ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আনিসুলের মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ১০ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৬:৩৯, ১০ নভেম্বর ২০২০
আনিসুলের মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: পুলিশ

রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপনের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেছেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে তেজগাঁও বিভাগের নিজ কার্যালয় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। 

তেজগাঁও জোনের ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় স্পষ্ট মনে হয়েছে- এএসপি আনিসুলের মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বেলা আনুমানিক ১১টা ৪৫ মিনিটে আসামিরা আনিসুল করিমকে হাসপাতালের দোতলার একটি রুমে মারতে মারতে ঢুকায়। তাকে রুমের ফ্লোরে জোর করে উপুড় করে ৩-৪ জন হাঁটু দিয়ে পিঠের ওপর চেপে বসে। কয়েকজন পিঠমোড়া করে ওড়না দিয়ে তার দুই হাত বাঁধে। কয়েকজন কনুই দিয়ে ঘাড়ের পেছনে ও মাথায় আঘাত করে। একজন মাথার ওপরে চেপে বসে এবং আসামিরা সবাই মিলে পিঠ, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্নস্থানে কিল-ঘুষি মারে। ফলে আনিসুল করিম নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। এ ঘটনার সঙ্গে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ও ব্যবস্থাপনার জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আসামিরা হলেন- মাইন্ড এইডের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কিচেন সেফ মাসুদ, ওয়ার্ড বয় জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, লিটন আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম পলাশ ও ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান।

তিনি আরও বলেন, গত সোমবার (৯ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৩১তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারের সদস্য মো. আনিসুল করিমকে চিকিৎসা করোনার জন্য তার পরিবাবের সদস্যরা আদাবর থানাধীন বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির ২ নম্বর সড়কের ২৮১ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তিনি হাসপাতালের একটি রুমে নাস্তা করেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ওয়াশরুমে যেতে চাইলে ১১টা ৩৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় তাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দোতলায় নিয়ে যান। তখন তার বোন উম্মে সালমা সঙ্গে যেতে চাইলে আরিফ মাহমুদ জয় ও রেদোয়ান সাব্বির তাকে বাধা দিয়ে কলাপসিবল গেট আটকে দেন।

আনুমানিক ১২টার দিকে আসামি আরিফ মাহমুদ জয় নিচে এসে তার বোনকে ওপরে যাওয়ার জন্য ডাক দেন। তার বোনসহ পরিবারের লোকজন গিয়ে আনিসুল করিমকে একটি রুমের ফ্লোরে নিস্তেজ অবস্থায় দেখতে পান। পরে পরিবারের সদস্যরা একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে দ্রুত জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে আনিসুল করিমকে ১২টা ৫৮ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আনিসুল করিমের বাবা বাদী হয়ে আদাবর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা হত্যায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

ডিসি আরও বলেন, মাইন্ড এইড হাসপাতালটির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। অবৈধভাবে তারা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগীর চিকিৎসার নামে বাণিজ্য করে আসছে। স্থানীয় কিছু ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান, অ্যাম্বুলেন্স মালিক এবং দালালদের যোগসাজশে হাসপাতালটি প্রতারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য সেখানে কোনো চিকিৎসক নেই। এখানকার চিকিৎসাধীন রোগীরা চলে গেলে হাসপাতালটি আমরা বন্ধ করে দেব।

সাইফুল/এসএম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়