ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নতুন জামা পড়ে মায়ের অপেক্ষায় ছিলো তুবা

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১৩ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নতুন জামা পড়ে মায়ের অপেক্ষায় ছিলো তুবা

মাকসুদুর রহমান: মা এলেই তাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে, এই ভাবনা থেকে সকালেই ঈদের নতুন জামা পড়ে সেজেগুজে প্রস্তুত ছিলো তুবা। কিন্তু তুবার অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। কারন সময় গড়ায় মা যে আর আসে না। আসবেই বা কিভাবে? মা তো এখন না ফেরার দেশে। চার বছরের শিশু তাসমিন মাহিরা তুবাতো সেটি বোঝে না। তাই মা না আসায় ডুকরে ডুকরে কেঁদেছেন পুরো ঈদের দিন। কখনো মাকে ফোন করে, কখনো এটা-ওটা রেধে মায়ের জন্য বসে থেকেছে সে। আর অপেক্ষা করেছে এই বুঝি এলো মা।  

২১ জুলাই তুবাকে ভর্তির জন্য বাড্ডার একটি স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যান তুবার মা তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)।

ওই ঘটনার পর থেকেই তুবা খুঁজে ফেরেন মাকে। প্রশ্ন করেন মা কবে আসবে? ঈদের দিনও স্বজনদের কাছে তুবার প্রশ্ন মা আসবে কবে? তুবার এমন আচরণে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না-বলছিলেন অবুঝ তুবার স্বজনেরা।

মঙ্গলবার দুপুরে তুবার মহাখালীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ছোট তুবাকে নিয়ে খালা বসে আছেন। এরই মধ্যে মা-মা বলে ডুকরে কেঁদে ওঠে তুবা। এ সময় তার হাতে খেলনা মোবাইল দিয়ে স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন খালা নাজমুন নাহার নাজমা। মোবাইলের বটম টিপে ‘মা তুমি কবে আসবে?-বলে বারবার প্রশ্ন করছিলো নিস্পাপ তুবা।

আত্মীস্বজনরা জানান, তুবা জানে তার মা আমেরিকা গেছেন। এ কারণেই সে মোবাইলে মিথ্যা মিথ্যা তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে।

তুবার খালা নাজমা বলেন, ‘তুবা এখনও মা’র মৃত্যুর খবর জানে না। আমেরিকা থেকে তার জন্য খেলনা ও চকলেট নিয়ে আসবেন-এই ভাবনায় ঈদের দিন খেলনা বাটিতে খিচুড়ি রান্না করেছে মায়ের জন্য। খাওয়াতে না পেরে কান্নাও করেছে। ছোট্ট শিশুর এমন আচরণে চোখে পানি চলে আসে ভাই। কিন্তু তাকে বলতেও পারছি না। চার বছরের বাচ্চা, মৃত্যু কি, আমেরিকা কি-তাইতো সে বোঝে না। শুধু বুঝতে পারছে মা নেই। একটু পর পর মাকে খুঁজছে।’ এ কথা বলার সময় নাজমারও চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতে থাকে।

“আমি তুবার খালা হলেও ঘটনার পর থেকে মায়ের আদর-যত্ম দেয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু মায়ের অভাব কি পুরণ হয়? যারা তাকে মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই”, বলেন তুবার এই খালা।

রেনু হত্যাকান্ডে তার বোনের ছেলে সৈয়দ নাসিরউদ্দিন বাদি হয়ে বাড্ডা থানায় মামলা করেন ঘটনার পর। মামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ আগস্ট ২০১৯/মাকসুদ/নবীন/রেজা/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়