ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

বই-খাতা আগের মতোই আছে, শুধু সানি নেই

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১০, ১৪ জুলাই ২০২৩  
বই-খাতা আগের মতোই আছে, শুধু সানি নেই

তারিকুজ্জামান সানি (ফাইল ফটো)

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য জার্মানিতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল তারিকুজ্জামান সানির। পরিবারও সায় দিয়েছিল। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সানি। কিন্তু, বন্ধুদের সঙ্গে পদ্মা নদীতে ঘুরতে গিয়ে আর ফেরেননি তিনি। বই, খাতা, পড়ার টেবিল সব আগের মতোই আছে, শুধু সানি নেই।

গত বছরের ১৪ জুলাই বিকেলে ঢাকার দোহার থানাধীন মৈনট ঘাটে ১৫ বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে নদীতে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হন বুয়েটের শিক্ষার্থী তারিকুজ্জামান সানি। ১৫ জুলাই বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে মৈনট ঘাট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন সানির ভাই হাসানুজ্জামান দোহার থানায় ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই ১৫ জন সানির সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন। 

সানিকে হত্যা করা হয়েছে, নাকি তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, এক বছরেও তা জানা যায়নি। আসামিদের স্বজনরা বলছেন, এটা হত্যা নয়, দুর্ঘটনা। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা। 

সানি হত্যা মামলাটি তদন্ত পর্যায়ে আছে। সর্বশেষ গত ২৬ জুন এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন পুলিশ প্রতিবেন দাখিল করতে পারেনি। এজন্য ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম সাইফুল ইসলাম আগামী ২৭ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। মামলার ১৫ আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে পেয়েছেন।

সানির ভাই হাসানুজ্জামান বলেন, সুখের সংসার ছিল আমাদের। তিন বছর আগে বাবাকে হারিয়েছি। সেই শোক কাটতে না কাটতে ভাইটাও চলে গেল। ভাইকে হারিয়ে যে জীবন কেমনে চলছে, এটা বর্ণনা করা সম্ভব না। সানির মৃত্যুর পর থেকে মা খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। সানি যে খাবারগুলো খেতে পছন্দ করত, সেই খাবারগুলো খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। মা মাঝেমধ্যে সানির রুমে গিয়ে ড্রয়ারে থাকা কাপড়চোপড় হাতে নিয়ে কান্নাকাটি করেন। ওর ছবি নিয়ে বসে থাকেন। এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। যার যায়, শুধু সে-ই বোঝে স্বজন হারানোর ব্যথা। 

তিনি বলেন, এখন আছি শুধু আমি আর মা। আমার ছোটভাই খুব আদরের ছিল। সানি আমাদের স্বপ্ন ছিল। সানি আমাদের জন্য কিছু করুক, এটা নয়, বরং ওর জন্য কিছু করতে পারিনি, এটা ভেবেই কষ্ট লাগে। সানির স্বপ্ন ছিল বুয়েট থেকে পাস করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য জার্মানিতে যাবে। সেটা স্বপ্নই থেকে গেলো। 

হাসানুজ্জামান বলেন, সানির বই, খাতা, পড়ার টেবিল সব আগের মতোই আছে, শুধু সে নেই। গত ৮ মে সানির জন্মদিন ছিল। কোনো কিছুই করা হয়নি। মানুষ না থাকলে তো আর কিছুই থাকে না। আমাদের কাছে প্রতিদিনই সানির মৃত্যুর দিন। 

তিনি বলেন, সানির মৃত্যুর বিষয়টা সন্দেহজনক। কয়েকজন বলেছে, সানিকে খেয়াল করেনি। আবার কয়েকজন বলছে, সানি পানিতে পড়ে গেলে তাকে তারা সাহায্য করতে যান। ১৫ জনের ৩০টা হাত। চাইলেই সানিকে বাঁচাতে পারত। আমরা চাই, আসল অপরাধী সকলের সামনে আসুক। প্রকৃত অপরাধীর সাজা হোক, আর নিরাপরাধরা যেন মুক্তি পায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুতুবপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জহুরুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। এটি আলোচিত মামলা। সময় নিয়ে, গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। অন্যান্য সংস্থাও ছায়া তদন্ত করছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে, আসল ঘটনা কী। তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। সানির মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করে আমরা সবাইকে জানাবো।

তারিকুজ্জামান সানি বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি রাজধানীর হাজারীবাগে।

সানি হত্যা মামলার আসামিরা হলেন—শরীফুল হোসেন, শাকিল আহম্মেদ, সেজান আহম্মেদ, রুবেল, সজীব, নুরজামান, নাসির, মারুফ, আশরাফুল আলম, জাহাঙ্গীর হোসেন লিটন, নোমান, জাহিদ, এটিএম শাহরিয়ার মোমিন, মারুফুল হক মারুফ ও রোকনুজ্জামান ওরফে জিতু।

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়