ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

মুসলমানদের ঐতিহাসিক বিজয়

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৩ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুসলমানদের ঐতিহাসিক বিজয়

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : মাহে রমজানের ১৭ রোজা আজ। দ্বিতীয় হিজরির এই দিনে মদীনা শরীফের ৮০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে রাসুলুল্লাহর (সা.)- নেতৃত্বে মক্কার কাফের তথা কুরাইশদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। যা ছিল কাফিরদের বিরুদ্ধে সামনা সামনি মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ।

 

মাত্র ৩১৩ জন সাহাবি নিয়ে মহানবী (সা.) সশস্ত্র সহস্রাধিক কাফিরের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ইসলামের বিজয় ছিনিয়ে আনেন। এই যুদ্ধে আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতা পাঠিয়ে তাঁর প্রিয় হাবিবকে সরাসরি সাহায্য করেন। এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের উত্থান শুরু হয় এবং এটি শেষ হয় মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে। আর মহানবী (সা.) পরিণত হন বিশ্বের সর্বকালের একজন বিচক্ষণ, উদার ও পরাক্রমশালী সেনানায়ক, রাজনীতিবিদ ও সুবিবেচক শাসক হিসেবে।

  

তাই মাহে রমজানের এই দিনের গুরুত্ব মুসলমানদের কাছে অপরিসীম। আজকের এই দিনে মুসলমানরা যদি পরাজিত হতো তাহলে হয়তো ইসলামের নাম নিশানা মুছে যেতো। এ যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে মুসলমানদের যাত্রা শুরু হয়। মুসলমানদের কাছে সত্য, ন্যায়, নিষ্ঠা, শক্তি, সাহস ও প্রেরণা দৃঢ় হয়। অন্য ধর্মাবলম্বীগণও ইসলাম যে একটি সত্য ধর্ম ও এই ধর্মের আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন। 

 

বদর যু্দ্ধ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন শরীফে এরশাদ করেন, স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে, তিনি তা কবুল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি তোমাদের সাহায্য করব এক হাজার ফেরেশতা দিয়ে, যারা একের পর এক আসবে। আল্লাহ তা করেন, কেবল সুসংবাদ দেওয়ার জন্য এবং এ উদ্দেশ্যে, যাতে তোমাদের চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে এবং সাহায্য তো শুধু আল্লাহর নিকট থেকেই আসে, আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা আনফাল, আয়াত ৯-১০)।

 

প্রকৃতপক্ষে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের আত্মরক্ষামূলক। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম কাউকে আজকের মতো জিহাদের নামে বিনা কারণে মানুষ মারার বৈধতা দেয়নি। বদরের যুদ্ধই এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত। অহেতুক অজুহাত সৃষ্টি করে মক্কার কাফিররা চেয়েছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবাদের হঠাৎ আক্রমন করে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। কাফেরদের আক্রমনের খবর পেয়ে প্রতিরোধ করতে গিয়ে আত্মরক্ষার্থে এই যুদ্ধে জড়িয়েছিলেন মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবাগণ।

 

১৭ রমজান বদর যুদ্ধে আল্লাহ পাকের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। এ প্রসঙ্গে হাদিসে আছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদরের দিন নবী (সা.) আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে বলছিলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গিকার পূরণ করার জন্য প্রার্থণা করছি। হে আল্লাহ! আপনি যদি চান (কাফেররা আমাদের উপর জয়লাভ করুক) আপনার এবাদত করার লোক আর থাকবে না। এমতাবস্থায় আবু বকর (রা.) তাঁর হাত চেপে বললেন, আপনার জন্য এ যথেষ্ট। তখন তিনি এ আয়াত পড়তে পড়তে বের হলেন– শত্রুদল শিগগিরই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে। (বুখারী শরীফ, ষষ্ঠ খণ্ড)।

 

১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মান মর্যাদা অনেক বেশি। এই যুদ্ধে ১৪ জন সাহাবা শহীদ হন। তার মধ্যে মহানবীর (স.) প্রিয় চাচা আমীরে হামজা শাহাদত বরণ করেন। এই যুদ্ধে যারা শাহাদত বরণ করেছেন তারা জান্নাতুল ফেরদৌস লাভ করবেন বলে মহানবী (স.) ঘোষণা দিয়েছেন।

 

অন্যদিকে মক্কার কাফিরদের ৭০ সৈন্য নিহত হন এবং বন্দি হন আরো ৭০ জন। তার মধ্যে তাদের দলনেতা আবু জেহেল ইবনে হিশামও ছিলেন।

 

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হারিস (রা.) একজন নওজওয়ান  ছিলেন। বদরযুদ্ধে তিনি শাহাদত বরণ করার পর তাঁর মাতা রাসুলের (সা.) কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! হারিস আমার কত আদরের আপনি তো অবশ্যই জানেন। সে যদি জান্নাতি হয় তাহলে আমি ধৈর্য্য ধারণ করবো এবং আল্লাহর নিকট সওয়াবের আশা পোষণ করবো। আর যদি না হয় তাহলে আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন আমি (তার) জন্য যা করছি।

 

তখন তিনি (রাসুল) বললেন, তোমার কি হলো, তুমি কি জ্ঞানশূন্য হয়ে গেলে? বেহেশত কি একটি? (না….না) বেহেশত অনেকগুলি, সে তো জান্নাতুল ফেরদৌসে অবস্থান করছে। (বুখারী শরীফ, ষষ্ঠ খণ্ড)।

 

১৭ রমজানে বদরযুদ্ধের বিজয়কে মহানবী (সা.) আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য কল্যাণ ও উত্তম প্রতিদান অভিহিত করেছেন।

 

হযরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি স্বপ্নে যে কল্যাণ দেখতে পেয়েছিলাম সে তো ঐ কল্যাণ যা পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তা’আলা আমাদের দান করেছেন। আর উত্তম প্রতিদান সম্বন্ধে যা দেখেছিলাম তা তো আল্লাহ আমাদের দান করেছেন বদরযুদ্ধের পর। (বুখারী শরীফ, ষষ্ঠ খণ্ড)

 

মাহে রমজানের এই বদর যুদ্ধের দিনে অন্তত নফসে আম্মারার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হই। বেশি করে এবাদত বন্দেগী করি।

 

বদরযুদ্ধের এই দিনে আল্লাহপাক আমাদের মুসলমানদের বিভেদ দূর করে মহানবীর (স.) আত্মরক্ষামূলক কৌশল এবং বিচক্ষণ নেতৃত্ব অনুসরণের তওফিক দিন ... আমীন।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুন ২০১৬/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়