ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এটিএম শামসুজ্জামানের জীবনের কয়েকটি অজানা ঘটনা

ফটোফিচার ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:৫৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
এটিএম শামসুজ্জামানের জীবনের কয়েকটি অজানা ঘটনা

‘সিনেমায় আমাকে দেখে তারা খারাপ ভেবেছে, এতেই আমার আনন্দ’- এটিএম শামসুজ্জামান এক সাক্ষাৎকারে কথাটি বলেছিলেন। পর্দায় তাঁর অভিনয় দেখে দর্শক কখনও হেসেছেন, কখনও কেঁদেছেন; তবে বেশিরভাব ক্ষেত্রেই যেটি হয়েছে তা হলো: দর্শক তাঁকে দেখে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন! আর এখানেই একজন খল চরিত্রে অভিনেতার সার্থকতা। 


অভিনয় জীবনে প্রাপ্তির খাতায় এটিএম শামসুজ্জামানের কোনো অপূর্ণতা ছিল না। দর্শক প্রশংসার পাশাপাশি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। আজীবন সম্মাননা ও একুশে পদকসহ বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এমন একজন চরিত্রাভিনেতার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ভক্তকুল। আমাদের সংস্কৃতির আকাশে হিরণ্ময় দ্যুতিতে দীপ্যমান নক্ষত্রপ্রতিম এই অভিনেতার প্রয়াণ- এক অপূরণীয় ক্ষতি।

দর্শক এটিএম শামসুজ্জামানকে ‘অভিনেতা’ হিসেবেই মনে রাখবেন। কিন্তু কীভাবে তাঁর অভিনয় জীবনের শুরু? কতটা ত্যাগ তিনি এ জন্য করেছিলেন? আমজাদ হোসেনের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগই বা তিনি কীভাবে পেলেন- চলুন জেনে নেই।

স্কুলে পড়ার সময় এটিএম শামসুজ্জামান ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সান্নিধ্য পান। নানা-নাতির সম্পর্ক ছিল দু’জনের। বালক এটিএম একবার নানাকে জব্দ করার জন্য প্রশ্ন করেছিলেন, ‘নানা, আপনি এতগুলো সন্তান নিয়েছেন কেন?’ প্রশ্ন শুনে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, ‘আমি একজন রবীন্দ্রনাথের অপেক্ষায় আছি।’  

স্কুলজীবনে এটিএম শামসুজ্জামানের বন্ধু ছিলেন শিল্পী রফিকুন নবী। রফিকুন নবী প্রায়ই বলতেন, ‘কাল স্কুলে আসার সময় মাথায় তেল দিয়ে আসিস।’ বন্ধুর কথামতো এটিএম মাথায় তেল দিয়ে স্কুলে আসতেন। খাতার সাদা পাতা রফিকুন নবী এটিএমের তেল-মাথায় ঘষে নিতেন। তারপর ওই পাতায় তিনি ইচ্ছেমতো ছবি আঁকতেন।

পাড়ায় নাটকের মহড়া হচ্ছে। অনেক মানুষের ভিড়। কিন্তু বালক এটিএম শামসুজ্জামানকে কেউ ঢুকতে দেন না। একদিন বুদ্ধি করে তিনি নাটকের শিল্পীদের চা খাওয়ানোর কথা বলে চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকে পড়লেন মহড়াকক্ষে। একদিন এক কাণ্ড হলো- প্রম্পটার আসেননি। এই সুযোগটি নিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। প্রম্পটারের কাজ শুরু করলেন। হয়ে গেলেন নাটকের একজন। 

চলচ্চিত্রে কাজের আশায় এটিএম শামসুজ্জামান পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর কাছে এসেছেন। তিনি ৫০০ পৃষ্ঠার একটি পাণ্ডুলিপি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, তাড়াতাড়ি তিনটি কপি করে নিয়ে এসো। এটিএম রাত জেগে খুব খেটে ১২ দিনের মধ্যেই তিনটি কপি করে জমা দিলেন। উদয়ন চৌধুরী দেখে প্রশংসা করে বললেন, দারুণ হয়েছে! তারপর তিনটি পাণ্ডুলিপিই তিনি ময়লার বাক্সে ছুড়ে ফেলে দিলেন। এটিএম অবাক! উদয়ন চৌধুরী বললেন, আমি তোমার ধৈর্যশক্তির পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলাম। তুমি পরীক্ষায় পাস করেছ। তুমি এখন থেকে আমার তিন নম্বর সহকারী।

সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন শুনেই এটিএম শামসুজ্জামানের বাবা প্রচণ্ড রেগে গেলেন। ফল হলো ভয়াবহ! তিনি ছেলেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। তাতে অবশ্য ছেলের মন খারাপ হলো না। তিনি কাপড়চোপড় নিয়ে সোজা চলে গেলেন উদয়ন চৌধুরীর কাছে।

 


আমজাদ হোসেন এটিএম শামসুজ্জামানকে খুঁজছেন। দেখা করতে যেতেই আমজাদ হোসেন বললেন, ‘নয়নমণি’ বানাবো। আপনি মোড়লের চরিত্রে অভিনয় করবেন। এটিএম হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারলেন না। বললেন, ভাই, আমার চেহারা না-হয় ভালো না, তাই বলে ভরা মজলিসে মশকরা করেন কেন? আমজাদ হোসেন হেসে বললেন, মজা নয়। আমি আপনাকে নেওয়ার জন্যই বলছি। এরপর ‘নয়নমণি’ মুক্তি পেল। এটিএম শামসুজ্জামান এই এক সিনেমা দিয়েই দর্শকের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন।

চার শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন এটিএম শামসুজ্জামান। ভালো-মন্দ দুই ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন তিনি। মন্দ চরিত্রে অভিনয় এমনভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতো যে মাঝেমধ্যে তাঁকে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। একদিন জুম্মার দিনে গোসল করে পাজামা পাঞ্জাবি পরে যখন মসজিদে যাচ্ছিলেন তখন একজন লোক এটিএম শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞেস করলেন- কোথায় যাচ্ছেন? এটিএম বললেন, মসজিদে যাচ্ছি। লোকটি বলল, জুম্মার নামাজ পরে আপনার লাভ কী? জীবনে এতো আকাম করেছেন বুঝতে পারছেন না? আপনি একটা বাজে লোক!

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়