ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্বপ্নের আশ্রয় পেল আরও ২৬ হাজার পরিবার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২১ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১১:০৭, ২১ জুলাই ২০২২
স্বপ্নের আশ্রয় পেল আরও ২৬ হাজার পরিবার

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় দফায় স্বপ্নের আশ্রয় পেল আরও ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবার।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ভূমিহীন ও গৃহহীনদের কাছে আরও ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের কাছে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করেন।

প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলাধীন চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলাধীন গৌরম্ভা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলাধীন চর ভেড়ামারা আশ্রয়ণ প্রকল্প, পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলাধীন মহানপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প ও মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলাধীন জাঙ্গালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হন।

এ সময় শেখ হাসিনা পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সবগুলো উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করেন।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে দেশব্যাপী মোট ৬৭ হাজার ৮০০টি ঘর দেওয়া হচ্ছে। এই ৬৭ হাজার ৮০০ ঘরের মধ্যে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে এবং বাকি ৮ হাজার ৬৬৭টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি, ৬৩ হাজার ৯৯৯ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার তাদের মাথার উপর ছাদ পায়। আর গত বছরের ২০ জুন আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি পরিবার ঘর পায়। 

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে সরকার ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই ও জলবায়ু সহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে ঘরগুলোর নকশা পরিবর্তন করেন। এতে ঘরগুলোর নির্মাণ খরচ বেড়ে যায়। আর এজন্যই এখন গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষেরা দুই শতাংশ জমির ওপর আরও উন্নতমানের টিনশেডের আধাপাকা ঘর পাবে।

ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই করে গড়ে তোলায় প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যায় ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত হয়। সরকার ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই করে নির্মাণ করতে মজবুত কড়ি কাঠ, পাথরের সর্দল ও রিইনফোর্স কংক্রিট কলাম (আরসিসি) পিলার ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস জানান, ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ঘরের নির্মাণের জন্য ৪০২৮ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের আওতায় চর অঞ্চলের জন্য ১ হাজার ২৪২টির মতো বিশেষভাবে নকশাকৃত ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় কিংবা বন্যার মতো যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে বিশেষভাবে স্থানান্তরযোগ্য করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে-যাতে করে বাড়িগুলো অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের আবাসনের জন্য সরকার খাস জমি ছাড়াও ১৯১ দশমিক ৭৯ একর জমি ক্রয় করেছে। বিশ্বের এটা একমাত্র দৃষ্টান্ত যেকোনো দেশের সরকার এ ধরনের কাজে জমি ক্রয় করেছে। জমি ক্রয়ের জন্য ১৩৪ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ক্রয়কৃত জমিতে যে ঘরগুলো নির্মিত হয়েছে- সেখানে মোট ৮ হাজার ৪৬২টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার এই প্রকল্পের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে ৫ হাজার ৫১২ দশমিক ০৪ একর জমি উদ্ধার করে। সরকারের উদ্ধারকৃত এই খাস জমির বাজার মূল্য ২ হাজার ৯৬৭ দশমিক ০৯ কোটি টাকা।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ থেকে মোট ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৭০টি পরিবারের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসিত পরিবারগুলোকে তিন মাসের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

সরকারের নীতি অনুযায়ী, এই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা ও অসমর্থ মানুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য কমিউনিটি সেন্টার, মসজিদ, গোরস্থান, পুকুর ও রাস্তাঘাটও তৈরি করা হচ্ছে।

প্রকল্প এলাকাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়েছে। গৃহহীনদের কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যও উৎসাহিত করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট হচ্ছে-জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এসডিজি)’র আবাসনের সাথে এর একটি বিশেষ যোগাযোগ আছে।

বিভিন্ন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে পথে কেবলমাত্র এই গৃহ নির্মাণ প্রকল্পটিই হতে পারে প্রধান পদচিহ্ন। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নারী ক্ষমতায়নের মতো ক্ষেত্রগুলোতে এই আবাসন প্রকল্প ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রেখেছে।

/পারভেজ/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়