ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর ৬ প্রাকৃতিক উপায়

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৭ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর ৬ প্রাকৃতিক উপায়

কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকে চিকিৎসকরা বলে আসছেন যে, সংক্রমণটিতে ডায়াবেটিস রোগীদের মারাত্মক পরিণতি বা মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। ডায়াবেটিস রোগীদের শরীর রক্ত শর্করা সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দীর্ঘসময় রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করার উপস্থিতিতে মারাত্মক ক্ষতি হয়।

এই মহামারিতে মৃত্যুঝুঁকি কমাতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ না করলে হৃদরোগ, কিডনি রোগ ও দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো জটিলতার ঝুঁকি রয়েছে। ডায়াবেটিস থাকলে ঘনঘন রক্ত শর্করা চেক করা গুরুত্বপূর্ণ। যাদের প্রিডায়াবেটিস রয়েছে তাদেরও রক্তের শর্করাকে স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে রাখার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে, অন্যথায় টাইপ ২ ডায়াবেটিস বিকশিত হবে। এখানে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে ছয়টি প্রাকৃতিক উপায় দেয়া হলো।

ওজন কমান ও শরীরচর্চা করুন: আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের একটি প্রোগ্রাম হলো ন্যাশনাল ডায়াবেটিস প্রিভেনশন প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য হচ্ছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এড়াতে লোকজনকে রক্ত শর্করা কমাতে সহায়তা করা। এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদেরকে শরীরের ওজনের ৭ শতাংশ কমাতে ও প্রতিসপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করা হয়। একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, যারা প্রোগ্রামটি অনুসরণ করেছেন তাদের তিন বছরে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৫৮ শতাংশ কমে গেছে।

বেশি করে পানি পান করুন: হাইড্রেটেড থাকলে, অর্থাৎ প্রচুর পানি পান করলে রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। অটোইমিউন রোগের গবেষক লিনা ভেলিকোভা বলেন, ‘পর্যাপ্ত পানি রক্তকে রিহাইড্রেট করে ও কিডনিগুলোকে শরীর থেকে অতিরিক্ত শর্করা বের করে দিতে সাহায্য করে।’ এটা হলো অন্যান্য পানীয়ের স্বাস্থ্যকর বিকল্প। চিনিযুক্ত পানীয় রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস কেয়ারে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, যারা দৈনিক এক লিটারের বেশি পানি পান করেছেন তাদের মধ্যে উচ্চ রক্ত শর্করার প্রবণতা সেসব মানুষদের তুলনায় ২৮ শতাংশ কম ছিল যারা প্রতিদিন আধ লিটারের কম পানি পান করতেন। পানি গ্রহণের সুপারিশকৃত মাত্রা নারীদের জন্য ১.৬ লিটার ও পুরুষদের জন্য ২ লিটার, তবে শরীরের ওজন অনুসারে তারতম্য হতে পারে।

কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে ফেলুন: কার্বোহাইড্রেট রক্ত শর্করার মাত্রার ওপর বড় প্রভাব ফেলে। ডা. ভেলিকোভা বলেন, ‘শরীর কার্বোহাইড্রেটকে ভেঙে শর্করায় পরিণত করে। ইনসুলিন এই শর্করাকে কোষে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু অত্যধিক মানহীন খাবার বা কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার কারণে ইনসুলিনের কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে রক্ত শর্করা বৃদ্ধি পায়। কি পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট খাচ্ছেন তা হিসাবে রাখলে রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রতিদিন কার্বোহাইড্রেট থেকে যেন ৪৫ শতাংশের বেশি ক্যালরি না আসে। সরল বা পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খেলে রক্ত শর্করা দ্রুত বাড়ে। অন্যদিকে জটিল কার্বোহাইড্রেট খেলে রক্ত শর্করার ওপর ধীরে ধীরে প্রভাব পড়ে।

আঁশে সমৃদ্ধ খাবার খান: উচ্চ রক্ত শর্করার প্রবণতা থাকলে সেসব কার্বোহাইড্রেট খেতে হবে যেখানে প্রচুর আঁশ রয়েছে, যেমন- ফল ও শাকসবজি। খাবারের আঁশ রক্ত শর্করা কমাতে অবদান রাখে। অ্যাডভান্সেস ইন ওবেসিটি, ওয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রোলে প্রকাশিত গবেষণা মতে কলা, বেরি ও ব্রোকলির মতো আঁশ সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি খেলে রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে আসে ও শরীরের ওজন কমে।

কম জিআইয়ের খাবার খান: গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) কোন খাবার রক্ত শর্করার ওপর কিভাবে ফেলে তা ক্রমবিন্যাস করতে সহায়তা করে। কম জিআইয়ের খাবার থেকে ধীরে ধীরে শর্করা নিঃসরিত হয়। ফলে এসব খাবার খেলে রক্ত শর্করা দ্রুত বেড়ে যায় না। ডায়েটে সেসব খাবার রাখতে পারেন যেগুলোর জিআই ৫৫ বা আরো কম। জিআই নাম্বার জানতে অনলাইনে সার্চ করতে পারেন অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে একটি লিস্ট চেয়ে নিতে পারেন। ডা. ভেলিকোভা বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ হলো রক্ত শর্করাকে নিরাপদ মাত্রায় রাখার প্রমাণিত উপায়। আমি সেসব খাবার খেতে পরামর্শ দিই যা শরীরে ধীরে ধীরে শোষিত হয় ও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, যেমন- মিষ্টি আলু, ওটমিল, বেরি ও আপেল।’

স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখুন: স্ট্রেস তথা মানসিক চাপ রক্ত শর্করার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। স্ট্রেসে থাকলে করটিসোলের মতো হরমোন রক্ত শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ও শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। ডা. ভেলিকোভা বলেন, ‘রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু চমৎকার উপায় হলো- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, শরীরচর্চা করা ও যথেষ্ট পানি পান করা। কিন্তু প্রচুর স্ট্রেসে ভুগলে এসবে কাজ নাও হতে পারে।’ তিনি স্ট্রেস কমাতে শরীরচর্চা, ধ্যান ও ডায়েরি লিখতে পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়াও স্ট্রেস কমানোর আরো কার্যকর উপায় রয়েছে, যেমন- ঘুরে বেড়ানো বা প্রকৃতি দেখা।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়