ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ক্রিকেট বিশ্বের সেরা ১০ কোচ (প্রথম পর্ব)

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ৩১ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্রিকেট বিশ্বের সেরা ১০ কোচ (প্রথম পর্ব)

কোচ জন বুকানন

রুহুল আমিন : সাফল্যের চাবিকাঠি হল দক্ষতা। কিন্তু এটাও ঠিক যে শুধু দক্ষতা থাকলেই সফলতা আসে না। প্রয়োজন দক্ষতার পরিচর্যা। কিভাবে দক্ষতা কাজে লাগানো যায় তার পরিকল্পনা করা।

প্রতিভা আর অধ্যবসায় থাকলে মানুষ তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় প্রতিভাবান হয়েও লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হতে হয়। প্রতিভার সঠিক পরিচর্যা ও দিকনির্দেশনার অভাবে ব্যর্থ হতে হয়।

এটা জীবনের সবক্ষেত্রেই মোটামুটি প্রযোজ্য। এমনকি আমরা খেলাধুলার বিষয়, বিশেষ করে ক্রিকেট নিয়ে ভাববো যখন তখনো দেখব একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড় প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারছেন না। হয়তো একজন ভাল গাইড পেলে ভাল করা সম্ভব হতো। ক্রিকেটে একজন কোচের ভূমিকা অনেক। যিনি খেলোয়াড়দের প্রতিভাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে লাগানোর মন্ত্র শেখাবেন। গাইড করবেন, শিক্ষা দিবেন কি করে সঠিক পথে এগিয়ে গেলে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। কোচ খবুই অপরিহার্য দলের জন্য, খেলোয়াড়দের জন্য।

একজন কোচ ভাল করেই জানেন কিভাবে প্রত্যেকটি খেলোয়াড়কে এককভাবে মনোযোগ দিতে হয়। খেলোয়াড়দের বিশ্বাস ও সামর্থ্য ও দুর্বলতা চিহ্নিত করেন কোচরা। তাদেরকে ভাল করে বুঝেন। তাদের নিয়ে কাজ করেন। কোচ জানেন খেলোয়াড়দের কিভাবে ট্রিট করতে হয় দলীয়ভাবে, এককভাবে এবং কিভাবে সফল হওয়ার মন্ত্র শিখাতে হয়। বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ১০জন কোচ নিয়ে আমাদের আয়োজনে আজ থাকছে প্রথম পর্ব :

১. জন বুকানন : প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ান প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলোয়াড় ও কোচ জন বুকাননকে ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা কোচ বিবেচনা করা হয়। তার ডাক নাম নেড ফ্ল্যান্ডারস। পাঁচ বছর অসি কাউন্টি দল কুইন্সল্যান্ড বুলসের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। বুকানন কোচ থাকাকালীন অস্ট্রেলিয়া ২০০৩ ও ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জেতে। অস্ট্রেলিয়া দলের কোচের দায়িত্ব থেকে অবসরের পর তিনি ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। আর ২০১০-১১ সালে অ্যাশেজ সিরিজ চলাকালীন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের কনসালটেন্ট হিসেবে তাকে ভাড়া করা হয়।এ ছাড়া তিনি ২০১১ সালের মে থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 



২. বব উলমার : বব উলমার ইংল্যান্ডের প্রাক্তন খেলোয়াড়। উলমারের কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯১ সালে কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব ওয়ারউইকশায়ারের কোচ নিযুক্ত হয়ে। ১৯৯৩ সালে তার তত্ত্বাবধানে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জিতে ক্লাবটি। ১৯৯৪ সালে উলমার দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। তার সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৫টি টেস্ট সিরিজের মধ্যে ১০টি সিরিজে জেতে। তিনি ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দলটির কোচ ছিলেন। পরে ২০০৪ সালে তিনি পাকিস্তান দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। কোচ হিসেবে যোগ দিয়েই পাকিস্তানকে ভারতের সঙ্গে ৪-২ ওয়ানডে সিরিজ জেতান। পাকিস্তান জাতীয় দলের জন্য অবদান রাখার জন্য দেশটির উচ্চপদস্থ বেসামরিক পুরস্কার সিতারা-ই-ইমতিয়াজে সম্মানিত করা হয় তাকে। আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে ২০০৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তান অপ্রত্যাশিতভাবে বিদায় নেয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর উলমার মারা যান। দিনটি ছিল ১৮ মার্চ।



