ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

ডেঙ্গুতে আগস্টে সর্বোচ্চ মৃত্যু 

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৫:০৯, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ডেঙ্গুতে আগস্টে সর্বোচ্চ মৃত্যু 

ফাইল ফটো

প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ সত্বেও কোনোভাবেই ডেঙ্গুকে থামানো যাচ্ছ না।

চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু আগস্ট মাসেই ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৪২ জন, যা বাংলাদেশে ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ হাজার ৬৭৬ জন। এ মাসে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ১১ দশমিক ০৩ জন। গড় আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০৫ দশমিক ৬৭ জন।

দিন যত যাচ্ছে, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। ভালো চিকিৎসার আশায় মফস্বল ছেড়ে রোগীরা ভিড় জমাচ্ছেন রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। এসবের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ডিএনসিসি ডেডিকেটেড ডেঙ্গু হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি।

দেশের প্রায় সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড বা কর্নার করা হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ২৪ ঘণ্টা নিরলসভাবে কাজ করেও রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যেও সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া, হাসপাতালে বেড না পাওয়া, বাজারে স্যালাইন সঙ্কট, ডেঙ্গু রোগীর পথ্য ডাবের উচ্চ মূল্যসহ নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে নিয়মিত। তারপরও রাজধানীবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। তারা বলছেন, সঠিক সময়ে, সঠিক ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। অনিয়মিতভাবে ফগার মেশিনে যা ছিটানো হচ্ছে, তাতে মশা মরছে না।

অন্যদিকে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবল ওষুধ ছিটিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। নিজেদের বাসা, ছাদ, গ্যারেজসহ আশপাশে জমা থাকা পানি নিয়মিত ফেলে দিতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সম্প্রতি দাবি করেছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন মশা নিরোধক কার্যক্রম চালিয়ে তারা দক্ষিণ সিটি এলাকায় ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ’ করতে সক্ষম হয়েছেন।

তবে, ঢাকা উত্তর এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে, এমন দাবি করেননি উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উত্তর সিটি নিয়মিত কাজ করছে। বাসা, জলাশয় ও ড্রেন পরিষ্কার করা, ওষুধ ছিটানো, ড্রোনের সাহায্যে ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল শনাক্ত করা ও ব্যবস্থা গ্রহণ, নাগরিকদের নিয়মিত সচেতন করার জন্য মাইকিং, সভা, লিফলেট বিতরণ, স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য মশা বিষয়ে কার্টুন বই বিতরণ, নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নানা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৮ হাজার ২১ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬৫ হাজার ৭৮৭ জন।

আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৫৩ হাজার ৭৬৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬১ হাজার ৭১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৩ বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হচ্ছে—২০০০ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৫৫৫১ জন ও মৃত্যু হয় ৯৩ জনের, ২০০১ সালে আক্রান্ত ২৪৩০ ও মৃত্যু ৪৪, ২০০২ সালে আক্রান্ত ৬২৩২ ও মৃত্যু ৫৮, ২০০৩ সালে আক্রান্ত ৪৮৬ ও মৃত্যু ১০, ২০০৫ সালে আক্রান্ত ১০৪৮ ও মৃত্যু ৪, ২০০৬ সালে আক্রান্ত ২২০০ ও মৃত্যু ১১, ২০০৭ সালে আক্রান্ত ৪০৬ ও মৃত্যু নেই, ২০০৮ সালে আক্রান্ত ২১৫৩ ও মৃত্যু নেই, ২০০৯ সালে আক্রান্ত ৪০৪ ও মৃত্যু নেই, ২০১০ সালে আক্রান্ত ৪০৯ ও মৃত্যু নেই, ২০১১ সালে আক্রান্ত ১৩৫৯ ও মৃত্যু ৬, ২০১২ সালে আক্রান্ত ৬৭১ ও মৃত্যু ১, ২০১৩ সালে আক্রান্ত ১৭৪৯ ও মৃত্যু ২, ২০১৪ সালে আক্রান্ত ৩৭৫ ও মৃত্যু নেই, ২০১৫ সালে আক্রান্ত ৩১৬২ ও মৃত্যু ৬, ২০১৬ সালে আক্রান্ত ৬০৬০ ও মৃত্যু ১৪, ২০১৭ সালে আক্রান্ত ২৭৬৫ ও মৃত্যু ৮, ২০১৮ সালে আক্রান্ত ১০১৪৮ ও মৃত্যু ২৬, ২০১৯ সালে আক্রান্ত ১০১৩৫৪ ও মৃত্যু ১৭৯, ২০২০ সালে আক্রান্ত ১৪০৫ ও মৃত্যু ১০৫, ২০২১ সালে আক্রান্ত ২৮৪২৯ ও মৃত্যু ১০৫, ২০২২ সালে আক্রান্ত হন ৬২৩৮২ জন এবং মৃত্যু হয় ২৮১ জনের।

মেয়া/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়