ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গরমে ঢাকায় বাড়ছে ডায়রিয়া

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ৮ জুন ২০২৩  
গরমে ঢাকায় বাড়ছে ডায়রিয়া

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ

তীব্র গরমে ডায়রিয়া ও হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনিই রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা।

রাজধানীর মহাখালীস্থ আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দিনে গড়ে ৫৫০ থেকে ৬০০ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গরমের সময় ছাড়া অন্য সময়ে রোগীদের এই সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের মধ্যে থাকে।

আইসিডিডিআর’বি-র একজন কর্মকর্তা বলেন, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বছরের দুই সময়ে একটু বেশি হয়। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে এবং পরে। বর্তমানে বর্ষা শুরুর আগের মৌসুম চলছে।

তিনি জানান, গত মঙ্গলবার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিলো ৬৩৫ জনের বেশি। এর আগে ছিলো যথাক্রমে ৬২০, ৫৪৫, ৫৭০ এরকম। প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

আইসিডিডিআর’বি-র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ডা. মো. ইকবাল হোসেন বলেন, গরমে ঘামার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়, সেজন্য শরীরে পানির চাহিদা বাড়তে থাকে। ঘন ঘন তৃষ্ণা পায়। পানি পেলেই খেতে চায়। পানি দূষিত না বিশুদ্ধ সেটা ভাবার সুযোগ পায় না। সঙ্গত কারণে এসব পানি পানে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। তাই, গরমের সময় সুপেয় পানি পান করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে খাবার বেশিক্ষণ ভালো থাকে না। যে কারণে এই গরমে খাবারে জীবাণুর পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। ফলে সামান্য নষ্ট বা গন্ধযুক্ত খাবার গ্রহণেও মানুষ পেটের পীড়া বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

অতিরিক্ত গরমে ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের শরীর থেকে প্রচুর ঘামের সঙ্গে লবণও বেরিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই সেটার প্রতি আমরা গুরুত্ব দেই না। যদিও এর চিকিৎসা খুব সহজ। যতবার পাতলা পায়খানা হবে, ততবার একটি করে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে এমনিতেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসারও প্রয়োজন হবে না।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সমীরণ কুমার বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে সারাদেশে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এর ফলে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি হয় ডিহাইড্রেশন। তীব্র গরমে কাজের জন্য দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকলে ডিহাইড্রেশন একটা স্টেজে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে অনেক হাই টেম্পারেচারেও শরীরের ঘাম থাকে না। এমনকি, এক পর্যায়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারে। এটিকে মেডিক্যালের ভাষায় হিটস্ট্রোক বলে।

অধ্যাপক সমীরণ বলেন, শ্রমজীবী মানুষ যারা রাস্তায় কাজ করেন। তারা পিপাসার কারণে বাধ্য হয়ে রাস্তাঘাটে শরবত ও পানি খেয়ে থাকেন। সেসব পানি বিশুদ্ধ না হওয়ায় দিন দিন হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইদানিং  টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিসসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত প্রচুর রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

যাদের কাজের প্রয়োজনে নিয়মিত বাইরে যেতে হচ্ছে, বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক, লেবারসহ যারা আছেন, তারাই এই গরমে বিভিন্ন রোগে বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছেন। এজন্য যারাই এই গরমে বাইরে গিয়ে কাজ করবেন, তাদের দুই ঘণ্টা পরপর ছায়ায় বসে ১৫-২০ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিতে হবে। নয়তো তাদের হিটস্ট্রোক হতে পারে বলেও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

যারা নিয়মিত প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যান, তাদের করণীয় প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, গরমে ঘামের সঙ্গে তাদের শরীর থেকে লবণ বের হয়ে যায়। এজন্য প্রচুর বিশুদ্ধ পানি, লবণ মিশ্রিত পানি, ওরস্যালাইন, ডাব খেতে হবে। বাইরে এসব পানি খেতে গেলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রাস্তাঘাটের অস্বাস্থ্যকর শরবত বা পানি খাওয়া যাবে না।

অধ্যাপক নাজমুল বলেন, সারাদেশেই বেশ কিছুদিন ধরে তীব্র দাবদাহ চলছে। এই গরমে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ে। তবে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও পরিস্থিতি আয়ত্বের মধ্যে রয়েছে। এই গরমে নিজেকে সুস্থ রাখতে আমাদের সবাইকেই সচেতনতা মেনে চলার পরামর্শও দেন এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়