ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রূপকথার জয়ে নতুন সৌধে বাংলাদেশ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২   আপডেট: ২০:১৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২
রূপকথার জয়ে নতুন সৌধে বাংলাদেশ

মিরাজ-আফিফ দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন

সাকিব আল হাসান সব সময়ই নতুন ম্যাচ উইনার তৈরির কথা বলতেন। বলতেন, তাদের ছাপিয়ে যেদিন নতুন ম্যাচ উইনার বেরিয়ে আসবে সেদিনই বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাবে। তাদের বলতে নিজের, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর কথাই বুঝাতেন তিনি। বাংলাদেশের সুপারস্টার সেই দিনটি হয়তো চট্টগ্রামের মাটিতে বসে দেখেই ফেললেন। নিজের নিষ্প্রভ দিনে এমন রূপকথার জয়ের অপেক্ষাতেই হয়তো ছিলেন। যেখানে আফগানিস্তান বধের নায়ক হয়ে রইলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন।

প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান প্রায় সময়ই বাংলাদেশকে ভয় দেখায়। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীরা দোর্দণ্ড প্রতাপ ছড়িয়ে এলোমেলো করে দেন। নতুন সেনানী ফজল হক ফারুকী স্বাগতিক শিবিরে এমনই ধাক্কা দিয়েছিলেন যে, স্টেডিয়ামের দর্শক কেন, টিভির সামনে বসা ক্রিকেটপ্রেমীদেরও বিরক্তি ধরে যায়।

মাত্র ২১৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৫ রানেই নেই বাংলাদেশের ৬ উইকেট। বাঁহাতি পেসার ফারুকী ১০ বলের ব্যবধানে তুলে নেন ৪ উইকেট, প্রথম দুটি লিটন ও তামিমের। আম্পায়ারকে চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ নিয়ে ফেরান দুই ওপেনারকে। পরবর্তীতে মুশফিককে ভেতরে ঢোকানো বলে এলবিডব্লিউ ও একই ডেলিভারিতে অভিষিক্ত ইয়াসির আলী রাব্বির স্টাম্প উপড়ে ফেলেন। বাঁহাতি পেসারের গতি, বৈচিত্র্য বুঝে ওঠার আগেই পথ হারায় স্বাগতিকরা। 

খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে এমন পরিস্থিতিতে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ বেশ কয়েকবারই বাংলাদেশকে হাসিয়েছেন। কার্ডিফে নিউ জিল্যান্ডকে হারাতে তাদের জোড়া সেঞ্চুরির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু আজ দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান উইকেট উপহার দিয়ে আসেন যথাক্রমে মুজিব ও রশিদকে। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডের দিকে তখন তাকানোও যাচ্ছিল না, ৪৫ রানে ৬ উইকেট! 

সেখান থেকে মিরাজ ও আফিফ জীবন বাজি রেখে যোদ্ধার মতো লড়ে জীবনের সেরা দুই ইনিংস খেললেন এবং বাংলাদেশকে উপহার দিলেন ৪ উইকেটে রূপকথার জয়। সঙ্গে নতুন এক সৌধে নিয়ে গেলেন বাংলাদেশকে। যেখানে বাংলাদেশ পেল নতুন দুই ম্যাচ উইনার। যারা আগামী দিনের কাণ্ডারি, সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের উত্তরসূরি। 

জয় নিশ্চিতের পর আফিফ একদমই শান্ত, পরিশ্রান্ত। মিরাজ দুইবার শূন্যে ঘুষি ছুড়ে আলিঙ্গন করে নেন সঙ্গীকে। দুজনের সপ্তম উইকেটে জুটির দ্বিতীয় বিশ্বরেকর্ড ১৭৪ রান জ্বলজ্বল করছিল সেই স্কোরবোর্ডেই। কল্পনাকে ছাড়ানো জয়! অসাধারণ তাদের লড়াই। যেন ২২ গজের গ্ল্যাডিয়েটর। সত্যি তো, নাকি সব বিভ্রম!

ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ফিফটি তুলে ৯৩ রানে অপরাজিত আফিফ। মিরাজ দ্বিতীয় ফিফটি তুলে অপরাজিত সর্বোচ্চ ৮১ রানে। চার ছক্কা ও বল খেলায় দুজন সমান তালেই এগিয়েছেন। বাঁহাতি আফিফ ১১৫ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কা হাঁকিয়েছেন। মিরাজ ১২০ বলে ৯ বাউন্ডারিতে সাজান ইনিংসটি। 

অথচ সকাল ১১টায় শুরু হওয়া ম্যাচে মুদ্রার ওপিঠ দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। দুর্দান্ত বোলিং ও ক্রমাগত চাপে আফগানিস্তানকে উড়তে দেননি মোস্তাফিজ, শরিফুল, মিরাজ, সাকিবরা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বোলিংয়ে সুর তাল লয়ে ছিল একই ছন্দ। তাতে ব্যাটসম্যানরাও ছিলেন দিশেহারা। নিয়মিত উইকেট নেওয়ার সঙ্গে তাদের রান নেওয়ার পথ আটকে ১৭৫ বলই ডট দেন বোলাররা। 

আফগানদের হয়ে একমাত্র ফিফটি পেয়েছিলেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। পাঁচে নেমে ৮৪ বলে ৬৭ রান করেন ৪ চার ও ২ ছক্কায়। ইনিংসের মধ্যভাগে নেমে শেষ পর্যন্ত তার একার লড়াইয়ে আফগানিস্তান মাঝারি মানের পুঁজি পেয়েছিল। গোটা ইনিংসে একটিই পঞ্চাশোধ্র্ব জুটি পেয়েছে অতিথিরা। নবী ও জাদরান ৬৩ বলে ৬৩ রান তুলে দলের চাহিদা পূণ করেন। নবী (২০) তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার হলে ভাঙে তাদের প্রতিরোধ।

শেষ দিকে একই ওভারে গুলবাদিন নাইব ও রশিদ খানকে সাকিব এক ওভারে ফেরালে আফগানিস্তানের বড় সংগ্রহের আশা শেষ হয়ে যায়। মোস্তাফিজ শুরুতে রহমানউল্লাহ গুরবাজের উইকেট নেওয়ার পর লেজের দুই ব্যাটসম্যান মুজিব ও ইয়ামিনকে আউট করেন। ৩৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজ ছিলেন বাংলাদেশের সেরা বোলার। ২টি করে উইকেট নেন তাসকিন, সাকিব ও শরিফুল। ব্যাটিংয়ে দ্যুতি ছড়ানোর আগে বল হাতে মুগ্ধ করেন মিরাজ। ১০ ওভারে ৩ মেডেনে মাত্র ২৮ রান দেন। উইকেটশূন্য থাকলেও তার বোলিংয়ে ধার ছিল অসাধারণ।

বোলাররা এগিয়ে দিয়েছিলেন শুরুতে। ব্যাটিংয়ে টপ ও মিডল অর্ডারে ছন্দপতন হলেও মিরাজ ও আফিফের ইতিহাস গড়া দিনে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।

এই জয়, এই বীরত্বগাথা স্বপ্নডানা ভর করবে আফিফ ও মিরাজকে। নিয়ে যাবে অনেক দূর, হয়তো দৃষ্টিসীমার বাইরে। এমন ম্যাচ, এমন জয় শুধু বাংলাদেশের সমর্থকদের নয়, দুনিয়ার সব ক্রিকেট সমর্থকেরও।

চট্টগ্রাম/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়