ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

১০ মিনিটেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৭, ১৩ অক্টোবর ২০২১  
১০ মিনিটেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার

আর মাত্র দুই মিনিট! মালদ্বীপের মালের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আর দুটা মিনিট পার করে দিতে পারলেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ১৬ বছর পর ফাইনালে পা দিতো বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে একমাত্র সাফজয়ী দলটি এবার দারুণ স্বপ্ন নিয়ে পর্যটনের শহরে পা রেখেছিল। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শুরু, তারপর ভারতের সঙ্গে ড্র। স্বপ্নটা আরো গাঢ় হতে শুরু করল, যাতে মালদ্বীপ একটু ব্যঘাত ঘটিয়েছিল। কিন্তু নেপালের বিপক্ষে শুরুতেই জাল কাঁপিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।

‘ইতিহাস গড়ার পথে বাংলাদেশ’- ধারাভাষ্যকক্ষে এমনটাই বলাবলি হচ্ছিল। হঠাৎ করে রাকিব হোসেনের অযৌক্তিক ব্যাকপাস বাংলাদেশের বক্সের দিকে ছুটল। নেপালি ফরোয়ার্ড নবযুগ শ্রেষ্ঠাকে এগিয়ে আসতে দেখে বক্সের বাইরে বেরিয়ে এলেন আনিসুর রহমান জিকো। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় শট নিতে গেলেন, মনের অজান্তে হাত প্রসারিত হলো বাংলাদেশি গোলকিপারের, ততক্ষণে বল বিপদমুক্ত করলেন। কিন্তু তার হাত দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটি চোখ এড়ায়নি রেফারির। আস্তে করে লাল কার্ড বের করলেন। ব্যস, বাংলাদেশের সর্বনাশের সূচনা তখনই। গোলপোস্টে দুর্গ হয়ে থাকা গোলকিপারকে তো হারালই, গোলও খেল শেষ দিকে গিয়ে। ড্র ১-১ গোলে, না হেরেও বিদায়ের পথ দেখল সেই নেপালের কাছেই, গতবার তাদের কাছে হেরেই গ্রুপ পর্বে বিদায় নিয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।

৭৮ মিনিট পর্যন্ত দুরন্ত সব সেভে বাংলাদেশকে ফাইনালে তোলার স্বপ্ন দেখানো জিকোই হয়ে গেলেন খলনায়ক। ১০ জনের দল নিয়ে ভারতের বিপক্ষে সমতা ফেরাতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে বাকি সময় লড়াই করতে থাকে তারা। কিন্তু আত্মবিশ্বাসে যে ধাক্কা লাগে, তা তৈরি করে বড় ক্ষত। আর ১২ মিনিট কোনোমতে পার করার চিন্তা করছিল বাংলাদেশ, ঠিক তখনই ভুল করে বসল তারা প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে বক্সের মধ্যে ফাউল করে। হেড করতে লাফিয়ে ওঠা অঞ্জন বিষ্ঠাকে হালকা ধাক্কা মারেন সাদ উদ্দিন। আরেক ফরোয়ার্ডের ভুলে পেনাল্টি পায় নেপাল।

বদলি গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম রানা ভেবেচিন্তে বুঝে নিয়েছিলেন অঞ্জলের পেনাল্টি কিক। বল যেদিকে আসছিল, সেই ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু বল তার গায়ের উপর দিয়ে জড়ায় জালে। ৮৭ মিনিট পর্যন্ত ফাইনালের যে স্বপ্ন বাংলাদেশ দেখছিল, তা জলাঞ্জলি দিতে হয় ৮৮ মিনিটের ওই গোলে।

নেপালের জন্য দরকার ছিল এক পয়েন্টের। সেটা নিশ্চিত হলেও আক্রমণাত্মক ছিল বাকি সময়। এই সুযোগে জয়সূচক গোলের কোনো মুহূর্ত তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। যেখানে দরকার ছিল ৩ পয়েন্টের, সেখানে ১ পয়েন্ট নিয়ে শেষ করে তারা।

