ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বৈশাখ মিশে আছে বাঙ্গালীর হৃদয়ে

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ১০ এপ্রিল ২০১৩   আপডেট: ০৮:৪৫, ১১ আগস্ট ২০২০
বৈশাখ মিশে আছে বাঙ্গালীর হৃদয়ে

লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ, চৈত্রের শেষ বৈশাখের শুরু। এই শেষ চৈত্র আর পহেলা  বৈশাখ নিয়ে যে উৎসব আয়োজন, তা বাঙ্গালীর নিজস্ব সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি ঐতিহ্যের। পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীর নতুন বছরের প্রথম দিন। মোঘল সম্রাট আকবর তার শাসনামলে ফসলের খাজনা তোলার সুবিধার্থে বাংলা বছরের হিসাব শুরুর প্রচলন করেছিলেন। সেই থেকে বাংলা বরণ শুরু হয়।

পহেলা বৈশাখ ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ ভেদাভেদ ভুলে এক মোহনায় মিলিত হন। সময় পরিক্রমায় নববর্ষ আজ পরিণত হয়েছে বাঙ্গালীর জীবনের সার্বজনীন সবচেয়ে বড় উৎসবে। বাঙালী জাতি সারাটা বছর অধীরে আগ্রহে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে। পহেলা বৈশাখ প্রকৃতির নিয়মে ঘুরে আসে।

 দেশজ সংস্কৃতি প্রভাব বিস্তার করে একটা সুস্থ ও সচেতন মানস গঠনের দায়িত্ব নেয়। সংস্কৃতির মধ্যে অবগাহন করেই মানুষ নিজের ব্যক্তিত্বের স্পষ্ট একটি রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেন। নিজের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা যে কোন জাতিকে বড় হওয়ার প্রাথমিক দীক্ষা দেয়। বাঙ্গালীর জীবনে বাংলা নববর্ষ একটি সচেতন প্রতিফলন। মূলত: বাংলা নববর্ষ উদযাপনের মধ্যে দিয়ে বাঙ্গালী জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে।

বাংলা নববর্ষের সঙ্গে বাঙ্গালী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। সচেতন জাতির পরিচয় প্রকাশিত হয়, বিচিত্র সাংস্কৃতিক রূপের মধ্য দিয়ে। বাংলা নববর্ষ বাঙ্গালী সংস্কৃতির সেই পরিচয়বাহী। নববর্ষ মানুষকে সচেতন করে তার সাংস্কৃতিক চেতনার উৎসের দিকে। জাতীয় জীবনে বর্ষ বরণের প্রথম দিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর অর্থ নতুনকে বরণের সাগ্রহ মনোভাব।

বাঙ্গালী একটি ভাষাভিত্তিক জাতি। যাদের জন্ম বঙ্গে, মাতৃভাষা বাংলা, মূলত তারাই বাঙ্গালী। এই বাঙ্গালীদের বড় উৎসব বাংলা নববর্ষ। বিগত বছরের দুঃখ, বেদনা, আনন্দ, উৎসবের স্মৃতিচারণ পরিহার করে নতুন বর্ষকে স্বাগত জানানো হয়। বৈশাখে উৎসবের ঢল নামে। মেলা বসে বাংলার গ্রাম জনপদে। নানা ধরনের হাতের তৈরী পণ্য ও খাবারের মেলা যেন গ্রাম বাংলার মানুষের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি।

তাদের জীবন যেন গ্রাম বাংলার মানুষের বাস্তব চিত্র। তাদের জীবন যেন খন্ড খন্ড হয়ে ধরা পড়ে তাদের হাতের কারুকার্য। মাটির পুতুল, পাটের শিখা, তালপাতার পাখা, সোলার পাখি, বাঁশের বাঁশি, ঝিনুকের ঝাড়, পুঁতির মালা, কত না অদ্ভুত সব জিনিসের সমাবেশ ঘটে সে মেলায়। চোখে না দেখলে যেন বিশ্বাসই হয় না বাংলার মানুষের জীবন এত সমৃদ্ধশালী। বাংলার মানুষ গরীব হতে পারে, দারিদ্র্যের নিস্পেষণে তারা জর্জরিত হতে পারে কিন্তু এসব দুঃখ কষ্ট তাদের জীবনকে আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে পারে না।

নববর্ষ বছরটির জন্যে আশার বাণী বহন করে নিয়ে আসে। তাই নববর্ষ আমাদের প্রাণে জাগায় আশার আলো ও উদ্দীপনা এ জন্য আমাদের কাছে পহেলা বৈশাখ, পারসিকদের কাছে নওরোজ এবং ইংরেজদের কাছে ঐধঢ়ঢ়ু ঘবি ণবধৎ  বিশেষ আনন্দময় দিবস। নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে উদযাপিত হয় হালখাতা উৎসব। বিগত বছরের ধার দেনা শোধের পর্ব শুরু হয় এই দিনে। এর মধ্যে শুধু ব্যসায়িক লেনদেন নয়, হৃদয়ের বিনিময়ও ঘটে।

ব্যবসায়িক লেনদেনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখে মানুষে মানুষে সৌহার্দ্যতা বাড়ে। আজকাল পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বিশেষ করে নাগরিক জীবনে। শহরে শহরে মুক্তাঙ্গণে কবিতা পাঠ, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি কর্মসুচি পালিত হয়। ঢাকায় রমনার বটমূলে এই অনুষ্ঠান বিশেষ ব্যাপকতা লাভ করেছে। শুধু নাচ-গানই নয়, বাঙ্গালীর বহুকালের অভ্যাস, পান্তা ভাত ও ইলিশ ভাজা খাওয়া এখানে চালু আছে বহু বছর থেকে।

 বৈশাখের তথা বাংলা নববর্ষের চেতনা বাঙ্গালীর হৃদয়ে অন্তরে মিশে আছে কিন্তু পরিতাপের বিষয় বাংলা নববর্ষের ব্যবহারিক প্রয়োগ আমাদের জীবনে প্রায় ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাংলা সন কিংবা বাংলা তারিখের ব্যবহার নেই বললেই চলে। স্কুল, অফিস, আদালত ব্যাংক বীমা, বিদেশ ভ্রমণের তারিখ নির্ধারণ ইত্যাদি কোন পর্যায়েই বাংলা তারিখ অনুসৃত হয় না।

পৃথিবীর বুকে একমাত্র যে দেশের মানুষ তাদের ভাষা রক্ষার জন্যে আন্দোলন করে জীবন দিয়েছে, যে দেশে প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ পালিত হয় জমকালো পরিবেশে, আনন্দঘন উৎসবে। সে দেশেই বাংলা সন ও বাংলা তারিখ উপেক্ষিত। এই অবস্থায় পহেলা  বৈশাখের চেতনা তথা বাঙ্গালীর সংস্কৃতি আমাদের অফিস আদালতসহ দেশের সর্বত্র চালু করা প্রয়োজন। সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ও বাংলা তারিখ ব্যবহার করা অপরিহার্য। তাহলেই বাংলা নববর্ষ উদযাপনের তাৎপর্য হবে অর্থবহ। 

রাইজিংবিডি২৪.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়