দারিদ্র্য জয় করে জাতীয় দলে সোনালী, খেলবেন জর্ডানে!
পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
পঞ্চগড়ের অজপাড়া গ্রামের ভ্যানচালকের মেয়ে ফেরদৌসি আক্তার সোনালী এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। দারিদ্র্য, প্রতিকূলতা ও সামাজিক বাধা অতিক্রম করে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলে। বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন জর্ডানে, যেখানে আগামীকাল (৩১ মে) ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি সিরিজে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল।
সোনালী বেড়ে উঠেছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রামে। তার বাবা ফারুক ইসলাম একজন ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক এবং মা মেরিনা বেগম একজন গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সোনালী বড়। দারিদ্র্যসঙ্কুল পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই কিশোরী ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহী ছিলেন।
সোনালী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন স্থানীয় গইচপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং বিদ্যালয়ের পক্ষে আন্তঃবিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এখান থেকেই সুযোগ মেলে পঞ্চগড়ের টুকু ফুটবল একাডেমিতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের।
২০২৩ সালে ফুটবলে প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে সোনালী ভর্তি হন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। বর্তমানে তিনি নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এবং বিকেএসপিতে গোলরক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
জানা গেছে, জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর সোনালী বর্তমানে জর্ডানে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ দল সেখানে আয়োজিত একটি ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক সিরিজে অংশ নিচ্ছে। আগামীকাল (৩১ মে) বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে এবং ৩ জুলাই দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক জর্ডানের মুখোমুখি হবে। সেখানে গোলবারের নিচে সোনালীকে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশের রক্ষাকবচ হিসেবে।
সোনালীর বাবা ফারুক ইসলাম বলেন, “ছোটবেলা থেকেই সোনালীর ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ছিল। অনেকেই নানান কথা বলত, আমার মেয়ে এসবে পাত্তা দিত না। অনেক সময় আমিও নিষেধ করতাম, তারপরও ফুটবল নিয়েই পড়ে থাকত। টানাপোড়নের সংসারে তাকে সেভাবে আর্থিক সহায়তা দিতে পারিনি, খেয়ে না খেয়ে অনুশীলনে যেত। আজকে আমার মেয়ে জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছে, দেশের হয়ে বিদেশে খেলবে—এটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ।”
সোনালীর মা মেরিনা বেগম জানান, “মেয়ের ফুটবল খেলা নিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। আমরা তাকে সবসময় উৎসাহ দিয়েছি। আজ সে জাতীয় দলে, আমাদের বিশ্বাস সে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।”
টুকু ফুটবল একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান বলেন, “সোনালী সম্ভাবনাময় একজন খেলোয়াড়। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সে আজকের জায়গায় এসেছে। আমি তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলাম, সে আমার আশা পূর্ণ করেছে। সোনালীর মতো আরও অনেকেই এভাবে উঠে আসুক—এই প্রত্যাশা আমার।”
উল্লেখ্য, জাতীয় নারী দলের আরেক গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগমের বাড়িও পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে। তিনিও একই একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন,
“আমাদের ইউনিয়নের দুটি গ্রামের দুই মেয়ে জাতীয় দলে খেলছে—এটি আমাদের জন্য শুধু গর্ব নয়, সামাজিক অগ্রগতিরও প্রতীক।”
ঢাকা/নাঈম/আমিনুল