ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘এ যেন এক অসন্তুষ্টির বাজেট’

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২৫ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘এ যেন এক অসন্তুষ্টির বাজেট’

ফাইল ফটো

নিজস্ব প্রতিবেদক : সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, জনগণের কল্যাণে এবং জনগণের স্বার্থেই বাজেট প্রণীত ও সংসদে পেশ হওয়ার কথা। জনগণের সন্তুষ্টি অর্জনই এর লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। বাস্তবে কী তাই ঘটেছে? মনে হচ্ছে এ যেন এক অসন্তুষ্টির বাজেট।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুজন আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত বাজেট ২০১৮-২০১৯: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এমন কথা বলেন।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জনগণের মধ্যে রয়েছে উচ্চ, মধ্য ও নিম্নবিত্তের মানুষ। জনগণের একটি অংশ ব্যবসায়ী। বাজেট তথা সরকার থেকে এদের প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যাশা রয়েছে। আবার এদের প্রত্যাশার মধ্যে কিছু কিছু মিলও রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ব্যবসায়ীরা চায় তাদের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তা। একইসঙ্গে তারা চায় বিনিয়োগের জন্য ইনসেনটিভ বা উৎসাহ প্রদান এবং সহায়ক আইনি কাঠামো। আর বিনিয়োগবান্ধব পরিস্থিতির জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, যা পক্ষান্তরে নির্ভর করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর। এসবের জন্যই অবশ্য প্রয়োজন কতগুলো শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান। শক্তিশালী এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান থাকলেই নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা বদল নিশ্চিত হয় এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর হয় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এক কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, দলীয়করণের সংস্কৃতিতে প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা ক্ষুন্ন হয় এবং রাষ্ট্রের সক্ষমতা হ্রাস পায়।

তিনি বলেন, পক্ষান্তরে জনগণের উচ্চ, মধ্য ও নিম্নবিত্ত নির্বিশেষে প্রত্যাশা হলো কর্মসংস্থান এবং সুযোগ, বিশেষত নিম্নবিত্তদের জন্য সমসুযোগ। জনগণের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ক্রিয়াশীল সাংবিধানিক, বিধিবদ্ধ ও রাষ্ট্রবহির্ভূত (যেমন, নাগরিক সমাজ) প্রতিষ্ঠান। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাও জনগণের, বিশেষত সচেতন জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রগতিশীল ব্যবসায়ীরাও অবশ্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পক্ষে।

তিনি আরো বলেন, গত ৭ জুন অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন, যার মধ্যে বাৎসরিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিবি বরাদ্দের পরিমাণ ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা এবং অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় ২ লাখ ৫১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। বাজেটে প্রক্কলিত রাজস্ব আদায় ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা এবং বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রীর সম্প্রতি সংসদে উত্থাপিত বাজেট কি জনগণের এসব প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হবে? স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, বাজেটের মাধ্যমে জনগণের সব প্রত্যাশা পূরণে আংশিক ভূমিকা রাখতে পারে মাত্র। এর জন্য আরো প্রয়োজন,  বিশেষত সরকারের পক্ষ থেকে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যেগুলোর ওপর মূলত নির্ভর করবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। দুর্ভাগ্যবশত রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদল করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষণ আমরা দেখতে পাই না।’’

তিনি বলেন, ‘‘সরকার ব্যাংকিংখাতে আড়াই শতাংশ করের হার কমানোর প্রস্তাব করলেও, করপোরেট ট্যাক্স কমানোর উদ্যোগ বাজেটে নেই। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ যে জিডিপির ২৩ শতাংশের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছে, যা থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা বর্তমানে দেখা যায় না। বরং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অনিশ্চিয়তা দেখা যাচ্ছে, তা বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ পাচার আরও বৃদ্ধি করতে এবং বিনিয়োগ পরিন্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। আর বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে ব্যবসায়ী এবং কর্মসংস্থান প্রত্যাশী জনগণ উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে বর্তমানের কর্মসংস্থানহীন জিডিপি পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলেও মনে হয় না।’’

তিনি বলেন, ‘‘প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সরকার খুব একটা স্বস্তিতে আছে বলে মনে হয় না। বাজেট বাস্তবায়নের হার ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯৩ শতাংশ হলেও গত অর্থবছরে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৭৯ শতাংশে, যা সরকারের দক্ষতা ও সক্ষমতা হ্রাসের লক্ষণ। আর এর ফলে বাজেটের, বিশেষত উন্নয়ন বাজেটের আকার প্রক্কলনের তুলনায় ছোট হয়েছে, সার্বিক অর্থনীতির ওপর যার প্রভাব নিঃসন্দেহে নেতিবাচক।’’  

তিনি বলেন, বিদায়ী অর্থবছরে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা ধরা হলেও, তা সংশোধন করে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটিতে আনা হয়। কিন্তু গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মূল লক্ষ্যমাত্রার ৭২ ও সংশোধিত লক্ষমাত্রার ৮০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে, যার ফলে এনবিআরকে অর্থ বছরের শেষ মাসে ৪৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে। এমনি প্রেক্ষাপটে গত অর্থবছরের তুলনায় ৭১ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিরাট লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের মধ্যে অস্বস্তি থাকাই স্বাভাবিক।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জুন ২০১৮/হাসিবুল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়