পারভিন ববি : বিস্মৃত এক আবেদনময়ী আইকন
শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম
পারভিন ববি
শাহ মতিন টিপু : অভিনেত্রী ও মডেল পারভিন ববি এখন অনেকের কাছেই বিস্মৃত। অথচ তিনি ছিলেন ভারতীয় সিনেমার অন্যতম সুন্দরী অভিনেত্রী। সত্তর ও আশির দশকের এই অভিনেত্রী ২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারি পরলোকে পাড়ি জমান। তবে তার মৃত্যু ছিল অস্বাভাবিক।
মৃত্যুর দু’দিন বাদে মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল পারভিন ববির। তখন মিডিয়াকে বলা হয়েছিল আত্মহত্যা। ঠিক কি কারণে জীবনের শেষ ধাপে পারভিন ববি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা জানা যায় নি আজো। হয়তো জানা যাবেও না কোন দিন। রহস্য হয়েই দূর আকাশের তারার মতোই জ্বলে থাকবেন তিনি।
সর্বকালের সেরা আবেদনময়ী আইকনদের প্রথম বিশজনের একজন ভাবা হতো পারভিন ববিকে। ১৯৭৩-এ মডেল হিসাবে তার পেশাদারি জীবন শুরু। সেখান থেকেই অভিনয় জগতে। টাইম ম্যাগাজিনের কভারে খোলামেলা পোজ দিয়ে ঝড় তুলেছিলেন। এর পর বলিউড দুনিয়ায় সেক্স অ্যাপিল নিয়ে দারুণ সময় পার করেন ববি।
১৯৭২ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত বলিউডে একপ্রকার দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পারভিন ববি। মজবুর, নমক হালাল, কালা পাত্থার, দিওয়ার, অমর আকবর অ্যান্টনি, শান এসব ছবির জন্য অনেক অনেক দিন তিনি সিনেমা দর্শক মনে জেগে থাকবেন। সে সময়েও এসব সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য প্রশংসা কুড়ান পারভিন। বড় বড় অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ ঘটে তার। সাহসী পোশাকের ব্যাবহার করে তৎকালীন হিন্দি সিনেমাতে নতুন স্টাইলের শুরু করেন।
হঠাৎ করে জড়িয়ে পড়েন পরিচালক মহেশ ভাটের সঙ্গে গোপন সম্পর্কের বিতর্কে। মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন, ফলে ভুগতেও হয় তাকে। তারপর ধীরে ধীরে লোক চক্ষুর আড়ালে চলে যান পারভিন। অবশেষে মুম্বাইয়ের ফ্লাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে।
অসাধারণ সুন্দরী ও আবেদনময়ী এই অভিনেত্রীর অভিনয়ের থেকেও তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই মানুষজনের আগ্রহ ছিল বেশি। মহেশ ভাটের সঙ্গে তার দুর্দান্ত প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর তিনি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন।
১৯৮৩ সালে নিউ ইয়র্ক চলে যান পারভিন ববি। ৫ বছর পর ফিরে এলেও ছিলেন মানসিকভাবে অস্থির। সবসময় ভীত হয়ে থাকতেন তিনি। ২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি নিজ ফ্ল্যাট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। দেহ উদ্ধার হওয়ার সময় তিন দিন পুর্বের দুধের প্যাকেট, খবরের কাগজ এসব গেটের বাইরে পড়েছিল।
মহেশ ভাট-পারভিন ববি সম্পর্কে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক লেখায় উল্লেখ করা হয়, মহেশ তখন বিবাহিত। তবে পারভিনের প্রেমে তিনি পাগল। এক রাতে দু’জনে খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। লাভ মেকিংয়ের ঠিক আগে পারভিন নাকি তাকে বেছে নিতে বলেছিলেন জীবনের একজনকে। “মহেশ, ইটস ইদার মি অর ইউজি।”
ইউজি বলতে মহেশ এর দার্শনিক বন্ধু ইউজি কৃষ্ণমূর্তি। পারভিন তত দিনে জেনেটিক বায়োকেমিক্যাল ডিজঅর্ডার- প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়ার শিকার হয়ে গিয়েছেন। সাংঘাতিক সন্দেহবাতিক। সারাক্ষণ ভেবে চলেছেন যে অমিতাভ বচ্চন তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু পারভিন যে রাতে মহেশকে বললেন ইউজি আর তার মধ্যে একজনকে বেছে নিতে, তখন মহেশ আর সহ্য করতে পারেননি। সঙ্গমের ঠিক আগের মুহূর্তে নিজেকে সামলে নেন তিনি। জামা পরে বেরিয়ে যান ঘর থেকে।
পিছন থেকে পারভিনের গলা ভেসে আসে। সম্পূর্ণ নগ্ন পারভিন। “মহেশ, মহেশ” বলে চিৎকার করছেন তিনি। ইচ্ছে ছিল পারভিনকে থামিয়ে এটা বলার যে, এ ভাবে রাস্তায় বেরোনো উচিত নয়। তবে সে রাতে মহেশ তা পারেননি। সে রাতেই সম্পর্কে ইতি টেনে দেন।
তবে ২০০৫ সালে পারভিন যখন রহস্যজনক ভাবে মারা যান, তখন মহেশই এগিয়ে এসেছিলেন তাকে দাহ করার জন্য। মহেশ জানতেন সাফল্যের চরম শিখরে থেকেও পারভিন ছিলেন চূড়ান্ত একাকী।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জানুয়ারি ২০১৫/টিপু/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম