ঢাকা     রোববার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩১

টিনের চালে কৃত্রিম বৃষ্টিতে ব্যাপক সাড়া

শাহীন আনোয়ার, মাগুরা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২০, ১৯ মে ২০২৩   আপডেট: ১১:৪৪, ২০ মে ২০২৩

এসি নেই, তবুও এই গ্রীষ্মের তাপদাহে কক্ষের তাপমাত্রা ২৭-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টিনের চালে ঝুমঝুম বৃষ্টির আওয়াজ হচ্ছে। ঢেউটিন বেয়ে ঝরছে জল। আর এমন ঠান্ডা নির্মল পরিবেশে হোটেলে বসে খাবার খাচ্ছেন- ভাবতেই ভালো লাগবে যে কারও। অভিনব এমন উদ্ভাবনের দেখা মিলবে মাগুরা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের পেছনের ইসলামপুর পাড়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রবিউল ইসলামের হোটেলে।

গতকাল বৃহস্পতিবার  (১৮ মে) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রবিউল ইসলামের হোটেলে কাস্টমারের ভিড়। খাবার খেতে অপেক্ষায় অনেকে। টেবিলগুলোও চলছে খাবার পরিবেশনের ব্যস্ততা। এসময় শুরু হলো বৃষ্টি। অথচ আশপাশে আর কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে না। 

দেখা গেল, রবিউল ইসলামের হোটেলের টিনের চালে ঘুরছে কয়েকটি গার্ডেনিং ফোয়ারা। সেখান থেকে পানি বের হয়ে বৃষ্টি আকারে ভিজিয়ে দিচ্ছে তপ্ত টিনের চাল। এতে হোটেল কক্ষের গুমোট হাওয়া ঠান্ডা হচ্ছে। ফ্যানের বাতাস পরিবেশকে আরও শীতল করে দিচ্ছে। বাইরে যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস সেখানে কুলিং সিস্টেমের কারণে রবিউল ইসলামের হোটেলের ভেতরের তাপমাত্রা থাকে সবসময় ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি পর্যন্ত। কৃত্রিম বৃষ্টি সৃষ্টি করে টিনের চালকে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

আরো পড়ুন:

টিনের চালায় ওয়াটার কুলিং সিস্টেম লাগিয়ে এমন পরিবেশেই খাবার হোটেলের ব্যবসা করছেন রবিউল ইসলাম। তীব্র গরমে যেখানে জনজীবন অতিষ্ঠ সেখানে এমন প্রাকৃতিক পরিবেশের হোটেলে খাবার খেয়ে সবাই বেশ খুশি।

এদিকে, রবিউল ইসলামের এমন অভিনব উদ্ভাবন ইতোমধ্যে মাগুরা জেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে। শীতল পরিবেশে স্বস্তিতে খাবার খেতে রবিউল ইসলামের হোটেলে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা।

রবিউল ইসলাম জানান, চলতি বছর বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। ফলে মানুষজন হোটেলে খাবার খেতে আসছিলেন না। মানুষকে একটু শান্তি দিতেই এমন চিন্তা মাথায় আসে। 

দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে খাবার হোটেল ব্যবসায় জড়িত রবিউল ইসলাম জানান, তার হোটেলে এমনিতেই কাস্টমার বেশি হয়। কারণ তার হোটেলে খাসি, মুরগি, মাছ, সবজি সবই পাওয়া যায়। বিশেষ করে রেজিস্ট্রি অফিসের পেছনে হওয়ায় অফিস চলাকালীন বেশি লোক সমাগম হয়। তবে এই কুলিং সিস্টেমের কারণে কাস্টমারের সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে। একটু শীতল পরিবেশে খাবার খেয়ে কাস্টমাররা খুবই শান্তি পাচ্ছেন। 

তিনি আরও জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা এই হোটেল ব্যবসায় জড়িত। আমার দুই চোখ নষ্ট হয়েছে অনেক বছর আগে। তাই পড়ালেখা বেশিদূর করতে পারিনি। মানুষের ভালোবাসা ও দোয়ায় ব্যবসা ভালোই চলছিল। সম্প্রতি লক্ষ্য করলাম গরমের কারণে আমার হোটেলে মানুষ আসতে চাইছে না। টিনের চালার হোটেল। তাই গরম বেশি। সে কারণে কাস্টমারের সংখ্যা অনেক কম ছিল। এ সময় রুমের তাপ কমানোর বুদ্ধি বের করি। মূলত ইন্টারনেট থেকে দেখে আমি আমার ঘরের চালার উপর ওয়াটার কুলিং সিস্টেম লাগাই। এটা করতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এতে তাপমাত্রা কমায় কাস্টমারের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।

এই হোটেলটিতে নিয়মিত দুপুরের খাবার খান আতিয়ার রহমান, শামীম হোসেন। তারা রাইজিংবিডিকে জানান, রবিউল ইসলামের এই হোটেলে টিনের চালে কৃত্রিম বৃষ্টি হয়। প্রথমদিন ভেবেছি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পরে দিখি কৃত্রিম বৃষ্টি। হোটেলের ভেতরটা ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূত হয়। গরম কম লাগে তখন। স্বস্তিতে খাবার খাওয়া যায়। অনেকেই হোটেলের টিনের চালে কৃত্রিম বৃষ্টি দেখতে আসছেন। বৃষ্টি দেখতে এসে তারা দুপুরের খাবারও খাচ্ছেন।

মাগুরার সিনিয়র সংবাদকর্মী হোসেন সিরাজ বলেন, এবার তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। রবিউল ইসলামের এমন অভিনব উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে। হোটেলে খাবার খেতে আসা লোকজন একটু হলেও শীতল পরশ অনুভব করছেন। তার এই চিন্তা ও উদ্ভাবন বড় পরিসরে ব্যবহার করে পরিবেশ ও বসবাসের জায়গায় আরামদায়ক করা যেতে পারে। 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়