ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সুদের হার ৯% ও ৬%- বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৫ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুদের হার ৯% ও ৬%- বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা

নাসির উদ্দিন চৌধুরী : ঋণের সুদের হার নয় শতাংশ এবং আমানতের সুদের হার ছয় শতাংশ হারে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় সম্প্রতি বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ফের চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে এর আগে ব্যাংক ঋণের হার কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাই বাস্তবায়ন হয়নি। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই চিঠির পরে সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন  বিশ্লেষকরা।

তারা জানান, এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। মার্কেট ইকনোমিতে এক এক ব্যাংকের এক এক ধরনের চাহিদা আছে। আর ব্যাংক ঋণের হার কমালে দেখা যাবে ব্যবসায়ীরা অনেক লাভবান হচ্ছে। কিন্তু আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছে। তাই সব বিষয় বিবেচনা করলে এটি বাস্তবায়ন হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসা এবং এটি বাস্তবায়ন করতে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক সম্মত হয়েছে জানিয়ে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা সবাই সম্মত। তবে এটি বাস্তবায়নে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরাতো ডিপোজিট ছাড়া কাজ করতে পারব না। ডিপোজিট লাগবেতো আমাদের। সেই ডিপোজিট সোর্সটা কিভাবে আসবে ও সেটি যদি কম সুদে না হয় তাহলে আমি কিভাবে ঋণের সুদের হার নয় শতাংশ নিব।

তিনি বলেন, আমরা সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে সমস্যার কথা বলেছি এবং আমরা ঋণের সুদের হার নয় শতাংশে নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু আমানতের সুদের হার কমাচ্ছে না। তাই এটি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রত্যেক ব্যাংকের আলাদা চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ঋণের সুদ নয় ও আমানতের সুদ ছয় শতাংশ নির্ধারণ করে দিলে কিভাবে হবে? এটি বাস্তবায়ন এতটা সহজ হচ্ছে না। আর এভাবে করাও ঠিক হবে না। তবে হ্যাঁ ঋণের সুদের হার খুব বেশি এবং এদিকে ডিপোজিটর যেন কম না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।

ব্যাংকারদের সরকারের দিক থেকে বলতে হবে স্প্রেড কমাতে। আর এটা করতে ব্যাংকারদের প্রফিট কমাতে হবে। কারন তাদের এত প্রফিট করার কি দরকার? এনপিএল (নন-পারফর্মিং লোন) কমিয়ে আনতে আরো কঠোর হতে হবে। এনপিএল কমে গেলেইতো ব্যাংকের ইনকাম একাউন্টে টাকা আসবে।

প্রসঙ্গত, গত বছর ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে ওই সময়ে সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকের মালিকরা বেশ কয়েকটি সুবিধাও নিয়েছেন। এরমধ্যে ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ ও সংখ্যা দুটোই বাড়িয়ে নিয়েছেন। ব্যাংকের করপোরেট কর আগের চেয়ে আড়াই শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিএবির চাহিদা অনুযায়ী সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, সিআরআর ১ শতাংশ হ্রাস, ঋণ আমানতের হার (এডিআর) সমন্বয়সীমার সময় বাড়ানো এবং রেপো রেট ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ করাসহ অন্যান্য আরো অনেক সুবিধা গ্রহন।

আবার কয়েকটি ব্যাংক এই সুবিধা চালু করলেও, পরবর্তীতে সেখান থেকে সরে এসেছে। ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী এ পর্যন্ত পাঁচ দফা নির্দেশ দিয়েছেন। শেষবার বাজেটোত্তর (২০১৯-২০) সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে না আনলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের কথা জানিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে না। তাই আদৌ এটি (ঋণ ও আমানতের সুদের হার ৯% ও ৬%) বাস্তবায়ন হবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুলাই ২০১৯/নাসির/এনএ   

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়