ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু শোষিত মানুষের ভাগ‌্য পরিবর্তনে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন: প্রধানমন্ত্রী

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ১৯ মার্চ ২০২১   আপডেট: ২০:৪৮, ১৯ মার্চ ২০২১
বঙ্গবন্ধু শোষিত মানুষের ভাগ‌্য পরিবর্তনে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এ দেশের শোষিত মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য বঙ্গবন্ধু তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তার নিজের জীবনে কোনো চাওয়া পাওয়া ছিল না। তার ওপর দিনের পর দিন অত্যাচার, নির্যাতন চলেছে। কিন্তু তিনি দমে যাননি। তিনি একটাই লক্ষ্য স্থির করেছিলেন, তা হলো—দেশকে স্বাধীন করা।’

শুক্রবার (১৯ মার্চ) জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের ‍তৃতীয় দিনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘এজন্য তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দল গোছানোর জন্য দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মন্ত্রিত্ব ছাড়েন দলকে শক্তিশালী করার জন্য। কারণ, তিনি জানতেন কোনো কিছু অর্জন করতে হলে শক্তিশালী সংগঠন দরকার। বিশ্বের অনেকে মন্ত্রিত্বের লোভে দল ছেড়ে দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দলকে সুসংহত করার জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন। এই দৃষ্টান্ত আসলে খুব কমই পাওয়া যায়। কিন্তু সেজন্য তাকে অনেক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। সবকিছুই তিনি মেনে নিয়েছিলেন।”

তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শুক্রবার (১৯ মার্চ) সকালে বাংলাদেশে এসেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে ২৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।

‘দেশের মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও দুর্দশা দেখে তা লাঘব করার জন্যই যেন তিনি সব সময় ব্যস্ত ছিলেন’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি বার বার কারাবরণ করেছেন। তিনি মুক্তি পেয়েছেন। আবারও গ্রেপ্তার হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের একমাত্র ভূমিপুত্র। এদেশের সন্তান হিসেবে তিনি সংগ্রাম করেছেন। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একসময় নিষিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু আজকে এই ভাষণ বিশ্ব ঐহিত্যে স্থান পেয়েছে। একুশটা বছর তারা সব নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল তারই আদর্শ নিয়ে চলেছে। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছে। সবার সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসে আমরা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছি।’

এসময় পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কন্যা শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী পচাঁত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যার শিকার পিতা বঙ্গবন্ধু, মা বেগম ফজিলাতুন নেসা মুজিবসহ পরিবারের সদস্যদের কথা বলতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন। 

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশের ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। তবে, সত্যকে যে মুছে ফেলা যায় না, তার প্রমাণ আজকের এই অনুষ্ঠান।’

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠানে বন্ধুপ্রতিম শ্রীলঙ্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এই উদযাপনকে মহিমান্বিত করেছেন।’

এসময় তিনি অনুষ্ঠানে বার্তা পাঠানোর জন্য রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান। এছাড়া যেসব বিশ্বনেতৃবৃন্দ বার্তা পাঠিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের সকলের বার্তা আমাদের অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে।’

‘শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে। আমরা পরস্পরকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে থাকি। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু এবং তিনি সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে অবস্থান করেন। আমিও চেষ্টা করি সেই বন্ধুত্বের প্রতিদান দিতে।

‘এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের যোগদান তাঁর নিজের এবং শ্রীলঙ্কার জনগণের সঙ্গে আমাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই প্রতিফলন। আমি আশা করি, আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যকার এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা ইশারা ভাষায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, মুজিববর্ষের থিম সংগীত, ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’ শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন এবং সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের স্বাগত বক্তব্যের পর থিমভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

আলোচনার সময় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভি লাভরফের ভিডিওতে ধারণ করা শুভেচ্ছা বার্তা প্রদর্শন করা হয়। এরপর সম্মানিত অতিথি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বক্তব্য দেন। তারপর রাজাপাকসেকে দেওয়া হয় ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা-স্মারক প্রদান করেন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

ঢাকা/পারভেজ/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়