ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাংলাদেশ ২০৩৫ সালে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশ হবে: অর্থমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
বাংলাদেশ ২০৩৫ সালে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশ হবে: অর্থমন্ত্রী

জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী (ফাইল ফটো)

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিইবিআর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে ৪১তম অর্থনীতির দেশ। ২০৩০ সালে ২৮তম এবং ২০৩৫ সালে ২৫তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। সে সময় আমাদের জিডিপির আকার হবে ১.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।’

সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) একাদশ জাতীয় সংসদের ১১তম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর গৃহীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী ভাষণের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। একই সঙ্গে করোনায় মৃতদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সাল আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্ববহ বছর। এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। এ বছর আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী। আবার এ বছরই আমাদের জাতীয় জীবনে অন্যতম অর্জনের স্মারকবাহী বছর। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের চলতি মাসেই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করবে।’

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত শতাব্দীর ৩০-এর দশকে মহামন্দায় বড় বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলো বিপাকে পড়েছিল। দশক জুড়ে চলে মহামন্দা। ৯০-এর দশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতিতে আসে দুর্যোগ। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন খাত থেকে শুরু হওয়া মন্দা উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু করোনার মতো এমন সর্বজনীন মন্দা বিশ্ব আর কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। এই অর্থনৈতিক মন্দাকে এক যুগ আগে ঘটে যাওয়া আর্থিক মন্দার চেয়েও বড় এবং ৩০-এর দশকের মহামন্দার পর সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত অভিঘাত করোনার সংকটময় পরিস্থিতির ভয়াবহতা শুরুতেই অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির প্রতি তার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ জাতিকে উপহার দিয়েছেন। যার বাস্তবায়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এটি একটি অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ব্লুমবার্গ প্রকাশিত করোনা সহনশীল দেশের আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ২০ নম্বরে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক অনুযায়ী, ২০২০ সালে মাত্র ২২টি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হবে। এ তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে একটি।’

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। করোনার সময়ে সারা বিশ্বে পুঁজিবাজারে পতন ঘটে। কিন্তু আমাদের সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে পুঁজিবাজারের মূল্যসূচক বেড়েছে ২৭ শতাংশ। আমাদের অর্থনীতির আরেকটি চালিকাশক্তি আমাদের প্রবাস আয়। করোনা আক্রান্ত সময়েও আমাদের প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৩ শতাংশ। আমি প্রবাসী ভাইবোনদের এ সময়ে এগিয়ে আসাকে সাধুবাদ জানাই।’

অর্থমন্ত্রী জানান, ২০০৮ সালে বাংলাদেশের জিডিপি’র আকার ছিল ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্বাধীনতার পর ৩৮ বছর লেগেছিল বাংলাদেশের ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে। আর মাত্র গত ১২ বছরে তা তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি জানান, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জিডিপিতে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৬ শতাংশ। গত ৫ বছরের গড় ছিল ৭.৪ শতাংশ। করোনার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বেড়ে ৮.১৫ শতাংশ হয়েছিল। ইউরোপের প্রখ্যাত অর্থনৈতিক বিশ্লেষক স্পেকটাটর ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সময়কালে বাংলাদেশ ১৮৮ শতাংশ জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে সারা বিশ্বে সবার উপরে ছিল। একইভাবে মাথাপিছু জাতীয় আয় ৬৮৬ ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৬৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। দেশে পণ্য রপ্তানি আয় ছিল ১৪.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তিনি বলেন, ২০২০ সালেই প্রবাস আয় এসেছে ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। ২০০৮ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৬.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বর্তমানে সাত গুণ বেড়ে ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০০৮ সালে পুঁজি বাজারের মার্কেট ক্যাপটিালাইজেশন ছিল ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা, যা এখন সাড়ে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ২৮ কোটি টাকা, এখন তা ৬৪৮ কোটি টাকা হয়েছে।

এছাড়া, চাল উৎপাদন ২ কোটি ৮৯ লাখ মেট্রিক টন থেকে ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন হয়েছে। বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন কৃষির বহুমুখীকরণ এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। আজ এর পরিমাণ চার গুণ বেড়ে ২১ হাজার ২৩৯ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছিল ৪৭ শতাংশ, তা এখন দ্বিগুণ বেড়ে ৯৯ শতাংশ। ২০১৮ সালের ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও ব্যবহার শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়