পর্যটন খাতের এক বছর: ৭.৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
দেশের পর্যটন খাতে টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন নিশ্চিত করা, গতিশীলতা আনা ও সেবা আধুনিকরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, “ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকেই গত অর্থ বছরে ৭.৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে, যা লক্ষমাত্রার বিপরীতে ১১০%। তাছাড়া বিমান টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যে জড়িত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ১৩টি এজেন্সির লাইসেন্স। ঘোষণা করা হয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।”
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের সাফল্য তুলে ধরে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, “জাতীয় পর্যটন দিবসকে ‘গ’ থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এ খাতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।”
দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পর্যটন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পর্যটন নীতিমালা, ২০১০ সংশোধন ও হালনাগাদ করে ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নীতিমালার খসড়া প্রস্তুতের সময় অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য পরামর্শ সভা আয়োজন করা হয়েছে। পরবর্তীতে এটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অধিকতর মতামত ও পর্যবেক্ষণ আহ্বান করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “ট্রাভেল এজেন্সি নিয়ন্ত্রণ ও নিবন্ধন আইন, ২০১৩ এবং ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২ সংশোধন ও আধুনিকায়নের জন্য আইন ও বিধিমালায় অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির বিষয়টি স্পষ্টভাবে সন্নিবেশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ট্রাভেল এজেন্সির কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে যা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।”
রাজস্ব আদায়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে জানিয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “গত অর্থবছরে ট্রাভেল এজেন্সি থেকে ৭.৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা লক্ষমাত্রার বিপরীতে ১১০%।”
তিনি বলেন, “প্রতারণা ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি বা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি ১৩টি ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।”
বশিরউদ্দীন জানান, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পর্যটন কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করা এবং জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে অতিপর্যটনের বিরুপ প্রভাব হ্রাস করার লক্ষ্যে কমিউনিটি অংশগ্রহণমূলক পর্যটন সংক্রান্ত একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে, পাশাপাশি নিরাপদ হাওর পর্যটন ও দায়িত্বশীল সমুদ্র পর্যটনের জন্য প্রাথমিক গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক ভ্রমণের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাহাজের টিকিট বিক্রির প্ল্যাটফর্মের সাথে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সফটওয়ার সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পর্যটনসেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন সেবাদানকারীর সক্রিয় সম্পৃক্ততা বিবেচনায় রেখে পর্যটনসহ সব পর্যটন অংশীজনের জন্য একটি রঙিন ছবি সংবলিত আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এই আচরণবিধি পর্যটন সেবার মান, নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবার জন্য একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।”
তিনি জানান, দেশব্যাপী পর্যটন সেবার সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ছয়টি জেলায় আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া বাগেরহাটে নতুন ‘পর্যটন মোটেল অ্যান্ড ইয়ুথ ইন’ উদ্বোধন করা হয়েছে, যা ষাট গম্বুজ মসজিদ ও অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনে আগত পর্যটকদের আবাসনের সুযোগ দিচ্ছে।
বশিরউদ্দীন জানান, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বাণিজ্যিক ইউনিটগুলোকে আরো স্বচ্ছ ও লাভজনক করতে “বিপণন কৌশল ২০২৫” প্রণয়ন করা হয়েছে এবং শতভাগ অটোমেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খাদ্য বিক্রিতে রশিদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তরুণ প্রজন্মকে পর্যটনে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোক্তা তৈরির সেমিনার, বেসক্যাম্প ট্রেনিং এবং পর্যটন ভলান্টিয়ার তৈরির কার্যক্রম চালু করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “ইতোমধ্যে কক্সবাজারে ১০০ জন পর্যটন ভলান্টিয়ার গড়ে তোলা হয়েছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে ট্যুর অপারেটর ও গাইডদের দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে এবং শিল্প-অ্যাকাডেমিয়া সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
পর্যটনকে জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও খাদ্য উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকায় ‘টেস্ট অব বাংলাদেশ’ খাদ্য উৎসব ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা হয়েছে।
পর্যটন খাতের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়নে Tourism Satellite Account (TSA) প্রণয়নের কাজ চলছে জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “এটি চালু হলে পর্যটন সংক্রান্ত রিয়েল-টাইম তথ্য পাওয়া যাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রীড়া বোর্ডের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে দেশে ক্রীড়া পর্যটনের সূচনা হয়েছে।”
বর্তমান সরকার পর্যটন খাতকে জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে। দায়িত্বশীল ও টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক পর্যটন মানচিত্রে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি