জাপায় ফিরছেন ডা. রুস্তম আলী ফরাজী
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছেন পিরোজপুর-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। জাতীয় পার্টি, বিএনপি, তারপর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হয়ে আবারো ফিরে আসছেন এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টিতে।
শনিবার সকালে বনানী কার্যালয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের হাতে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেবেন।
এমপি ফরাজীর যোগদান উপলক্ষে পার্টির চেয়ারম্যান কার্যালয়ে যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমপি, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপিসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থেকে স্বতন্ত্র এ সংসদ সদস্যকে বরণ করে নেবেন।
যোগদানের সত্যতা স্বীকার করে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার এমপি বলেন, জাতীয় পার্টি এদেশের গণমানুষের জনপ্রিয় দল। আমাদের পার্টির চেয়ারম্যানের জনপ্রিয়তা ও ভালবাসার প্রমাণ রংপুর সিটি নির্বাচনে মোস্তফার বিপুল ভোটের বিজয়ের মধ্যদিয়ে হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের চেয়ারম্যানের প্রতি আস্থা রেখে দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাই জাতীয় পার্টির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর ফিরে আসা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র।
তিনি বলেন, রংপুর বিজয়ের মধ্যদিয়ে আমরা নতুন যাত্রা শুরু করেছি। আগামী সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হয়ে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করে সেই যাত্রা শেষ করব।
‘জাতীয় পার্টি থেকে যারা চলে গেছেন, তাদের কেউ সুখে নেই, ভাল নেই। আশা করছি ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর মতো বাকিরাও নিজ ঘরেই ফিরে আসবেন’- বলেন হাওলাদার।
ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামে। তিনি ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের মঠবাড়িয়া উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন। পরে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ’৬৯ সালে এগারো দফা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ’৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মঠবাড়িয়ার আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৮ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।
বর্তমান সংসদের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি জাতীয় পার্টি ছেড়ে যোগ দেন বিএনপিতে। ২০০১ সালে তিনি বিএনপি থেকে নির্বাচন করে পিরোজপুর-৩ এ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও বিরোধের জের ধরে ফরাজী এক পর্যায়ে বিএনপিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তিনি সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবেও বিতর্কিত হন দলে, ফলে ওই সময় তাকে বিএনপি মনোনয়ন দেয়নি।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি লিডার মহিউদ্দীন আহমেদকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালেও তিনি পিরোজপুর-১ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদা সওগাতকে পরাজিত করেন।
২০০৯ সালের বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। বিএনপির মূল প্রার্থী তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। সে সময় থেকে আর তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হননি। বরং ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. আনোয়ার হোসেনকে পরাজিত করেন। দীর্ঘদিন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে থাকলেও অবশেষে তিনি এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টিতে ফিরছেন শনিবার।
জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে ডা. রুস্তম আলী ফরাজী প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। সেবার নির্বাচিত হলেও তার ফলাফল উল্টে দিয়ে এরশাদের প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় বলে অভিযোগ আছে। ১৯৯০ সালে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ডিসেম্বর ২০১৭/নঈমুদ্দীন/মুশফিক
রাইজিংবিডি.কম