অথচ কী দারুণ শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশের। দারুণ গতিতে এগোতে থাকা রাকিবকে বক্সের বাঁ প্রান্তে ফাউল করেন গৌতম। ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়ার ডান পায়ের শট নেপালি খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে গোলমুখের সামনে যায়। ৯ মিনিটে সুমন রেজা দারুণ হেডে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন। ১৭ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে জামালের ভাসিয়ে বল ভাসিয়ে দেন বক্সে, ইব্রাহীম ও সাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন সুজল। পাঁচ মিনিট পর দ্বিতীয় গোলের দারুণ সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। বল দখলের লড়াইয়ে দিনেশ রাজবংশীকে ফাঁকি দিয়ে দারুণ চেষ্টায় ডান দিক দিয়ে নেপালের বক্সে ঢুকে পড়েন সুমন। বক্সে তার পাসের অপেক্ষায় ইব্রাহীম ছিলেন। কিন্তু তাকে পাস দেননি সুজন। নিজেই শট নেন এবং মাটি গড়ানো শট সহজে ধরে ফেলেন নেপালি গোলকিপার চেমজং।

২৩ মিনিটে অঞ্জনের ফ্রি কিক লাফিয়ে গোলবারের উপর দিয়ে পাঠিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের লিড ধরে রাখেন জিকো। ৩৪ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে সুজলের শট তিনি কোনোমতে ধরে নেন, হাত ফসকে যেতে লেগেছিল বল। বিরতিতে যাওয়ার আগে কর্নার পায় বাংলাদেশ। কিক নে জামাল। নেপালি খেলোয়াড় সুজল বক্সে থেকে হেড করে বাইরে বের করে দেন। তবে বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের ফিরতি শট ধরে ফেলেন গোলকিপার কিরণ চেমজং।

বিরতির পর প্রথম সুযোগ তৈরি করে নেপালি। ফ্রি কিক থেকে আয়ুশের শট ৪৮ মিনিটে বাংলাদেশি গোলকিপার ঠাণ্ডা মাথায় পাঞ্চ করে ফেরান। পাঁচ মিনিট পর আবার ফ্রি কিক পায় নেপাল। আয়ুশের কিক থেকে সতীর্থরা কিছুক্ষণ বল দেওয়া নেওয়ার পর অনন্ত তামাংয়ের হেড পাস থেকে বিশাল রায়ের হেড দারুণভাবে রুখে দেন জিকো।

৫৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে যায় বাংলাদেশ। সুজলকে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে পড়েন সুজন। তার নিচু শট দারুণ দক্ষতায় বিপদমুক্ত করেন চেমজং। ম্যাচের ঘড়ির কাঁটা ঘণ্টায় পৌঁছাতে ডান দিক থেকে গৌতমের ক্রস লাফিয়ে সেভ করেন জিকো। চার মিনিট পর বাংলাদেশি গোলকিপারের দুর্দান্ত সেভ। ফ্রি কিক থেকে খেলা বলে সতীর্থের ক্রসে নবযুগের নিচু হেড দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন জিকো। ৭০ মিনিটে গৌতমের ক্রস থেকে রোহিত চাঁদের হেড গোলবারের কয়েক ইঞ্চি পাশ দিয়ে বল চলে গিয়ে নেপালকে হতাশ করে।

৮ মিনিট পর সেই দুঃস্বপ্নের সূচনা। ম্যাচের নায়ক হতে যাওয়া জিকো দেখলেন লাল কার্ড, তারপর পেনাল্টি থেকে গোল খাওয়া। অল্পের জন্য স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি যেতে না পারার হতাশা রূপ নিলো ক্ষোভে। যার দুটি সিদ্ধান্তে বিপত্তি, সেই রেফারিকে ঘিরে ধরে যা প্রকাশ করলেন তপু বর্মণরা। আর অস্কার ব্রুজোনের সেদিকে যেন খেয়ালই নেই, হতাশ মনে হেঁটে চলে গেলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। বসুন্ধরা কিংসকে দুইবার লিগ শিরোপা জেতানোর সাফল্য যে জাতীয় দলের কোচিংয়ে পেলেন না তিনি। বড় পুরস্কারই হয়তো অপেক্ষা করছিল তার জন্য, সেটাও অধরা থেকে গেল বাংলাদেশের সাফ শিরোপার মতো। ৭৮ মিনিট আর ৮৮ মিনিট- ১০ মিনিটের ধাক্কায় ভেঙে গেল স্বপ্ন।

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়