৩. গ্যারি কারস্টেন : গ্যারি কারস্টেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ক্রিকেটার। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ডটি কারস্টেনের দখলে। তার করা অপরাজিত ১৮৮ রানের ইনিংটিই এখনো পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোচ ক্যারিয়ার শুরু করেন ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে যোগ দিয়ে। ২০০৮ সালে ১ মার্চ তিনি ভারতীয় দলে কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত দলটির কোচ ছিলেন তিনি। তিনি দায়িত্বে থাকার সময় ভারত দল ২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও ২০০৯ সালে কম্পেক কাপ জেতে। এ ছাড়া ২০০৮ সালের এশিয়া কাপ ও কিটপ্লে কাপের ফাইনাল খেলে। পরে ২০১১ সালের ৫ জুন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচ নিযুক্ত হন এবং ২০১৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। কোচিং ক্যারিয়ারের পাশাপাশি কারস্টেন প্যাডি আপটন ও ডেল উইলিয়ামসকে সঙ্গে নিয়ে পারফরম্যান্স জোন নামে একটি কোম্পানি খুলেছেন। 



৪. জন রাইট : জন রাইট নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন খেলোয়াড়। পেশাদার ক্রিকেট কোচ জন রাইটের নিক নাম শ্যাক (Shake)। খেলোয়ড়ি জীবনে তিনি নিউজিল্যান্ড দলের সফল ওপেনিং ব্যাটসম্যান ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন কেন্ট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের দায়িত্ব নিয়ে। ২০০০ সালে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। রাইট কোচের দায়িত্বে থাকার সময় ভারত দল খুব উন্নতি করে এবং ২০০৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ফাইনালে ওঠে। এ ছাড়া তার সময়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজ জেতে এবং কলকাতার সেই ঐতিহাসিক টেস্ট জিতে ভারত। যে টেস্টে ফলোয়ানে পড়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষ্মণের অপরাজিত ২৮১ রানেরে সুবাদে ভারত শেষ পর্যন্ত টেস্ট জিতে নেয়। রাইট ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের কোচ ছিলেন। পরে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে আইপিএলের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পান।



৫. ডেভ হোয়াইমোর : ডেভ হোয়াইটমোর অস্ট্রেলিয়ান প্রাক্তন ক্রিকেটার। তিনি খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর পেশাদার কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়েন। তার খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার খুব বেশি বড় না।অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাত্র সাতটি টেস্ট ও একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। তিনি শ্রীলংকা জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। দুই দফা তিনি শ্রীলংকা দলের দায়িত্ব পালন করেন এবং তার কোচিং সময়ে ১৯৯৬ সালে শ্রীলংকা ওয়ানডে ওয়ার্ল্ড কাপ জেতে। পরে  ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার তত্ত্বাবধানেই ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচে জয়লাভ করে। এরপর ২০১২ সালের ৪ মার্চ তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০১৪ সালে মঈন খান কোচ হিসেবে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত দলটির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দুই বছর তার তত্ত্বাবধানে থাকাকালে পাকিস্তান দল ২০১২ সালে এশিয়া কাপ জেতে। এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ৩১ মে পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে জাতীয় দলের প্রধান কোচ ছিলেন তিনি। ইন্টারন্যাশনাল কোচিং ক্যারিয়ারের পাশাপাশি তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সালের শেষ পর্যন্ত আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মার্চ ২০১৭/রুহুল/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়