নার্সারি করে সফল ইউসুফ
শামীম হোসেন সামন || রাইজিংবিডি.কম
মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে নার্সারি করার স্বপ্ন দেখেন মো. ইউসুফ। ২০০০ সালে মাত্র ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন নার্সারি। ২০ শতাংশ জমিতে শখের বসে নার্সারি করেন। ছোটবেলা থেকে গাছের প্রতি ভালোবাসা। কোথাও গাছ পেলে সেই গাছ রোপণ করতেন বাড়ির আঙিনায়। শুরুতে শখের বসে নার্সারি করার স্বপ্ন। এরপর পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়িতেই ছোট পরিসরে গাছ রোপণ করেন। সেখান থেকেই গাছের চারা রোপণ করার বিভিন্ন পদ্ধতি আয়ত্ব করা শুরু করেন মো. ইউসুফ।
২০০৯ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার দীর্ঘগ্রাম এলাকায় ৪ বিঘা জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিয়ে বড় পরিসরে শুরু করেন নার্সারি। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে নার্সারিতে লাভের মুখ দেখতে পান তিনি। এরপর ধীরে ধীরে নার্সারিতে গাছের প্রজাতির সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। সময়ের সাথে সাথে মান ভালো হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে গাছ কিনতে আসেন অনেকে। কেউ কেউ গাছের বাগান ঘুরে দেখেন। কেউ গাছ কিনে নেন। শখের নার্সারি একসময় বাণ্যিজ্যিকভাবে শুরু করেন। এই নার্সারিতে আয়ের উৎস খুঁজে পান মো. ইউসুফ। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। কয়েক বছরে নির্বিঘ্নে গাছের চারা রোপণ ও বিক্রি করে লাভবান হতে থাকেন তিনি।
এখন অনেকেই তার নার্সারিতে গাছ কিনতে আসেন। আছে ঔষধি, বনজ ও ফলজ গাছসহ প্রায় ২০০ প্রজাতির গাছ। কিন্তু হঠাৎ ২০১৯ সালের বন্যায় তার দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন আর পরিশ্রমের ফল ভেসে যায়। বন্যার পানিতে চোঁখের সামনেই তলিয়ে যায় পুরো নার্সারির গাছ। এতে থাকা গাছের চারা বন্যায় ভেসে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েন তিনি। কিছু চারা সরিয়ে নিতে পারলেও বেশির ভাগ চারা গাছই মরে যায় বন্যার পানিতে। এতে সাময়িকভাবে কিছুটা ভেঙেও পড়েন। তবুও গাছের প্রতি ভালোবাসায় একটু ভাটা পড়েনি। এরপর নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন মো. ইউসুফ। থেমে না থেকে আবারও গাছের চারা রোপণ করেন। এবার গত বছরের চেয়েও লাভবান হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পথচলা শুরু করেন। অল্প দিনেই লাভের মুখ দেখতে পান।
বর্তমানে শিকারীপাড়া ইউনিয়নের হাগ্রাদী গ্রামে ৪৫ শতাংশ জমিতে নার্সারি করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে বেকার যুবকদের। ছেলে-মেয়ে নিয়ে নার্সারির উপর নির্ভর করেই জীবপনযাপন করছেন মো. ইউসুফ।
তিনি জানান, বর্তমানে ৪৫ শতাংশ জমিতে নার্সারি রয়েছে। এবছর এই জায়গায় বিভিন্ন বনজ, ফলদ, ঔষধি ও ফুলের চারা রোপণ করেছেন। এর মধ্যে এবছর তিনি তার নার্সারিতে নারিকেল ও সুপারি চারা বিক্রি করেছেন। তার এখানে ভিয়েতনাম ও বার্মার নারিকেল ও সুপারি চারা রয়েছে। এছাড়াও নার্সারিতে প্রায় দেড় শতাধিক প্রজাতির বনজ ও ফলজ গাছ রয়েছে।
আমের জাতের মধ্যে সূর্যডিম, হাড়িভাঙ্গা, ল্যাংড়া, আম্রপালি, হিম সাগর, গুটি ফজলসহ প্রায় ৩০টি জাতের চারা রয়েছে। ফুলের মধ্যে থাই গোলাপ, রজনীগন্ধা, চায়না টগর, হাসনাহেনা, বকুল, কৃষ্ণচূড়াসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির চারা রয়েছে। এছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছও।
তিনি আরও জানান, জীবিকার তাগিদে এই নার্সারিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। পরিবারের অভাব-অনটনেও কখনোই নার্সারির স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়নি। কয়েকবার বন্যার পানিতে গাছের চারা ভেসে গেলেও তার স্বপ্ন কখনোই তাকে পেছনে ফিরতে দেয়নি। স্বপ্নবাজ হওয়ায় বার বার লোকসানের মুখে পড়েও আবারও নতুন করে শুরু করেছেন নার্সারি। গাছের চারা বিক্রি করে দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে অতিকষ্টে দিনাদিপাত করেছেন। এই নার্সারিতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫ জন বেকার যুবকের। নার্সারির জন্য তারাও ভাগ্যের চাকাটা ঘুরিয়েছেন।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় যারা নার্সারি করেছেন, তাদের নার্সারি নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। তবে লকডাউনের কারণে বর্তমানে পরিদর্শনে যাওয়া হয় না। এছাড়াও নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। বৃক্ষমেলায় তাদের চারা গাছ বিক্রি করারও সুযোগ রয়েছে। পোঁকামাকড়ের আক্রমণ থেকে মুক্তির জন্য পরমার্শ দিচ্ছি।
দোহার-নবাবগঞ্জ, ঢাকা/মাহি
আরো পড়ুন