ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর, বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা 

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২০, ৩০ জুন ২০২১  
পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর, বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা 

করোনা পরীক্ষার জন‌্য হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা

করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি ঠেকাতে সবাইকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া সংক্রমণ ঠেকানোর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই বলেও জানান তারা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও বিভিন্নভাবে মানুষজন ঢাকা ছেড়েছে, ছাড়ছে এবং ঢাকায় প্রবেশ করেছে। সেকারণেই সারা দেশে প্রতিদিন সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। তাই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যাতে মানুষজন বাড়ি থেকে বের না হন, সেজন্যই এই কঠোর লকডাউনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিগত দিনে মানুষদের এই অবাধ চলাফেরা কোনোভাবেই ঠেকিয়ে রাখা যায়নি বলে, সারা দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘করোনায় মৃত্যু এবং সংক্রমণে সারাদেশে অবনতি ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতি দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যই কঠোর লকডাউনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে দেওয়া লকডাউনে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অসুবিধার সৃষ্টি করলেও এ মূহুর্তে এর কোনো বিকল্প নেই। ক্রমবর্ধমান করোনায় মৃত্যু কমিয়ে আনার ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন। এজন্য দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।’

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার বলেন, ‘গত বেশ কিছুদিন থেকে রোগীর পরিমাণ প্রতিদিনই বাড়ছে। করোনা রোগী গড়ে ১০০ এর ও বেশি প্রতিদিন হাসপাতালে আসছেন। চিকিৎসাসেবা দিতে আমাদের চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। এখানকার ৩০০ সাধারণ বেডের পাশাপাশি  ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)-এর প্রায় সব বেডেই রোগী ভর্তি আছেন। করোনার এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সবাইকে আরও সতর্ক হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিধিনিষেধ এবং লকডাউন মানার পাশাপাশি- সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

মিরপুর এম আর খান শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ফরহাদ মনজুর বলেন, ‘প্রতিকার এবং করনীয় একই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যারা টিকা দিয়েছেন, যারা দেননি, সবার জন্য একই কথা প্রযোজ্য। দয়া করে সবাই লকডাউন মেনে চলুন। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হবেন না। ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। ময়মনসিংহ বিভাগে গত ৩ দিনে যত মানুষ মারা গিয়েছে তার বেশীর ভাগ গ্রামের। বাঁচার উপায়, বাড়ির বাইরে না যাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মানা আর মাস্ক পরা।’

আজ (৩০ জুন) শেষ হচ্ছে ৪ দিনের লকডাউনের প্রথম পর্ব। করোনা সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে সারাদেশে ৭ দিনের জন্য কঠোর লকডাউন শুরু হতে যাচ্ছে। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হলেই কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলে মঙ্গলবার (২৯ জুন) সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে।

কঠোর বিধিনিষেধের এই লকডাউনের সময় সরকারি, বেসরকারি অফিসের পাশাপাশি সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। জরুরি পরিষেবা প্রদানকারীরা প্রতিষ্ঠানের যথাযথ পরিচয়পত্রসহ কাজে যেতে পারবেন। কেউ জরুরি কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে কেউ বের হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হবেন, তাদের সকলকে মাস্ক পরিধানসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

১ জুলাই দেশব্যাপী শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে সরকারি বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে নিয়মিত পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী এবং বিজিবিও মাঠে থাকবে।

খুলনা, রাজশাহী, যশোর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে প্রায় ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশিসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত মানুষের সংখ‌্যা বাড়ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ও হাসপাতাল  থেকে সার্বিক অবস্থা জানিয়েছেন রাইজিংবিডির প্রতিনিধিরা।

উল্লেখ্য, ২০ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত ১০ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ হাজার ৪০৯ জন। গড়ে প্রতিদিনে আক্রান্ত ৫ হাজার ৬৪১ জন। এ পর্যন্ত সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ লক্ষ ৪ হাজার ৪৩৬ জন। উল্লেখিত ১০ দিনে মোট মারা গেছেন ৯২৪ জন। গড়ে প্রতিদিনে মৃত্যু ৯২ জনেরও বেশি। ৩০ জুন পর্যন্ত সর্বমোট মৃতের সংখ্যা ১৪ হাজার ৩৮৮ জন। সর্বমোট পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ৮২২ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮ লক্ষ ১১ হাজার ৭০০ জন। এ মাসে টানা ৩ দিন মারা গেছেন শতাধিক মানুষ। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চও মৃত্যুও হয়েছে গত ২৭ জুন, ১১৯ জন।

ঢাকা/মেসবাহ/এমএম 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়