ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

দুশ্চিন্তার মাথাব্যথা দূর করার উপায়

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ২ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ২০:৪৩, ৪ অক্টোবর ২০২১
দুশ্চিন্তার মাথাব্যথা দূর করার উপায়

মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তায় কেবল মন নয়,  শরীরও বিপর্যস্ত হতে পারে। মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তায় একটি শারীরিক প্রতিক্রিয়া হলো- টেনশন হেডেক।

কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে, দুশ্চিন্তায় (টেনশনে) থাকলে যে মাথাব্যথা অনুভূত হয় তাকে টেনশন হেডেক বলে।কিন্তু এটা টেনশন হেডেকের প্রকৃত সংজ্ঞা নয়। মূলত কোনো কারণে মস্তিষ্কের মাংসপেশি সংকুচিত হয়ে যে ব্যথা হয় সেটাই টেনশন হেডেক। মাইগ্রেন, সাইনাস হেডেক বা ক্লাস্টার হেডেকের মতো টেনশন হেডেক একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নয়। ইউ.এস. ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের মতে, ‘আপনি মস্তিষ্ক বা স্কাল্পের সর্বত্র, ঘাড় ও কাঁধে টেনশন হেডেক অনুভব করতে পারেন।’

সাধারণত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা বেড়ে গেলে টেনশন হেডেক শুরু হয়, তবে এই মাথাব্যথার অন্যান্য কারণও আছে। কিছু ঘণ্টা বা একদিন-দুদিন ব্যথা অনুভূত হতে পারে। কখনো কখনো এর স্থায়িত্ব সপ্তাহখানেকও হতে পারে। সাধারণত মাংসপেশি সংকুচিত হলে এই ব্যথা শুরু হয়। মনে হতে পারে, কোনো ব্যান্ড মস্তিষ্কে চাপ দিচ্ছে। তবে ব্যক্তিভেদে ব্যথার প্রকৃতি ভিন্ন হতে পারে।

কিভাবে টেনশন হেডেক হয় তা সম্পর্কে চিকিৎসকেরা এখনো ১০০ শতাংশ নিশ্চিতভাবে জানেন না। ইউ.এস. ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, উদ্বেগ অথবা মাথায় আঘাতের প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসেবে টেনশন হেডেক হয়ে থাকে।’ মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিভিশন অব নিউরোমাস্কুলার মেডিসিনের মেডিক্যাল ডিরেক্টর অমিত সাচদেব বলেন, ‘আমরা মাথাব্যথা সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নই। তবে প্রদাহ দ্বারা টেনশন হেডেক উদ্দীপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’

টেনশন হেডেকের অন্যান্য উদ্দীপকও রয়েছে- দীর্ঘসময় মাথাকে একই অবস্থানে রেখে কাজ করা, ঠান্ডা কক্ষে ঘুমানো, ঘাড়কে অস্বাভাবিক অবস্থানে রেখে ঘুমানো, মাদক সেবন, অত্যধিক ক্যাফেইন খাওয়া, ঠান্ডাজ্বর, ফ্লু বা সাইনাস সংক্রমণ, দাঁতের সমস্যা, চোখে চাপ পড়া, অত্যধিক ধূমপান ও অত্যধিক পরিশ্রম।

যেকোনো বয়সে টেনশন হেডেক হতে পারে। তবে তরুণ-তরুণীদের এর প্রবণতা বেশি। পুরুষের তুলনায় নারীদের টেনশন হেডেকের হার বেশি। এটা পরিবারে প্রবাহমান হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মায়ের টেনশন হেডেকের প্রবণতা থাকলে সন্তানেরও উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।

মাথাব্যথা হলে আমরা দ্রুতই এটা দূর করতে চাই। কিন্তু এটা প্রতিরোধের চেষ্টা করাই সর্বোত্তম। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত কারণ বা উদ্দীপক শনাক্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে মাথাব্যথা এড়ানো যাবে। উদাহরণস্বরূপ- যদি মনে করেন যে বেশি ক্যাফেইন খেলে মাথাব্যথা করে, তাহলে এটা সীমিত করুন। অনুরূপভাবে, দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও মাথাব্যথা প্রতিরোধ হবে। এখানে দুশ্চিন্তা জনিত টেনশন হেডেক প্রশমিত করতে করণীয় উল্লেখ করা হলো।

* পেইনকিলার: দ্রুত টেনশন হেডেক কমাতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কেনা যায় এমন পেইনকিলার সেবন করতে পারেন।ক্যালিফোর্নিয়ার ফাউন্টেন ভ্যালিতে অবস্থিত মেমোরিয়াল কেয়ার অরেঞ্জ কোস্ট মেডিক্যাল সেন্টারের ব্যথা নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ মিধাত মিখাইল বলেন, ‘অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন অথবা প্যারাসিটামল টেনশন হেডেক কমাতে পারে।’ সঠিক ডোজ জানতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলাই ভালো। সপ্তাহে তিনদিনের বেশি পেইনকিলার ব্যবহার করবেন না।

চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে পেইনকিলার সেবন করলে এক ধরনের মাথাব্যথা হয়। এটাকে রিবাউন্ড হেডেক বলে, যা আরো অসহনীয় হতে পারে।

* ম্যাসাজ: ডা. মিখাইলের মতে, ‘মাথার স্কাল্প, টেম্পল ও নিম্নস্থ ঘাড়ের মাংসপেশিতে মৃদু ম্যাসাজ করলে সংকোচন দূর হবে ও ব্যথা কমে আসবে।’ গালের হাড় ও চোয়ালের হাড় সংযুক্তকারী মাংসপেশি ম্যাসেটার মাসলেও ম্যাসাজ করতে পারেন।চোয়াল খুব শক্ত হয়ে গেলে মস্তিষ্ক ও ঘাড়ের মাংসপেশিরও অনুরূপ অবস্থা হতে পারে। এটাও টেনশন হেডেকে ভোগাতে পারে, বলেন শিকাগোর ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট ডেভিড রিভি। ডা. রিভির ১০ সেকেন্ডের ম্যাসেটার ম্যাসাজ চেষ্টা করতে পারেন-

ম্যাসেটার মাসলের ওপর আঙুলের প্যাড বা নাকল রাখুন

এরপর যতটা পারেন চোয়াল খুলুন

তারপর মুখ বন্ধ করুন

চোয়াল খোলা ও মুখ বন্ধ করার এই প্রক্রিয়া মাংসপেশি শিথিল না হওয়া পর্যন্ত রিপিট করুন।

* পিপারমিন্ট অয়েল: পিপারমিন্ট অয়েল শীতল অনুভূতি দিতে পারে। এটা সংকুচিত মাংসপেশিতে ব্যবহার করলে শিথিলতা আসে। গবেষণায় এর পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে। টেম্পলে ১০% পিপারমিন্ট অয়েল সল্যুশন প্রয়োগ করাতে টাইলিনল ব্যবহারের মতো একই প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অন্য একটি গবেষণায়ও অনুরূপ ফল এসেছে। হেডেক স্পেশালিস্ট ও উইথ ক্লোভ ডটকমের মেডিক্যাল অ্যাডভাইজার সারা ক্রিস্টাল এভাবে পিপারমিন্ট অয়েল ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছেন: কয়েক ফোঁটা পিপারমিন্ট এসেনশিয়াল অয়েলকে অন্য একটি অয়েল ক্যারিয়ারে (যেমন- কোকোনাট অয়েল) মেশান, তারপর তর্জুনি ও মধ্যমাঙ্গুলের মাধ্যমে বৃত্তাকারে টেম্পল ও কপালে এক মিনিট ম্যাসাজ করুন। সতর্ক থাকুন যেন চোখে না লাগে।

* ঠান্ডা বা গরম সেঁক: ঘাড় ও কাঁধের সংকুচিত মাংসপেশিতে ঠান্ডা ও গরম সেঁকের মধ্যে যেটা ইচ্ছে দেওয়া যাবে। উভয় সেঁকই টেনশন হেডেক উপশম করতে পারে। হিটিং প্যাড, গরম পানির বোতল অথবা গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে গরম সেঁক দিতে পারেন। অন্যদিকে ঠান্ডা সেঁকের জন্য কাপড়ে মোড়ানো বরফ ব্যবহার করতে পারেন।

* ধ্যান: মনকে শিথিল করতে পারে এমনকিছুর চর্চা করতে পারেন। মন শান্ত হলে 
মাথাব্যথা কমে যাবে। ডা. মিখাইল বলেন, ‘একেক সময় একেকটা শিথিলায়ন থেরাপি চেষ্টা করতে পারেন। এতে বোঝা যাবে, কোনটা আপনার জন্য কার্যকর। আমরা চাই পেইনকিলারের ব্যবহার কমাতে, কারণ এসব ওষুধ ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। আপনি ধ্যান ও যোগব্যায়াম উভয়টাই করতে পারেন। গবেষণা মতে, এসব শিথিলায়ন থেরাপিতে মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কমে।’

যখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

এখানে আলোচিত উপায় অনুসরণের পরও মাথাব্যথা দূর না হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তিনি মাসল রিলাক্সার প্রেসক্রাইব করতে পারেন। তিনি আপনাকে ফিজিক্যাল থেরাপিস্টের কাছেও পাঠাতে পারেন- এমনকিছু এক্সারসাইজ রয়েছে যা ঘাড় ও কাঁধকে শিথিল করতে পারে, যার ফলে টেনশন হেডেক উপশম হয়। মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশি শোচনীয় মনে হলে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট উল্লেখ করতে পারেন। এমনকি তিনি সাইকোলজিস্ট বা সাইক্রিয়াট্রিস্টের কাছেও রেফার করতে পারেন। ঘনঘন টেনশন হেডেকে ভুগলে তিনি জীবনযাপনে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিতে পারেন, যেমন- নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা, পর্যাপ্ত ঘুমানো, ঘুমের মান বজায় রাখা, পর্যাপ্ত পানি পান করা ও নিয়মিত শরীরচর্চা করা।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