পালিয়েছেন নেতাকর্মীরা, ছাত্র-জনতার দখলে জাতীয় পার্টি কার্যালয়
২ নভেম্বর ঢাকার কাকরাইল অফিসের সামনে ‘যে কোনো মূল্যে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ’ করার পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়ে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে পালিয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যার পরপরই রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পালিয়ে যান নেতাকর্মীরা।
এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জাতীয় পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। কয়েক দফা চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভালেও রাত ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কার্যালয় ছাত্র-জনতার দখলে ছিল। তারা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিল।
আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে জিএম কাদের, চুন্নু, আনিসদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছেন ছাত্র-জনতা। তারা জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। এমনকি ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি করতে দেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার পাশাপাশি জাতীয় পার্টি অফিসের সামনে বিপুল সংখ্যক সেনা ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক মীর আব্দুস সবুর আসুদ বলেন, এ ঘটনায় আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। একটা মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি।
এর আগে জাতীয় পার্টিকে ‘জাতীয় বেঈমান’ আখ্যা দিয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে বিজয়নগরের উদ্দেশে মিছিলের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দুটি স্ট্যাটাস দেন হাসনাত। এতে তিনি জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ আনেন।
তিনি লেখেন, ‘জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেঈমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’
পড়ুন: জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন-ভাঙচুর
জানা গেছে, পতিত সরকারের ‘দোসর’ হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও জাতীয় পার্টির মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। তার জের ধরে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসানাতকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটির সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিও চলে।
মামলা প্রত্যাহারসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের চ্যালেঞ্জ করে ২ নভেম্বর রাজধানীর কাকরাইলে সমাবেশ ডাকে জাতীয় পার্টি। সমাবেশের প্রস্তুতিও নিচ্ছিল দলটির নেতাকর্মীরা। দুদিন আগে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ে এসে যে কোনো ধরনের সমাবেশ কর্মসূচি থেকে বিরত থাকতে প্রকাশ্য সতর্ক করা হয়। এটাকে হুমকি মনে করে পরদিন জাতীয় পার্টির মহাসচিব চুন্নু ও চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলীয় কার্যালয়ে এসে পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়। রাতে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
২ নভেম্বর সমাবেশ প্রস্তুতির খবর পেয়ে সন্ধ্যার দিকে জাপা কার্যালয়ের সামনে আসেন ছাত্রদের কয়েকজন। এ সময় জাপার নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। পরে খবর পেয়ে ছাত্র-জনতা লাঠিসোটা নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে আসতে থাকলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। বিক্ষুব্ধরা কার্যালয়ে এসে হামলা করে। ভাঙচুরের এক পর্যায়ে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর থেকে ছাত্রজনতা কার্যালয়টি দখলে নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী জাতীয় পার্টির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির একদল যুবক বিনা উস্কানিতে হামলা চালিয়েছে। তারা আগুন দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে লুটপাট করেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের নেতাকর্মীরা নিরাপদ জায়গায় চলে গেছেন। না হলে তারা যেভাবে লাঠিসোটা নিয়ে এসেছে, তাতে আমাদের নেতাকর্মীরা হতাহত হতো।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো কাকরাইল ও পল্টন এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এক সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় পল্টন-বিজয়নগর সড়ক।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে এ বিষয়ে ব্রিফ করবেন পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
নঈমুদ্দীন/এনএইচ