ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করার যোগ্যতা হয়নি: পরীমনি

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩০, ১৭ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করার যোগ্যতা হয়নি: পরীমনি

ঢাকাই চলচ্চিত্রের গ্ল্যামারকন্যা পরীমনি। চলচ্চিত্রে পা রাখার পর থেকেই তিনি বিভিন্ন কারণে আলোচিত। বতর্মানে এই চিত্রনায়িকা বেছে বেছে সিনেমার কাজে হাত দিচ্ছেন। এ নিয়েও রয়েছে তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ। আসছে ১৬ ডিসেম্বর পরীমনি অভিনীত ‘অন্তর জ্বালা’ মুক্তি পাবে। মালেক আফসারি পরিচালিত এই সিনেমা নানা কারণে আলোচিত। বিষয়গুলো নিয়ে পরীমনির সঙ্গে কথা বলেন রাইজিংবিডির বিনোদন প্রতিবেদক রাহাত সাইফুল। আলাপচারিতাটুকু পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

রাইজিংবিডি: ‘অন্তর জ্বালা’ সিনেমাটি কি পরীমনিকে দর্শকদের কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবে?
পরীমনি:
হ্যাঁ। একজন নতুন পরীকে দেখতে পাবেন দর্শক। যেখানে পরী শুধু নায়িকা নন। প্রথমত বলতে হবে সে একজন শিল্পী, তারপর নায়িকা। সব সিনেমায় চরিত্র বুঝে অভিনয় করার জায়গা থাকে না। কিছু সিনেমা আছে যেখানে শুধু নায়িকা হয়েই থাকা, সেখানে নায়িকার পাঁচটি গান থাকবে কিছু ‍দৃশ্য থাকবে- এতটুকুই। কিন্তু কিছু চরিত্র রয়েছে যেখানে মানুষ চরিত্রটা নিয়েই ভাববে। ‘অন্তর জ্বালা’য় আমাকে তেমনই   একটি চরিত্রে দর্শক দেখবেন। দেখার পর মনে হবে এই চরিত্র কে করেছে? উত্তরে নাম আসবে। এরপর আসবে পরী কে? উত্তরে আসবে নায়িকা। অর্থাৎ নায়িকাটা পরে আসবে। আগে আসবে অভিনয়।

রাইজিংবিডি: নায়িকা মানে অনেকেই মনে করেন গ্ল্যামারাস হতে হবে-বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
পরীমনি:
এই ধারণা রাইজিংবিডির মাধ্যমে পরিবর্তন করে দিতে চাই। গ্ল্যামার আসলে কী? গ্ল্যামার মানে এই নয় যে, সুন্দর একটা হাসি দিলাম, দুইটা শট দিলাম, পেটের দুইটা ভাঁজ দেখালাম। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এবার দর্শকদের এই ধারণার পরিবর্তন হবে। বেসিক গ্ল্যামারটাই হচ্ছে অভিনয়। প্রত্যেকটা মুভমেন্ট আপনি কীভাবে করছেন এটাই গ্ল্যামার। যে গ্ল্যামার কেউ কপি করতে পারবে না। পোশাক, সাজ এগুলোর কপি করা যাবে। কিন্তু গ্ল্যামারের কপি করা যাবে না। এই মুহূর্তে বলব, একজন শিল্পীর প্রধান গ্ল্যামার হচ্ছে তার অভিনয়।

রাইজিংবিডি: ‘অন্তর জ্বালা’ সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে নতুন কিছু করতে হয়েছে কি যা অন্য সিনেমায় কখনো করেননি?
পরীমনি:
মেকআপ নিয়ে আমরা সুন্দরভাবে সেজে পর্দায় সুন্দর করে হাসি। তখন দর্শক বলে উঠেন- ওয়াও! কিন্তু এই সিনেমায় দর্শকের এই অনুভূতি হবে ভিন্নভাবে। এখানে মেকআপ ব্যবহার না করেই অভিনয় দক্ষতা দিয়ে, ট্যালেন্ট দিয়ে অভিনয় ফুটিয়ে তুলেছি। এই বিষয়টিই ছিল আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং। আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে চাই- আমি পাস করব। আমার চরিত্রের জন্য কোনো মেকআপ প্রয়োজন হয়নি। এমন কিছু দৃশ্য আছে যেখানে পানি দিয়েও মুখ ধুইনি। আবার এমন কিছু দৃশ্য আছে যেখানে শুধুমাত্র একটি টিপ কপালে দিয়েছি। 

