ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঈদে করোনা আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪২, ৭ জুলাই ২০২২   আপডেট: ২২:০৬, ৭ জুলাই ২০২২
ঈদে করোনা আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

ফাইল ফটো

প্রতিদিনই দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামনের কোরবানির ঈদে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শহর ছেড়ে গ্রামে গেলে করোনার নতুন উপ-ধরন ‘বিএ.৪’ এবং ‘বিএ.৫’ আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। সরকারিভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দাবি, সংক্রমণ রোধে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার (৬ জুলাই) ১০ হাজার ২৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৭২৮ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন প্রায় ১২ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৯৯৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। বুধবার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার বেড়ে ১৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ হয়েছে। মঙ্গলবার তা ১৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ ছিল।

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৯ হাজার ১৮৮ জনে।

দেশে ৬ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৭ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত ১ হাজার ৭৯০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে মোট ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯০ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ১০ হাজার ৪৭৭ জন।

আইসিডিডিআর’বির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বর্তমানে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ওমিক্রনের নতুন দুই ধরন ‘বিএ.৪’ এবং ‘বিএ.৫’। তবে, এই উপধরনে সংক্রমণের হার বাড়লেও রোগীর মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির হার কম। আইসিডিডিআর'বির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেছেন, ‘গত বছর এ সময়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল ডেল্টা ধরনের কারণে। এবার একই সময়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ ওমিক্রনের নতুন ধরন। ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রন দুর্বল হওয়ায় এতে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর ঝুঁকি কম। তারপরও সংক্রমণের হার বাড়ার কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে সামনের ঈদে মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ওমিক্রনসহ নতুন ধরনটির সবখানে ছড়িয়ে পড়বে। বর্তমান সংক্রমণে মৃত্যুর সম্ভাবনা কম থাকলেও এতে অন্য ধরনের রোগে আক্রান্ত ও বয়স্কদের মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘পশুর হাট, ঈদযাত্রা ও ঈদের জামাতে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর বিষয়ে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়েছে। সভায় ঈদকে ঘিরে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এখনও যাদের টিকা নেওয়া বাকি আছে, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উৎসব করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে। এসব বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় করে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।’

উল্লেখ্য, দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয় ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর। বর্তমান বছরের জানুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহে বেশিরভাগ করোনা পজিটিভ কেস ছিল ‘বিএ.১’। পরে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সাব-ভ্যারিয়েন্ট ‘বিএ.২’ সংক্রমিত হওয়া শুরু হয়। সময়ের ব্যবধানে ‘বিএ.১’ উপ-ধরন রূপ পরিবর্তন করে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ ঘটায়। এ অবস্থায় ১৯ মে ঢাকায় প্রথম সন্দেহভাজন ওমিক্রন সাব-ভ্যারিয়েন্ট ‘বিএ.৫’ রোগী শনাক্ত করা হয়। গত ছয় সপ্তাহে (১৪ মে থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত) ‘বিএ.৫’ সবচেয়ে প্রভাবশালী সাব-ভ্যারিয়েন্ট হয়ে উঠেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, ‘অন্য ঈদের মতো এবারও ঈদে লাখো মানুষ শহর থেকে গ্রামে যাচ্ছে। এছাড়া, পশুর হাট, শপিংমল, গণপরিবহনসহ কোথাও মানুষ তেমন স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ফলে, ওমিক্রন সবখানেই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। বর্তমানে অনেকে সংক্রমিত হলেও বুঝতে পারছেন না। অন্যদিকে, ওমিক্রনের দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্টের উপ-ধরন শনাক্ত হয়েছে। এরইমধ্যে মানুষ গ্রামে যাচ্ছে। এতে ঢাকায় সংক্রমিত ব্যক্তি গ্রামেও ছড়িয়ে দেবে, সামাজিক সংক্রমণ বাড়বে। সে কারণে সরকারি নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে তৎপর হতে হবে। গণহারে নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে হবে। সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনা সংক্রমণ বাড়বে, এটা জানা কথা। এর ফলে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়বে। ঈদ উৎসবের কারণে সংক্রমণ যাতে না বেড়ে যায়, সবাইকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি রোগী শনাক্তের ওপরও বেশি গুরত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাতে কেউ আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বস্তরের মানুষকেই সহযোগিতা করতে হবে।’

মেয়া/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়