ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

বিদায় রাগিনী বাজিয়ে বিশ্বকাপের অন্তিম লগ্নে

ইয়াসিন হাসান, পুনে থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১০ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২৩:০৫, ১০ নভেম্বর ২০২৩
বিদায় রাগিনী বাজিয়ে বিশ্বকাপের অন্তিম লগ্নে

বাংলাদেশের আরেকটি বিশ্বকাপের ব্যর্থ মিশন শেষ হবার পথে। তিনের গেরো ছুটিয়ে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে যে দলটি ভারতের গৌহাটিতে পা রেখেছিল ২৭ সেপ্টেম্বর, ঠিক ৪৬ দিন পর শনিবার সেই পথ যাচ্ছে থেমে পুনেতে।

আসাম থেকে মহারাষ্ট্র। লম্বা সময়ে নানা পথ অলি-গলি ঘুরে, নানা ঘটনা-সমালোচনার জন্ম দিয়ে, এক আকাশ ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে, স্বপ্নের সলিল সমাধি দিয়ে শেষ হচ্ছে ভারত বিশ্বকাপের মিশন।

শেষ চার আসরে তিন জয়ের অর্জন মান বাঁচিয়েছিল। সেমিফাইনাল তো দূরের কথা, এবার ৮ ম্যাচে কেবল ২ জয়ে নিজেদের সামর্থ্যের পাশে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। শেষ ম্যাচে প্রবল শক্তিধর অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে না পারলে নিকট অতীতে নিজেদের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাটে সবচেয়ে বাজে সময় কাটানোর অপবাদও নিতে হবে।

পুনের সবুজ গালিচায় এই লড়াইয়ের সঙ্গে আবেগেও ভেসে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের অন্তিম লগ্নে বিদায় রাগিনী বাজছে লাল-সবুজের ড্রেসিংরুমে। দলের একাধিক সিনিয়রের শেষ বিশ্বকাপের ম্যাচ। সঙ্গে একাধিক কোচিং স্টাফদের শেষ অ্যাসাইনমেন্ট হওয়ায় ড্রেসিংরুমে বিচ্ছেদের আবহে আচ্ছন্দ।

সেঞ্চুরিয়ান থেকে পুনে। কিংবা ঢাকা থেকে পুনে। অ্যালান ডোনাল্ড ও শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরনের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় দলের সফর পুনেই সমাপ্তি। ২০২২ সালের মার্চে সেঞ্চুরিয়ানে বাংলাদেশের পেসারদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ডোনাল্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের সাদা বিদ্যুৎ খুব অল্পদিনেই বাংলাদেশের পেসারদের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন। তাসকিন, ইবাদত, মোস্তাফিজ, হাসান মাহমুদের নিয়ে তৈরি করেছেন পেস ব্রিগেড। যারা বেশ ভালো দাপট দেখাচ্ছে ২২ গজে। তাইতো নিজের বিদায়ী বার্তায় তাদের উদেশ্যে বলেছেন, ‘এই পেস বোলিং গ্রুপটার প্রতি আমার এত সম্মান, তারা আমার বন্ধুর মতন।’

ঠিক একই অবস্থা শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরনের। ২০১৮ সালে জাতীয় দলের অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে ক্রিকেটারদের খুব কাছের মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন। ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের নেপথ্যে ছিলেন এই ভারতীয় অ্যানালিস্টও। ২৫ টেস্ট, ৭৫ টি-টোয়েন্টি ও ৮৩ ওয়ানডেতে দায়িত্ব পালনের পর শ্রী ছাড়লেন বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম। শুধু তারাই নয়, পুনের এই মাঠে বিদায় হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের কোচিং স্টাফদের আরও একাধিক সদস্যের। রঙ্গনা হেরাথ কিংবা শেন ম্যাকডরমট চুক্তি নবায়ন না করলে লাল-সবুজের ড্রেসিংরুমের শেষ প্রহর গুনছেন তারাও।

জল্পনা চলছে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে। শুধু বিশ্বকাপ নয়, ওয়ানডে ক্যারিয়ার তারা থামিয়ে দিতে পারেন এমন গুঞ্জন চলছে। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘দুই ভায়রার’ আপাতত এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলা মুশফিক ও চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলা মাহমুদউল্লাহর শেষ ম্যাচ হতে যাচ্ছে তা মোটামুটি নিশ্চিত। আরও চার বছর ওয়ানডেতে তাদের দেখা যাবে না তা বলাই যায়। তবে এসব নিয়ে কোচিং স্টাফদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি বলে দাবি করলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।

‘আমি ঠিক নিশ্চিত নই তারা আগামীকাল শেষ বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে কিনা। তবে সত্যি বলতে, তারা কিন্তু এখনো ফিট এবং পারফর্ম করছেন। সিদ্ধান্তটা তাদের ব্যক্তিগত এবং তারাই নেবে। এজন্য বলতে পারছি না তাদের শেষ বিশ্বকাপ কিনা। তবে তাদের ক্রিকেটে তাদের সফর বেশ দারুণ কেটেছে। মুশফিক ও সাকিব পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছে। মাহমুদউল্লাহ চারটি। অসাধারণ। ক্রিকেট খেলার শুরুতে কেউই পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখে না। তারা বাংলাদেশের ক্রিকেট স্বল্প সময়ের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার। তারা যদি ছেড়ে দিতে চান তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পালাবদল শুরু হবে।’

এতো কিছুর ভিতরেও বাংলাদেশকে শেষ ম্যাচে চোখ রাঙানি দিচ্ছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির হাতছানি। বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলে আটে থাকতে পারলে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশের ভাগ্য কেবল নিজেদের ওপরই নির্ভরশীল নয়। অস্ট্রেলিয়াকে হারালে নিজেদের নিরাপদ জায়গায় রাখতে পারবেন শান্ত, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা। সঙ্গে বাংলাদেশের প্রার্থনা করতে হবে ভারতের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের হার ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হার। বাংলাদেশের বড় ব্যবধানে না হারলেও চলবে। তখন নেদারল্যান্ডসকে অবশ্যই হারতে হবে। নেদারল্যান্ডস জিতে গেলে এবং বাংলাদেশ হেরে গেলে কিন্তু ডাচরাই যাবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে।

নানা সমীকরণ থাকলেও বাংলাদেশের কোচ কেবল নিজেদের খেলা নিয়েই ভাবছেন, ‘আমাদেরকে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে হলে সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। সেদিকেই আমাদের মনোযোগ। ম্যাচের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমরা সেদিকে চিন্তা করছি না। শুধু নিজেদের খেলাতেই মনোযোগ।’

কথায় আছে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এই মন্ত্রে বিশ্বাসী হয়ে শেষটা যদি রাঙাতে পারে তাহলে নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারানো তো চাট্টেখানি ব্যাপার না। শ্রী চিন্ময়ের লেখা এবং গাওয়া একটা গানের কথা উদ্ধৃতি এখানে প্রাসঙ্গিক, ‘বেলা শেষের গান, শুনবে আমার প্রাণ / বেলা শেষের গান, আশা নদীর বাণ / বেলা শেষের গান, শান্তি অফুরান।’

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়