রাইজিংবিডি: সিনেমার রিল দিয়ে তৈরি একটি পোশাক এই সিনেমায় আপনি পরেছেন। এটা কেন বা কীভাবে এই আইডিয়া পেলেন?
পরীমনি:
সিনেমার রিল ব্যবহারের অনুভূতি অন্যরকম ছিল। আমি আসলে থার্টি ফাইভে শুটিং করিনি। যাদের কাছে শুনেছি তারা এমনভাবে বলেন যেন, সিনেমার সব ফিলটাই রিলের মধ্যে। আমি এই ফিলটা নেয়ার চেষ্টা করেছি। এটা মূলত গল্পের প্রয়োজনে করা হয়েছে। দর্শক এই দৃশ্য দেখতে পাবেন মাত্র কয়েক সেকেন্ড। কিন্তু রিলের পোশাকটি পরতে আমার অনেক সময় লেগেছিল। রিলগুলো এমনিতেই ধারাল, তার মধ্যে পিন দিয়ে সেগুলো তৈরি করা হয়েছিল। মোট কথা এই পোশাক পরতে আমার অনেক ধকল গিয়েছে। তবে আমার কষ্টটা কষ্ট থাকবে না যখন দর্শকদের ভালো লাগবে।

রাইজিংবিডি: মাস্টার মেকারখ্যাত নির্মাতা মালেক আফসারির সঙ্গে কাজ করে আপনি কি ভিন্নতা পেয়েছেন?
পরীমনি:
আমি এ পর্যন্ত অনেক পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু তাদের মধ্যে এমন দু-একজন ছিলেন যাদের নাম আমি বলতে চাই না। তারা গল্প শুনিয়েছেন; শুনে মনে হয়েছে আমি সিনেমাটা আমার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। ফিলটা এমন ছিল। কিন্তু কি হচ্ছে? ক্যামেরাতে যখন কাজ হয় তখন এই জায়গাটা ভাগ হয়ে যায়। তখন পরিচালকের সঙ্গে যুক্ত হন চিত্রগ্রাহক। শুটিংয়ের সময় পরিচালকের ভাবনার জায়গাটা উনিশ-বিশ হয়ে যায়। শুটিং শেষে যখন সম্পাদনা হয় তখন আবার সতেরো-বিশ হয়। তারপর আমি যখন ডাবিংয়ে যাই তখন দেখি পনেরো-বিশ হয়ে গেছে। যখন হলে মুক্তি পায় তখন প্রথম গল্প বলার বিষয়টির সঙ্গে মিল খুঁজে পাই না। অনেক জায়গাতে খাপছাড়া হয়ে যায়। আফসারি ভাইয়ের বিষয়টা হলো, তিনি যা বলেন তার থেকে তিনগুণ ভালো করে কাজ শেষ করেন। এর কারণ হচ্ছে তিনি যা ফিল করেন তা তিনি চিত্রগ্রাহককে ফিল করান, আফসারি ভাইয়ের পছন্দ না হলে একটা শট বার বার নেন। লাইটম্যান থেকে সবাইকে কীভাবে যেন তিনি বুঝিয়ে ফেলেন। সিকোয়েন্সটা কীভাবে যেন মাথার মধ্যে দিয়ে দেন। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো জায়েদ খান। এটা একটা ম্যাজিক। আর এই ম্যাজিকটা থাকল বাংলার দর্শকদের জন্য।

