ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস পান নুরজাহানরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩০, ২২ মার্চ ২০২৩  
এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস পান নুরজাহানরা

একটা সময় ছিলেন উদ্বাস্তু। কখনও এখানে, কখনও সেখানে। মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন। ভবিষ্যৎ বলে কিছুই ছিল না। ছিল না আশা-ভরসা। ছেলেরা থাকলেও খোঁজ নেয় না। জীবনের মানে খুঁজতে খুঁজতে যখন ক্লান্ত নুরজাহান, তখন পেয়েছেন ‘ঠিকানা’। দুই শতক জমিসহ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর। এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি।

বুধবার (২২ মার্চ) উপহারের এসব বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্ত ছিলেন গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সঙ্গে। সেখানে ঘর পাওয়ার অনুভূতি ব‌্যক্ত করতে গিয়ে ২৯ বছর আগে স্বামী হারানো উপকারভোগী নুরজাহান আরা বেগম বলেন, ‘আমার শেখ হাসিনা মা আমার পাশে দাঁড়াইছে। আগে ভাবতাম আমি মারা গেলে আমারে কই নিয়ে লাশ দাফন করবো। আমি গরিব বইলা কেউ পরিচয় দিতে পারি নাই। আজ আমার পরিচয় হইছে। দাঁড়াবার শক্তি দিছে আল্লাহ। আমারে মারে (শেখ হাসিনা) আমি ধন‌্যবাদ দেই।’  

ঘর পাওয়ার আগের পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অসহায় লোক আছিলাম। রাস্তাঘাটে থাকছি, মানুষের কাজ-কাম করছি। আমার ঠিকানা ছিল গাজীপুর।’

এক বাড়িতে থাকার সময় চাবি হারানোর কারণে বাসা থেকে বের হতে হয় জানিয়ে নুরজাহান বলেন, ‘সেখান থেকে দুই মাস আমি এখানে-সেখানে থাকছি। কোনও ঠিকানা নাই, পরে মেসবাড়িতে একমাস রইলাম। আমার ছেলেরা খোঁজ নেয়নি। ঈদেও খোঁজ করে নাই। কোরবানির ঈদেও আমারে খোঁজ করে নাই। রোগী দেহি, মানুষরে (লাশ) গোছল করাই।’

‘এখন আমি ঘর পাইছি। পাকা জমি পাইছি। আমারে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিছিল। আমি সব পাইছি। নামাজ পড়ি, কোরআন পড়ি। সবার জন‌্য দোয়া করি। শুনছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের পাশে দাঁড়াতো। এখন মা আপনি দাঁড়াইছেন। দোয়া করি অনেক।’

উপকারভোগী আরেকজন তার অনুভূতি ব‌্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘মা আমি প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। এই ভাতা নিয়ে আমি পরের বাড়িতে থাকি। কেউ জায়গা দিত, কেউ দিত না। আজকে শুধু ঘরই পাই নাই মা, রাস্তা পাইছি, মাদ্রাসা-মসজিদ পাইছি। আমি আর কোনও চিন্তা করি না। আগে ভিক্ষা করতাম। এখন করবা না। আমি ছোট্ট একটা দোকান দিছি মা। আল্লাহ যেন আপনারে ভালো রাখে মা সেই দোয়া করি। বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।’

এর আগে, দেশের সাতটি জেলা ও ১৫৯টি উপজেলাকে সম্পূর্ণরূপে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে, পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আজকের গৃহ হস্তান্তরের পর দেশে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত জেলার সংখ্যা ৯টি এবং উপজেলার সংখ্যা হবে ২১১টি।

বুধবার দেশের সব উপজেলায় চতুর্থ ধাপে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর হস্তান্তর করা হয়। এর আগে, প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবারের পর হস্তান্তরিত মোট গৃহের সংখ্যা হবে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে দেশে প্রথম ভূমিহীনদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে একই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে পুনরায় জমি ও ঘরের মালিকানা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেন।

এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট সাত লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরিবারপ্রতি ৫ জন হিসেবে এ কার্যক্রমের উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প সরাসরি পুনর্বাসন করেছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবারকে। ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সমান কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে আরও দুই লাখ ১৬ হাজার ৭০৪টি পরিবার।

২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে দেশের কোনও মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না বলে ঘোষণা করেন। তার এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিরলসভাবে কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী শুধু মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২৩ সালের এ পর্যন্ত সারাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি ঘর দেওয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় সারাদেশে পুনর্বাসন কার্যক্রমের মোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ মানুষ।

পারভেজ/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