বিক্ষোভ সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব
‘দেশে নতুন করে জঙ্গি নাটকের অবতারণা হচ্ছে’
বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
গোপালগঞ্জ থেকে ফ্যাসিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে গোপালগঞ্জে জুলাই যোদ্ধাদের উপর হামলা, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি এবং ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্থাপনের অনুমতি বাতিলের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন, ‘‘গোপালগঞ্জে জুলাই যোদ্ধাদের উপর হামলার জন্য প্রশাসন দায়ী। দেশের আমূল সংস্কার না হলে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। প্রশাসন, আইন ও নির্বাচন কমিশন অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। তা না হলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হবে না। অধিকাংশ দল পিআর চাইলেও একটি দল পিআর চাচ্ছে না। দেশব্যাপী আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের দৌরাত্মের কারণে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য প্রশাসনিক ব্যর্থতায়ই দায়ী।
তিনি আরো বলেন, ‘‘জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবার এখনও যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায়নি, আহতরা সুচিকিৎসার অভাবে এখনও হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায়, পরিবহন ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের অত্যচারে অতিষ্ঠ। রিকশা-ভ্যান অটো চাঁদা ছাড়া রাস্তায় চলতে পারে না। এমন দেশের জন্য ছাত্র-জনতা জীবনবাজী রেখে লড়াই করেনি।’’
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, ‘‘কিছুদিন আগেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, আমাদের দেশে কোন জঙ্গি নেই। যখন জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি হয়েছে, তখনই দেশে নতুন করে জঙ্গি নাটকের অবতারণা হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, যারা জঙ্গি নাটকের কলাকৌশলী ও অভিনেতা, তাদের সবাইকে জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে এবং কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’’
মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, ‘‘ইসলামী আন্দোলনের আমীর চাঁদাবাজ, দখলদারদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাই একটি গোষ্ঠী নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে ইসলামী আন্দোলন এবং এর আমীরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত অশালীন এবং কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেছে। তার মানে তারাই চাঁদাবাজদের হোতা।’’
মানবাধিকার অফিস স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ফিলিস্তিন, আফগানসহ দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতনে কী ভূমিকা পালন করেছেন? এখন এদেশে মানবাধিকার দেখাতে চান? এদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না। বাংলাদেশে হাজার বছরের ঐতিহ্য হলো হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-মুসলিম সম্প্রীতির সাথে বসবাস।’’
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, ‘‘জুলাই-আগস্ট যোদ্ধাদের উপর হামলা করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী নতুনভাবে রক্তের নেশায় মেতে উঠেছে। বছর পার না হতেই জুলাই যোদ্ধার উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যেভাবে হামলে পরেছে, তাতে প্রমাণ হয়, চিরতরে ফ্যাসিবাদী শক্তির মুলোৎপাটন করা ছাড়া জাতির সামনে কোন বিকল্প নেই। প্রশাসন, সচিবালয়সহ যেখানেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ থাকবে, তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’’
দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, মাওলানা মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, আলহাজ্ব আব্দুল আউয়াল মজুমদার, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, মুফতী মোঃ মাছউদুর রহমান, যুবনেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসাইন, ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে মিছিল বায়তুল মোকাররম, পল্টন, বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক হয়ে পুনরায় হাউজ বিল্ডিংয়ে এসে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন//