ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শোকজের জবাব দিলেন ফজলুর রহমান, ‘ভুল হলে দুঃখ প্রকাশ’ করবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ২৬ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৮:৫০, ২৬ আগস্ট ২০২৫
শোকজের জবাব দিলেন ফজলুর রহমান, ‘ভুল হলে দুঃখ প্রকাশ’ করবেন

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান। ফাইল ছবি।

জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে  বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য দলীয় শোকজের মুখে পড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ‘কোনো ভুল হলে ক্ষমা চাইবেন’ বলে জবাব দিয়েছেন। 

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বরাবর শোকজের লিখিত জবাব দিয়েছেন তিনি।

আরো পড়ুন:

শোকজে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে কুরুচিপূর্ণ-বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর চিঠির জবাবে ফজলুর রহমান লিখেছেন, “এই অভিযোগ আমি সম্পূর্ণ অস্বীকার করছি।”

তিনি বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদকে তিনি একুশ শতকের প্রথম ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি তার বক্তব্যে জুলাই-আগস্ট শহীদদের সর্বোচ্চ সম্মান জানিয়ে আসছেন বলে দাবি করেছেন।

ফজলুর রহমানের শোকজের জবাব লেখা চিঠির পুরোটা হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

রুহুল কবির রিজভী বরাবর ফজলুর রহমান লিখেছেন-

(ক) আপনি জানতে চেয়েছেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে কেন আমি ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ এবং বিব্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছি। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এই অভিযোগটি অস্বীকার করে আমি বলতে চাই আমি কোনদিন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেই নাই যা আমার স্বভাব ও চরিত্রের বিপরীতে। আমিই প্রথম ২০২৪ ইং সনের ১৬ই জুলাই রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদকে পুলিশ সরাসরি বুকে গুলি করে হত্যা করার পর বলেছিলাম সে এই একুশ শতাব্দীর প্রথম ‘বীরশ্রেষ্ট’। আমার বক্তব্যে জুলাই-আগস্ট শহীদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছি।

(খ) আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে আমি নাকি জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কথা বলেছি, যা আমার দৃঢ় ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি অবিচার। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আমি ইসলাম ধর্ম এবং আল্লাহ রাসুলে বিশ্বাসী ব্যক্তি। তবে রাজনৈতিকভাবে ধর্ম ব্যবসায়ীদের (যেমন জামাতে ইসলামী) বিরুদ্ধে চিরদিন কথা বলেছি, আগামীতেও বলব।

দলের নেতৃবৃন্দের সু-বিবেচনার স্বার্থে আমি নিম্ন লিখিত বক্তব্যগুলো পেশ করতে চাই।

১) কোটাবিরোধী আন্দোলন যখন ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রথম শুরু হয়েছিল, তা ছিল নির্দলীয় চরিত্রের এবং রাজনৈতিক দাবি বিবোর্জিত। আমিই প্রথম তাদেরকে ইউ-টিউব এর মাধ্যমে উৎসাহ দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলাম, “বাবারা তোমরা শুধু চাকুরী চাও, গণতন্ত্র চাও না? তোমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন কর।”

২) জুলাই আন্দোলনের পরতে পরতে সমস্ত কিছুর সঙ্গে জীবনের শংকা নিয়েও যুক্ত ছিলাম যা আমার দল এবং এ দেশের সমস্ত মানুষ জানে।

৩) ২০২৩ই সনের ২৮ শে অক্টোবরে বি,এন,পি আহুত লক্ষ লক্ষ জনতার মহা-সমাবেশকে স্বৈরাচারী সরকার ১ ঘণ্টার আক্রমনে ভেঙ্গে দিয়েছিল। পঁচিশ হাজারেরও বেশি নেতা কর্মী যখন জেলে ছিল, লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী যখন মিথ্যা মামলার আবর্তে পড়ে জীবন বাচাঁনোর জন্য প্রানপন চেষ্টা করছিল, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দাড়িয়ে আমি তখন প্রতিদিন অন লাইন এবং টেলিভিশন টকশোর মাধ্যমে নেতা কর্মীদের উজ্জীবিত করেছি এবং জাতির সামনে আশার আলো জাগিয়ে রেখেছি।

8) ৫ই আগস্ট আন্দোলনের বিজয়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিস্ট শক্তি পালিয়ে গেল এবং জনগণ বিজয়ী হলো। আমি সেই সময়ে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এর কিছু দিন পরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারজিস আলম ‘ইসলামী ছাত্র শিবিরের’ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনে দাড়িয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলো ‘জামাত শিবিরই ছিল জুলাই আন্দোলনের মূল ভ্যানগার্ড’। আমি সেদিনই প্রমাদ গুনলাম এবং আন্দোলনের সমস্ত বিজয়কে তারা নিজেদের মধ্যে কুক্ষিগত করলো।

৫) আমি জামায়াত-শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এই অনৈতিক দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে শতবার বলেছি। বিগত ১৫ বছরের আন্দোলনে জমিটি তৈরি করেছিল বিএনপি, বীজ এবং চারা রোপন করেছিল বিএনপি, তৈল মবিল পানি দিয়ে ধান ফলিয়ে ছিল বিএনপি কিন্তু ধান কাটার লগ্নে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সেই তৈরি ধানটি কেটে দিয়েছিল। তারা ছিল আমার ভাষায় 'দাওয়াল', কাজেই আন্দোলনের সমস্ত ফসল পাওয়ার দাবিটি অনুচিত।

৬) কিন্তু পরবর্তী সময়ে অবাক বিস্ময়ে সবাই দেখলো ৭১-এর পরাজিত শক্তি জামায়াত-শিবির স্বদর্পে মাঠে হাজির হয়েছে এবং দাবি করছে সমস্ত আন্দোলনের ভ্যানগার্ড তারাই এবং শুধু একটা নির্বাচনের জন্যই তারা আন্দোলন করেনি, বরং ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারের মতো দুঃসাহস তারা প্রদর্শন করতে লাগলো। জামায়াত-শিবিরের পত্রিকায় আহব্বান জানানো হলো ‘৭১-এ যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিল তারা আল্লাহর কাছে মাফ চাও” (সূত্র: বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা)। সেদিন থেকে বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে তাদের সাবধান করার চেষ্টা করেছি।

৭) এরপর থেকে জামায়াত-শিবির এবং এনসিপি একসাথে বলতে শুরু করলো ১৯৪৭ হলো প্রথম স্বাধীনতা এবং ২০২৪ হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা, আর ১৯৭১ হলো ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া (সূত্র: বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা)। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মনে হলো, এসব অশ্রাব্য এবং মিথ্যা তথ্য শুনার আগে আমার মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল। তাই জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের সত্য কথাগুলো বলতে শুরু করলাম এবং জামায়াত-শিবিরকে 'কালো শক্তি' চিহ্নিত করে এনসিপিকে তাদের সহযোগী বলতে শুরু করলাম। তারাই এখন দেশের সমস্ত প্রশাসন, অর্থ এবং বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেছে।

৮) আমি সবশেষে বলতে চাই মানুষ এখন বুঝতে শুরু করেছে, জুলাই আন্দোলনের দুটি রূপ ছিল। প্রথমতো ‘বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বে গণআন্দোলন’, যার লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করা। যার প্রধান স্লোগান ছিল, ‘এক দফা, এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি’। কিন্তু আমি যাদেরকে অন্ধকারের ‘কালো শক্তি’ বলেছি, তারা হলো জামায়াত-শিবির, যারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণআন্দোলনের ফসলকে কুক্ষিগত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র এবং শক্তি সৃষ্টি করছে। জাতীয় নির্বাচন তাদের নিকট গৌণ ব্যাপার।

৯) আমার প্রিয় দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের মহান ঘোষক ‘মেজর জিয়া’ পরবর্তী সময়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দেশের সবচাইতে বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তার মহান স্মৃতিকে শ্রদ্ধা এবং স্মরণ করেই আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে নিরন্তর কথা বলা এবং প্রতিবাদ করাকে আমার পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করি। গত ৬ মাস ধরে এ ব্যাপারে আমি শত শত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছি, এর মধ্যে দু-একটা বক্তব্যে আমার কিছু ভুল ত্রুটিও থাকতে পারে। কারণ আমি তো মানুষ। আমি আরও দাবি করতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার অন্যায়ভাবে কারাগারে নিক্ষেপ করার পরে আমি স্বৈরাচারী সরকারের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে আমি নেত্রীর মুক্তির জন্য সমগ্র বাংলাদেশে শত শত সভা ও জনসভায় বক্তব্য রেখেছি। এমনকি ইদানিংকালে একটি দুর্ভাগ্যজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রিয় নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এমন জঘন্যতম কুৎসিত স্লোগান দিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে অপমান করা হচ্ছিল, যার উদাহরণ ‘গাছের ডালে কাউয়া’। তখন আমিই প্রথম ইউটিউব চ্যানেল পূর্নিয়াতে কঠিনভাবে এর বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলাম।

১০) আমার সার্বিক বক্তব্য উপস্থাপনায়, যদি প্রমাণিত হয়, আমি কোনো ভুল বক্তব্য দিয়েছি; তবে আমি দুঃখ প্রকাশ করবো।

১১) আমার প্রিয় দল বিএনপির কোনো ক্ষতি হয়, এমন কোনো কথা ও কাজ আমি করিনি এবং করবোও না। জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বের বিচার-বিবেচনার প্রতি আমার সর্বোচ্চ আস্থা আছে। আশা করি আমি সুবিচার পাবো এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে যে কোনো সিদ্ধান্তের প্রতি সর্বদাই অনুগত থাকবো।

ঢাকা/রায়হান/রাসেল 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়