাল সার্ভিসগুলো চট্টগ্রাম-ঢাকা এসি বাসে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং ননএসি বাসে ৪৩০ থেকে ৫০০ টাকা রাখে। কিন্তু কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব পরিবহন ননএসি সার্ভিসেই ৮০০ থেকে ১০০০টাকা ভাড়া আদায় করেছে। আর এসি সার্ভিসে নিয়েছে ১ হাজার ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। ইউনিক সার্ভিস, এস.আলম ও হানিফ পরিবহনের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এসব বাড়তি ভাড়ার কথা জানা গেছে।
ফেনী-ঢাকা রুটে চলা স্টার লাইন স্পেশাল ও ড্রীম লাইন স্পেশালেও বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। এই দুটো পরিবহনের ভাড়া যথাক্রমে এসি বাসে ৩৫০ ও ননএসি বাসে ২৭০ টাকা। কিন্তু ঈদের তিন দিন আগে থেকে এখন পর্যন্ত পরিবহন দুটো বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। আজ সকালে স্টার লাইন স্পেশালের ননএসি বাসের ভাড়া আদায় করা হয়েছে ৩৫০ টাকা, আর এসি বাসের ৫০০ টাকা। একই ভাড়া ড্রীম লাইন স্পেশালেও। তবে এ পরিবহনের এসি বাস সার্ভিস নেই। নোয়াখালী-ঢাকা রুটের নোয়াখালী এক্সপ্রেস, ঢাকা এক্সপ্রেসসহ অন্যান্য পরিবহনের ভাড়া ৩৫০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা করে রাখা হচ্ছে।
এসব রুটের লোকাল ও কাউন্টার সার্ভিসগুলোও বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে যাত্রীসেবা ১০০ টাকার পরিবর্তে ৪০০ টাকা, একুশে পরিবহন ২৫০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা করে আদায় করেছে বলে জানা গেছে।
বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে, কুমিল্লা-ঢাকা, ভৈরব-ঢাকা, নোয়াখালী-ঢাকাসহ অন্যান্য রুটের গাড়িতেও।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে মনিটরিং টিমের কার্যক্রম লক্ষ্য করা গেছে। সায়েদাবাদ টার্মিনালে মনিটরিং টিমের দায়িত্বপালনরত মোহাম্মদ সাঈদ নামে এক সদস্য রাইজিংবিডিকে জানান, ঈদের আগে গাড়িগুলো যাতে বাড়তি ভাড়া না নিতে পারে বা যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী না তুলতে পারে, ওসব বিষয় আমরা লক্ষ্য রাখছি। এর বাইরে কোনো যাত্রী অভিযোগ দিলে আমরা সে বিষয়ে খোঁজ করছি এবং সমাধান করার চেষ্টা করছি। যদিও শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মনিটরিং টিমের কাছে কোনো অভিযোগই আসেনি বলে জানান এই সদস্য।
মনিটরিং টিমের পক্ষ থেকে আরো জানা গেছে, মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এবং কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে পুলিশ ও র্যাবের তথ্য কেন্দ্র বসানো হয়েছে। তথ্য কেন্দ্রে রয়েছে একটি অভিযোগ বাক্স। অভিযোগ বাক্সে যেকোনো যাত্রী যেকোনো ধরনের সমস্যার কথা জানাতে পারেন। পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা তাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেবে।
রাজধানীর গাবতলীর বাস টার্মিনালে গিয়েও দেখা গেছে যাত্রীদের ঢল। অনেকে দল বেঁধে বাসে উঠছেন। টার্মিনালের আশপাশের রাস্তাগুলোতে তীব্র যানজট দেখা দেয়। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর অন্যান্য সড়কগুলোতেও। সকাল থেকেই রাজধানীর বহির্গমন পথ গাবতলী, আব্দুল্লাহপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। টার্মিনালে অপেক্ষমাণ গাড়ি ও যাত্রীদের চাপেই যানজট হয় বলে জানায় ট্রাফিক পুলিশ। উত্তরের পথে যাওয়া যাত্রীদের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বেশি যানজট পোহাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গতকাল সকালে মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে এসেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল এখানে শৃঙ্খলভাবে যাত্রীরা বাসে উঠতে পেরেছে, ভাড়াও ঠিক ছিল। কিন্তু গতকাল দুপুর থেকেই আবারও বাড়তি ভাড়া আদায় শুরু হয়। তবে ভাড়া নিয়ে ভাবছেন না ঘরমুখো মানুষেরা। যেন যেকোনো মূল্যে বাড়ি যেতে পারলেই হয়। এখানে ২০০ টাকা করে বাসের ছাদে চড়ছেন যাত্রীরা।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ সেপ্টেম্বর ২০১৭/হাসান/এসএন
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন