ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বগুড়ার দই

একে আজাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০১, ১৮ জুন ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বগুড়ার দই

বগুড়ার দই

একে আজাদ, বগুড়া : বগুড়ার দই স্বাদে অতুলনীয়। এটি এক বাক্যে যে কেউই বলতে পারে। বলা যায়, দইকে কেন্দ্র করেই বগুড়ার একটি আলাদা পরিচিতি তৈরি হয়েছে।

বগুড়ার দই ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, শতাধিক দোকান থেকে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার দই কেনাবেচা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ  বেশ কয়েকটি দেশে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি ছড়িয়েছে।

রফতানিতে দইয়ের বিশাল বাজার তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে, নেই কেবল উদ্যোগ।

এখানে দই’র শুরুটা হয়েছিল নবাব আমলে। সে সময়ে এই দইয়ের নাম ছিল নবাববাড়ীর দই। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবার ও সাতানী পরিবারের কাছে এ দই নবাবি খাবার হিসেব সবার পরিচিতি লাভ করে।

এই দই তৈরি করেছিলেন বগুড়ার শেরপুরের উপজেলার গৌর গোপাল পাল নামের এক গোয়ালা। প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সড়ার দই তৈরি করেন। খুব সুস্বাদু হওয়ায় গৌর গোপালের এই দই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

তবে হিন্দু সম্প্রদায় মতে, রাধা-কৃষ্ণ’র জন্মের পর তারা দুধ থেকে তৈরিকৃত এক ধরনের খাবার খেতেন যাকে ওই সময় দধি বলা হতো। এই দধি থেকেই কালক্রমে দই নামকরণ হয়।

স্বাধীনতার পর বগুড়ায় দই তৈরিতে শহরের গৌর গোপালের পাশাপাশি মহরম আলী ও বাঘোপাড়ার রফাত আলীর নাম ছড়িয়ে পড়ে।

সে সময় ছোট ছোট মাটির পাত্রে (হাড়ি) দই ভরানো হতো। ঘোষদের ছোট ছোট দোকান থাকলেও তখনও ফেরি করেই দই বিক্রি হতো।

গৌর গোপাল ও মহরম আলী’র পর বগুড়ার দই ঘরের মালিক আহসানুল কবির দই তৈরি ও বাজারজাত করণে নতুনত্ব নিয়ে আসেন। তিনিই প্রথম ছোট ছোট পাতিলে দই ভরানো শুরু করেন। সেই সাথে প্যাকেটিং ও দই সংরক্ষণেও আনেন নতুনত্ব। অতি মনোরম ও সুসজ্জিত শো রুম করে দই বিক্রির প্রচলন করেন তিনি। সেটাও ৯০ এর দশকের শুরুর দিকে।

দই ঘরের ম্যানেজার আবুল খায়ের জানান, তাদের দই দেশের বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে তারা যে প্যাকেটে দই দেন তা শীতকালে ভালো থাকে ৪/৫ দিন। আর গরম কালে থাকে ২/৩ দিন।

উত্তরাঞ্চলে কোন বিদেশি বেড়াতে এলে তারা ফেরার সময় দই কিনে নিয়ে যান। হাতে হাতে করেই এই দই পৌঁছে যায় বিভিন্ন দেশে। তবে বিভিন্ন ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে বগুড়ার দই বিদেশে নিয়ে বাজারে নিয়ে যায়। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে রপ্তানী করে ইংল্যাান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্ডিয়া, কাতার, সৌদি আরবসহ যেসব দেশে বাংলাদেশী আছে।

বর্তমানে বগুড়া শহরের এশিয়া সুইট মিট ও দই ঘর, চেলোপাড়ার কুরানু, নবাববাড়ীর রুচিতা, কবি নজরুল ইসলাম সড়কের আকবরিয়া, বিআরটিসি মার্কেটের দইবাজার, মিষ্টিমহল, সাতমাথার চিনিপাতাসহ ৪০/৪৫ টি শো রুমে দই বিক্রি হচ্ছে।

আবার শহরের বাইরে বাঘোপাড়ার রফাত, শেরপুরের রিপন দধি ভান্ডার, সৌদিয়া, জলযোগ,  বৈকালী ও শুভ দধি ভান্ডার থেকে প্রতিদিন প্রচুর দই বিক্রি হয়।

বগুড়ার দই মিষ্টির দোকান এশিয়া কর্তৃপক্ষ জানান, ওজন দিয়ে তাদের দই বিক্রি হয়না। বিক্রি হয় প্রতি পিস হিসেবে। এখন তাদের স্পেশাল সড়ার দাম ১৮০ টাকা, সাধারণ ১১০/৩০ টাকা ও সাদা দই ১২০ টাকা । এখানে দইয়ের চাহিদা প্রচুর। বেলা ৩ টার মধ্যে দই শেষ হয়ে যায়।

এছাড়া বাজারে কিছু কম দামে আরো বিভিন্ন ব্রান্ডের দই পাওয়া যায়। যার প্রতি পাতিল বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ বগুড়া এলে এখানকার দই’র স্বাদ না নিয়ে ফিরেই যেতে পারেন না। যাওয়ার সময় প্রিয়জনের জন্য নিয়ে যান বগুড়ার দই।

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮জুন,২০১৪/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়