‘দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্রে নির্বাচন বানচাল হবে না’
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
আওয়ামী লীগ সরকার দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে জানিয়ে দলটির নেতারা বলেছেন, ‘নির্বাচন বানচালে দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্রে কাজ হবে না। কোনো নীতিতে প্রভাবিত হওয়ারও সুযোগ নেই। আজকে যারা মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে অতি উৎসাহী হয়েছেন, তারা জানেন না খুব শিগগিরি তারা মুখ থুবড়ে পড়বেন। তারা নতুন করে আবারও হতাশায় নিমজ্জিত হবেন।’
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেইটে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, আজকে একটাই কথা দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে আমরা শান্তি এবং উন্নয়ন-অগ্রগতি ও প্রগতির পথে নিয়ে যেতে চাই। এজন্য বারবার দরকার শেখ হাসিনার সরকার। আগামী দিনে শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় এনে এই স্লোগানকে আমরা বাস্তবায়ন করবো।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের সমর্থন দেয়নি, যারা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, পাক বাহিনীকে অস্ত্র দিয়েছিল তাদের মোকাবিলা করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা পরাজিত হইনি। আজকেও বলতে চাই, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিমা বিশ্বের কিছু দেশ, কিছু নেতা যারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, নানা রকম কৌশল করছেন, তাদের কাছে আমরা বলতে চাই- একাত্তরে আমরা পরাজিত হইনি, ওই নৌবহরের হুমকিতে আমরা পালিয়ে যাইনি। আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করে, অতীতেও আমরা ব্যর্থ হইনি, আগামীতেও হবো না।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে। এই নির্বাচন বানচাল করার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।
বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে তিনি বলেন, আপনারা কিসের ভয় দেখান। গত ১৫ বছর দেখেছি আপনাদের। আন্দোলন করবেন, শেখ হাসিনাকে হটাবেন। এক ইঞ্চিও নড়াতে পাড়েননি। আর আছে মাত্র তিন মাস। এই সময়ে আমরা রাজপথে পাহাড়া দেবো। যদি কোনো সন্ত্রাস করেন, অগ্নিসংযোগ করেন, নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করেন তাহলে আপনাদের রাজপথে মোকাবিলা করবো।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর অপর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ষড়যন্ত্র চলছে। একাত্তর ও পঁচাত্তরের ঘাতক ও তাদের বিদেশি মদতদাতারা একাত্ত হয়ে ষড়যন্ত্র করছে। স্যাংশনের কথা বলে, ভিসা নীতির কথা বলে... তারা আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে ক্ষমতার পরিবর্তন করতে চায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চায়।
তিনি বলেন, ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। এটা আফগানিস্তান নয়, পাকিস্তান নয়। আফগানিস্তান, পাকিস্তানে পুতুল সরকার বানাতে পারেন। কিন্তু এটা বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। কোনও ষড়যন্ত্র বাংলার মানুষ বরদাস্ত করবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এই পিচ্ছিল পথে আবার নির্বাচন এসেছে। আবার জামায়াত-বিএনপি সোচ্চার হয়েছে। তারা জানে না, আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। বিএনপি-জামায়াত আপনারা যতই উৎফুল্ল হন, আপনারাও এই ফাঁদে পড়বেন। তাই বলি নির্বাচনে আসুন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। এ কারণে আমাদের সদা সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ কখনো ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় থাকেনি, ক্ষমতায় যায়নি। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। নির্বাচনই জনসমর্থনের ভিত্তি। জনমানুষের সমর্থন নিয়েই গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। যতই ষড়যন্ত্র করেন, আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্মুখী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হবো।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই। আজ যে দলটি চোখ রাঙিয়ে আমাদের ভয় দেখাতে চায়, তারা কেন বোঝে না; যে দলকে হুমকি দেয়, সেই দলের নাম আওয়ামী লীগ, সেই দলের নেতা শেখ হাসিনা আর এই দলের জনক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, আজকে যারা মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে অতি উৎসাহী হয়েছেন, তারা জানে না খুব শীঘ্রই মুখ থুবড়ে পড়বে। তারা নতুন করে আবার হতাশায় নিমজ্জিত হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় নতুন করে যড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। শুক্রবার দেখলাম বিএনপি নেতৃত্ব ঔদ্বত্য দেখাচ্ছে আমেরিকা ভিসা নীতির পরে। তোমাদেরকে এদেশের লোকজন চেনে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে দেশকে ব্যর্থ জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল।
তিনি আরও বলেন, আজ বিএনপি যে বড় বড় কথা বলে, বিএনপিকে তৃতীয় গ্রেডের সন্ত্রাসী দল ঘোষণা করেছিল আমেরিকার ফেডারেল কোর্ট। আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার জন্যে আমেরিকা ভিসা নীতি করেছে। নির্বাচনকে বিএনপি-জামায়াত যদি বাধাগ্রস্ত করতে চায় রাজপথে তাদেরকে মোকাবিলা করা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, লাশের রাজনীতি কায়েম করে সাম্রাজ্যবাদীদের তল্পবাহক হিসেবে বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায়, ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায়, আমাদের জীবন থাকতে প্রিয় বাংলাদেশে এটা করতে দেবো না। নির্বাচনে যারা ষড়যন্ত্র করবে, তাদের প্রতিহত করা হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির। এতে আরও বক্তৃতা করেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আলম রুহুল, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি কামরুল হাসান মিলন, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
পারভেজ/ মাসুদ