রাইজিংবিডি: ইন্ডাস্ট্রিতে একটা অভিযোগ রয়েছে আপনি নতুন কোনো সিনেমায় কাজ করছেন না। অনেকের কাজ ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এটা কতটা সত্য?
পরীমনি:
এটা একটা হাস্যকর উক্তি। আমাকে হয়তো ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এটা কেউ কেউ বলতে পারেন। ফোন অফ থা্কতেই পারে। আর এখন তো সেই প্রাচীন যুগ না। এটা ভুল কথা। এখন প্রত্যেকের ফেসবুক আইডি রয়েছে। সারাক্ষণ ফেসবুকের ইনবক্সে বাতি জ্বলে থাকে। এরপরেও খুঁজে পাওয়া যাবে না কেন? আর একটা কথা সিনেমা কেন আমি ফিরিয়ে দিচ্ছি? সিনেমা হচ্ছে না। আসলেই কি সিনেমা হচ্ছে? ওগুলো কি সিনেমা? কোন সিনেমায় অভিনয়শিল্পী অভিনয় করবে আর কোন সিনেমায় করবে না এটা একজন শিল্পীর নিজস্ব অধিকার, এখানে ফোর্স করার কিছু নেই।

রাইজিংবিডি: এই মুহূর্তে কোন নায়িকাকে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন?
পরীমনি:
আমি যে কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করব সেই যোগ্যতাই এখনো আমার হয়নি। যখন মনে করব আমার সেই যোগ্যতা হয়েছে সেদিন এই প্রশ্নের উত্তর দেব। 

রাইজিংবিডি: ফিল্মের এক্সট্রা শিল্পীদের নিয়ে কোরবানি দেয়া, পথশিশুদের সঙ্গে জন্মদিনের কেক কাটা বা কোন বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানো। এই বিষয়গুলো আপনি করছেন।
পরীমনি:
একটা পরিবারে সন্তানের জন্ম হলে সবাই মাতামাতি করে। সেই বাচ্চা যখন নিজের পায়ে দাঁড়ায় এবং পরিবারের কিছুটা হলেও দায়ভার নেয় তখন পরিবারে তার কাছে একটা প্রাপ্য থাকে। আর এই পরিবারের জন্য আজকে আমি। এসব তাদের প্রাপ্য। এতটুকু যে তাদের জন্য করতে পারছি এটা আমার ভাগ্য। আর জন্মদিনে পথশিশুদের সঙ্গে কেন কেক কাটি? কারণ আমার জন্মদাতা মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। আমিও একজন এতিম। ওইদিন বাবা-মাকে খুব মিস করি। পথশিশু কিংবা যারা এতিম তারা সব সময় বাবা-মাকে মিস করে। ওরা যাদের মিস করে আমিও তাদের মিস করি, এই ফিল থেকে বছরে একটা দিন তাদের সঙ্গে আনন্দ করি।

রাইজিংবিডি: সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে আপনি চুটিয়ে প্রেম করছেন। আপনাদের এই প্রেমের সম্পর্ক কি পরিণতি পাবে?
পরীমনি:
আমরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসঙ্গেই থাকতে চাই। প্রেমের পরে বিয়ে হবে বাচ্চা হবে (হা হা হা)।

রাইজিংবিডি: বিয়ের এই সু-সংবাদের জন্য দর্শকদের আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?
পরীমনি:
সময় মতো দর্শকদের অবশ্যই জানাব। তবে একটু সময় দিতে হবে।

রাইজিংবিডি: আপনার ভক্তরা প্রেমের বিষয়টি কীভাবে নিচ্ছেন বলে মনে করেন?
পরীমনি:
অনেকদিন ধরেই আমি ফেসবুকে আমাদের প্রেমের বিষয়টি শেয়ার করছি। কিন্তু কখনো দেখিনি আমার ভক্তরা এটাকে খারাপভাবে নিচ্ছেন। এক পার্সেন্ট দর্শকও যদি বিষয়টি খারাপভাবে নিতো তবে বিষয়টি আমি বুঝতাম। আমার মনে হচ্ছে তারা বিষয়টি আরো ভালোভাবে নিচ্ছেন। যারা আমার ভক্ত তারা সবসময় চাইবেন আমি কীভাবে ভালো থাকি।

রাইজিংবিডি: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পরীমনি:
রাইজিংবিডিকেও ধন্যবাদ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ নভেম্বর ২০১৭/শান্ত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়