ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

যেভাবে বাঁচলো এরিকসনের জীবন

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ১৩ জুন ২০২১   আপডেট: ০৮:২৪, ১৪ জুন ২০২১
যেভাবে বাঁচলো এরিকসনের জীবন

ঘরের মাঠে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ডেনমার্কের প্রথম ম্যাচ। দেশের ফুটবল দলকে সমর্থন দিতে কোপেনহেগেনের পারকেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার ডেনিশ। কিন্তু বিরতির আগমুহূর্তের ঘটনা নিস্তব্ধ করে দিলো গোটা মাঠকে। সবার চোখ বেয়ে অঝোরে পড়ছে অশ্রু। তাদের সামনেই খেলোয়াড়দের তৈরি মানববর্মের মাঝে চলছে মাঠেই জ্ঞান হারানো ক্রিস্টিয়ান এরিকসনের জীবন বাঁচানোর লড়াই। শেষ পর্যন্ত সতীর্থ ও চিকিৎসকদের দ্রুততম সহযোগিতা বৃথা যায়নি। বেঁচে গেছে এরিকসনের জীবন।

৪২ মিনিটে টাচলাইনের একটু সামনে বল রিসিভ করার আগমুহূর্তে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান এরিকসন। ঘটনার হতবিহ্বলতার মধ্যেও একটুও সময় নষ্ট না করে চলে তাকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা। এরিকসন অজ্ঞান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের রাস্তা পরিষ্কার করেন ডেনিশ অধিনায়ক সিমন কায়ের। দ্রুত ছুটে যান চিকিৎসাকর্মীরাও। ডেনমার্কের জাতীয় দলের চিকিৎসক মর্টেন বোয়েসেন বুঝতে পারেন, এক সেকেন্ডও নষ্ট করা যাবে না।

বোয়েসেন বলছেন সেই সময়ের অনুভূতির কথা, ‘সে নিশ্বাস নিচ্ছিল। আমি তার হৃদস্পন্দনও অনুভব করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে পরিস্থিতি পাল্টে গেলো। সবাই দেখেছেন যে আমরা তাকে সিপিআর দিতে শুরু করলাম।’

পরের ১০ মিনিট ছিল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসের সবচেয়ে আতঙ্কিত মুহূর্ত। বেশ কয়েকজন চিকিৎসাকর্মী চেস্ট কম্প্রেশন দিয়ে এরিকসনকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। ওই সময় সতীর্থরা কান্না করছিলেন। গ্যালারিতেও চলছিল প্রার্থনা। সবার দৃষ্টি থেকে এরিকসনকে আড়াল করতে সতীর্থরা তাকে ঘিরে রেখেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত নিস্তব্ধতা ভেঙে পারকেন স্টেডিয়ামে ভর করে উল্লাস। এরিকসনের অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর তাকে স্ট্রেচারে করে নেওয়া হয় হাসপাতালে। বোয়েসেন বলেছেন, ‘চিকিৎসাকর্মী ও অন্য স্টাফদের কাছ থেকে অনেক, অনেক দ্রুত সহযোগিতা এসেছিল। তাদের সহযোগিতায় আমাদের যা করণীয় ছিল সেটাই করেছি। আমরা ক্রিস্টিয়ানকে ফেরাতে পেরেছি।’

শনিবার রাতেই জ্ঞান ফিরে পান এরিকসন। আছেন কোপেনহেগেন হাসপাতালে। সেখান থেকে তার জ্ঞান ফেরার খবর পেয়ে স্টেডিয়ামের দর্শকরা আনন্দে ফেটে পড়ে। ফিনল্যান্ডের সমর্থকরা ‘ক্রিস্টিয়ান, ক্রিস্টিয়ান’ চিৎকার করতে থাকেন। জবাবে ডেনিশ সমর্থকরাও চিৎকার করেন, ‘এরিকসন, এরিকসন’।

শুরুতে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও উয়েফা পরে ম্যাচ চালিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বৈঠক করে। তারা শনিবার রাতেই কিংবা রোববার দুপুরে ম্যাচ খেলার প্রস্তাব দেয়। এরিকসন ভিডিও কলের মাধ্যমে সতীর্থদের ম্যাচ শেষ করার আহ্বান জানালে তারা খেলতে রাজি হন। ম্যাচটি ফিনল্যান্ডের কাছে তারা হারে ১-০ গোলে।

কিন্তু ফলের চেয়েও যেটা সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার তা হলো আবার খেলোয়াড়দের মাঠে নামা। কোচ ক্যাস্পার হুলম্যান্ড বলেছেন, ‘এই ধরনের অনুভূতি নিয়ে কেউ খেলতে পারে না। আমরা যে চেষ্টা করেছি তা অসাধারণ।’

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