ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

উমেশ-সাইনিদের খেলে সবকিছু সহজ মনে হচ্ছিল: জাকের

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫১, ৮ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ২০:৫৬, ৮ মার্চ ২০২৩
উমেশ-সাইনিদের খেলে সবকিছু সহজ মনে হচ্ছিল: জাকের

টানা তিন সেঞ্চুরির পর এক ফিফটি। বড় দৈর্ঘ্যের ফ্র‌্যাঞ্চাইজি আসর বিসিএলে স্রেফ উড়েছেন জাকের আলী। ৪৯২ রান নিয়ে হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা ব‌্যাটসম‌্যান। সঙ্গে পেয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও। শিরোপার স্বাদ পাননি তাতে মুখের হাসিটা কিছুটা ম্লান। তবে দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল পাওয়ায় আনন্দিত উইকেটরক্ষক ব‌্যাটসম‌্যান। মুখোমুখি হয়ে তরুণ ক্রিকেটারের ঈর্ষণীয় পারফরম‌্যান্সের ভেতরের গল্প জানার চেষ্টা করেছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া প্রতিবেদক ইয়াসিন হাসান।

দারুণ একটা বিসিএল গেল, নিশ্চয়ই খুশি?
জাকের আলী:
এরকম রান করতে পারাটা আসলেও ভালো লাগার ব্যাপার। সেজন্য খুশি। চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে মনে হয় খুশিটা আরও বেশি হতো। 

লিগে তিন ম্যাচে তিন সেঞ্চুরি, এই পারফরম্যান্সের রহস্য কি জানতে চাইবো?
জাকের আলী:
রহস‌্যের কিছুই নেই। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি ভালো খেলার। অনেক পরিশ্রম করেছি। লংগার ভার্সনে বড় রান হচ্ছিল না অনেকদিন ধরে। ৬০-৭০ রানের ইনিংস খেলছিলাম। ১৪-১৫টা ফিফটি ছিল। কিন্তু সেঞ্চুরি হচ্ছিল না। বড় রান করার জন্য কাজ করছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা, ‘এ’ দল ও বাংলা টাইগার্স ক্যাম্পে থাকাকালীন অনেকগুলো ম্যাচ খেলতে পেরেছি। শেষ ১৫ মাসে আমি প্রায় ২৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছি। 

আপনার শেষ ৫ ইনিংসে ৩টা সেঞ্চুরি, একটি ফিফটি। এর আগে ৩৭ ইনিংসে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না, রাতারাতি তো পরিবর্তন হয়নি অবশ্যই। তবে কিভাবে নিজেকে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিণত করেছেন?
জাকের আলী:
রাতারাতি পরিবর্তন হয়নি তা আপনিই বলে দিলেন। সত‌্যি বলতে, অনেক দিন ধরে কাজ করছিলাম। লিস্ট ‘এ’ তে দুটি সেঞ্চুরি হয়েছিল। কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট যেটা সবচেয়ে বেশি ভালো খেলি সেটায় কোনো সেঞ্চুরি নেই। ওটা নিয়ে অনেক কাজ করছিলাম। 

হাই ইনটেনসিটির ম‌্যাচ যেমন, ‘এ’ দলের ম‌্যাচ খেলবেন, জাতীয় দলে খেলার আগে যখন আন্তর্জাতিক বোলারদের মুখোমুখি হবেন তখন কাজ সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে আমি ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে খেলেছি। সেখানে নবদ্বীপ সাইনি, উমেশ যাদবের মতো বোলার ছিল। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েও ওদের জাতীয় দলের একাধিক বোলারকে পেয়েছি। ওদের বিপক্ষে খেলার কারণে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছিল। বিসিএলের প্রথম রাউন্ডের ম‌্যাচটা খেললাম ভারতের বিপক্ষে খেলার পরপরই। উমেশ, সাইনিদের খেলার কারণে বিসিএল আমার কাছে সহজ মনে হচ্ছিল। আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। ওই অভিজ্ঞতাটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। আপনি যখন একটা বড় রান করে ফেলবেন তখন আপনার ক্ষুধাটা বেড়ে গেছে। আমারও ক্ষুধাটা বেড়ে গেছে। এইতো। মনোযোগী ছিলাম। তাই সফল হয়েছি।  
 
সেঞ্চুরি না করলে কেউ গোণায় ধরে না এই ভাবনার সঙ্গে কি আপনি একমত?
জাকের আলী:
গোণায় ধরাটা একটু বাজে শোনায়। আপনার যদি নিজেকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে হয় অবশ‌্যই আপনাকে বড় রান করতেই হবে। আমি কয়েকটি সেঞ্চুরির আগে আমাকে সবাই ভালো খেলোয়াড় বলতো কিন্তু আমি সেঞ্চুরির বাধাটা টপকাতে পারছিলাম না। আমি হয়তোবা গড়পড়তা রান করতাম। কিন্তু সেঞ্চুরি পাওয়ার পর দেখেন সবাই অন‌্যরকম একটা নজর দেওয়া শুরু করলো। ঘরোয়া ক্রিকেটে যদি বড় রান করে অভ‌্যস্ত থাকেন তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে যেতে সহজ হয়ে যায়। 

তাহলে তো বলাই যায়, সেঞ্চুরিই সবকিছু। যার কারণে আপনি এখন লাইমলাইটে?
জাকের আলী:
এখন তো বলাই যায় (হাসি)। এখন বিষয়টা হচ্ছে, বড় রান না করলে কেউ নির্বাচন করবে না। তখন তো আপনারাই বলতে পারেন, যে ছেলের সেঞ্চুরি নেই তাকে কেন নেওয়া হলো। এজন‌্য সেঞ্চুরি লাগবেই। এই মানসিকতা পরবর্তীতে কাজে লাগে। 

ব্যাটিংয়ে আপনার শক্তির জায়গা কোনটা? 
জাকের আলী:
আমি খুব কঠিন পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডা রাখতে পারি নিজেকে। খুব স্বাভাবিক থাকতে পারি চাপের পরিস্থিতিতে। ওই সময়ে যেতে স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারি। কোনো তাড়াহুড়ো করি না। সময় নিয়ে ম‌্যাচটা তৈরি করতে পারি। যতই উইকেট পড়ুক, যত চাপ থাক আমি একটা দিকে আগলে থাকতে পারি। এ বছর দেখবেন, আমাদের সেন্ট্রাল জোনের সব ব‌্যাটসম‌্যানরা একটু স্ট্রাগল করেছে। আমি একটা সাইডে প্রতিটি ম‌্যাচে আগলে রেখেছিলাম।  

বাংলাদেশ দলে তো এখন উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানের ছড়াছড়ি। জাতীয় দলে যেতে হলে আপনাকে অনেকের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। এসব প্রতিযোগিতাকে কিভাবে দেখেন?
জাকের আলী:
আমি বিশ্বাস করি, আমি যদি পারফরম‌্যান্স করতে থাকি তাহলে জায়গা এমনি এমনি হয়ে যাবে। নির্বাচকের কাজ বাকিটা। তারাও কোনো না কোনো কারণে সেরা পারফর্মারকেই দলে নেবে। উনারাই দলে জায়গা ফিট করে দেবেন। আমি নিশ্চিত যারা উইকেট কিপার ব‌্যাটসম‌্যান আছে তারাও এভাবে চিন্তা করে। 

এখন ক্রিকেট যেভাবে এগিয়েছে শুধু স্কিলের ওপর সবাই ভরসা করে না। মানসিক শক্তির ওপর অনেক জোর দিচ্ছে অনেকেই। মাঠে নেমে আপনি হারবেন না এমন মানসিকতা তৈরি করা করার কাজটা কি কঠিন?
জাকের আলী:
এখন মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়াটা সম্পূর্ণ নিজের উপর। আপনি নিজেকে তৈরি করবেন, নিজেকে কিভাবে সময় দেবেন। বিসিএলের চলার সময়ই, আমি যখন বড় রান করেছি আমার ক্ষুধা বেড়ে গেছে। আমার যে করেই হোক আরও বড় কয়েকটা রান করতে হবে। তখন ম‌্যাচের পরও কেমন করে যেন, সুইচ অন ছিল। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলি, সামনের ম‌্যাচে এরকম খেলতে হবে। ওরকম করতে হবে। অনুশীলনে এই জায়গায় ঝালিয়ে নিতে হবে।’ এগুলো সব সময় কাজ করবে তা না। কিন্তু প্রক্রিয়ায় থাকলে আপনি সফল হবেনই। 

সামনের পাঁচ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? 
জাকের আলী:
এতো লম্বা চিন্তা কখনোই করা হয়নি। সামনে ঢাকা লিগ আছে। আবাহনীর হয়ে খেলবো। সেখানেই মনোযোগ দিচ্ছি। ব‌্যাটিংয়ে রান করতে চাই। উইকেট কিপিংয়ে অবদান রাখতে চাই। 

আপনার লড়াই, প্রেরণার মূল উৎস কে?
জাকের আলী:
আবার পরিবার। আমার মা, ভাই তিনিও ক্রিকেটার ছিলেন। আমার বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু তিনিও আমাকে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন লড়াই করার। 

মাঝের সময়টায় আপনি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিলেন। জীবনে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে আসার এই সফরটা কঠিন গিয়েছিল...
জাকের আলী:
মাঝে দুই বছর আমি ক্রিকেটেই ছিলাম না। দুইবার আমি খুব বাজেভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এক বছর বাবার মৃত্যুর জন‌্য হারিয়ে ফেলি। তিনটা বছর প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে আমি খুব শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। নিজেকে ক্রিকেটে ফেরানোর তাড়ণাতেই আমি আবার লড়াই শুরু করি।

ব্যাটিংয়ে প্রিয় শট?
জাকের আলী:
চারদিনের ম‌্যাচে আমি স্ট্রেইট ড্রাইভ খুব পছন্দ করি। তবে সম্প্রতি আমি পুল শট খুব উন্নতি করেছি। পুল শটে আমি অনেকগুলো রানও করেছি। কাজ করছি আরও কিছু শটে উন্নতি করার। 

প্রিয় ব্যাটসম্যান?
জাকের আলী:
আমার ক্রিকেটিং আইডল মুশফিকুর রহিম। উনাকে দেখে আমি বড় হয়েছি। আমিও বিকেএসপিতে ছিলাম। উনার সবকিছুই আমার ভালো লাগে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়