ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

প্রাচীনকালের অদ্ভুত সব চিকিৎসা

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২০ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাচীনকালের অদ্ভুত সব চিকিৎসা

প্রতীকী ছবি

মাহমুদুল হাসান আসিফ : প্রাচীনকালে অদ্ভুত কিছু চিকিৎসা ছিল, যা একরকম প্রথার মতো তখনকার সমাজে বিরাজ করত। এসব চিকিৎসা বর্তমানে যাচ্ছেতাই বলে বিবেচিত হবে। প্রাচীনকালের অদ্ভুত কিছু চিকিৎসা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* মলের তৈরি মলম

যা বলা হচ্ছে তা সত্যিই সত্যিই ছিল। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় বিচিন্ন প্রাণীর মল ক্ষত সারানোর কাজে ব্যবহার হতো। ইবারের প্যাপিরাস নামক নথিতে এমনি কিছু আজব চিকিৎসার কথা লিপিবদ্ধ করা আছে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে কুকুর, হরিণ এবং গাধার মতো প্রাণীদের মল শুধুমাত্র চিকিৎসা নয় বরং প্রেতাত্মা দূরে রাখার কাজেও ব্যবহার হতো। কিছু মিশরীয় মেয়েরা তাদের যোনির ভেতরে কুমিরের মল গর্ভনিরোধক হিসেবে ঢুকিয়ে রাখত।

* রক্তমোক্ষণ

রক্তমোক্ষণ এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে কারো শরীর থেকে রক্ত বের করে দেওয়া হয়। ব্রিটিশ কলম্বিয়া মেডিকেল জার্নাল অনুযায়ী, খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০-৩৭০ অব্দে এই রক্তমোক্ষণ পদ্ধতি খুব জনপ্রিয় ছিল। গ্রিক, এশিয়ান, আরব এমনকি ইউরোপীয়রা বিশ্বাস করত যে রক্ত, শ্লেষ্মা, কালো পিত্ত ও হলুদ পিত্ত হল মানবদেহের চারটি গুরুত্বপূর্ণ দ্রবণ এবং এই দ্রবণগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রাখতে তারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করত। এই চারটি উপাদানের ভারসাম্যহীনতা একটি মানুষকে অসুস্থ করতে পারে বলে মনে করা হতো। মাইগ্রেন এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সমাধান হিসেবে মানুষের দেহ থেকে অর্থাৎ শিরা অথবা ধমনী থেকে রক্ত বের করে দিয়ে রোগের চিকিৎসা করা হতো। হিস্টোরি ডটকমের একটি আর্টিকেল অনুযায়ী, রক্তমোক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে একবার জর্জ ওয়াশিংটনের জীবন বাঁচানো হয়েছিল এবং খুব অল্পদিন আগেই এই পদ্ধতির বিলুপ্তি ঘটে।
 


* জোঁক চিকিৎসা

জোঁকেরা রক্তমোক্ষণ পদ্ধতির উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকে এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ, চর্মরোগ, দাঁতের রোগ, স্নায়বিক সমস্যার সমাধানে জোঁক চিকিৎসা ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও জোঁকের ব্যবহার রয়েছে। জোঁকের দেহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেপটাইড এবং প্রোটিন ক্ষত জায়গার রক্তের ভারসাম্য রক্ষার্থে অত্যন্ত কার্যকরী। এমনকি ক্যানসার, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চরক্তচাপের মতো রোগ নিরাময়কারী ওষুধ তৈরিতে জোঁকের জুড়ি নেই আজও।

* মূত্রপান

প্রাচীনকালে মিশর, গ্রিস এবং রোমে মূত্রপান ছিল বিভিন্ন ধরনের পেটের রোগের বহুলপ্রচলিত সমাধান। বিভিন্ন ভারতীয় এবং চীনা ইতিহাসে সোনালী রঙের মূত্রের অনেক ঔষধি গুণের কথা উলেখ করা আছে। তাছাড়া প্রাচীনকালে এটি কাপড়-চোপড় ধোয়া এবং দাঁত সাদা করার কাজে ব্যবহৃত হতো।

* মাথার খুলি ছিদ্র করা

আপনার যদি কখনো তীব্র মাথাব্যথা হয় আপনি কি সমাধান হিসেবে মেশিন দিয়ে আপনার খুলি ছিদ্র করার কথা ভাববেন? এটা আজগুবি বলে মনে হলেও প্রাচীনকালে তীব্র মাথাব্যথা এবং বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যার সমাধান করতে খুবই ছোট এবং সূচালো ড্রিল মেশিন দিয়ে মাথার খুলি ছিদ্র করা হতো। এ ধরনের চিকিৎসার ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের মৃত্যু ঘটতো। গ্রিস, আফ্রিকা, পলিনেশিয়া এবং আমেরিকাতে আজ থেকে ৭০০০ বছর আগে এই অদ্ভুত চিকিৎসার প্রচলন ছিল। এমনকি এই অদ্ভুত চিকিৎসা ১৯ শতকের গোড়ার দিকেও বহুল প্রচলিত ছিল।
 


* ফিতাকৃমি ডায়েট

ভিক্টোরীয় যুগের সবচেয়ে জঘন্যতম এক পদ্ধতি ছিল ফিতাকৃমির মাধ্যমে ওজন বা শারীরিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। মেয়েরা তাদের শরীরের গড়ন ঠিক রাখতে ফিতাকৃমির ডিম খেতো যা পরবর্তীতে তার পেটে গিয়ে কৃমিতে পরিণত হতো এবং তার ভক্ষণ করা খাবার খেয়ে তাকে শরীরের গড়ন ঠিক রাখতে সাহায্য করতো। কোনো মানুষ তার ইচ্ছামতো খাদ্যগ্রহণ করতে পারতো কেননা শেষমেশ ওই ফিতাকৃমি তার পেটের অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলবে। সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হল এই পদ্ধতি এখনো প্রচলিত আছে। এই পদ্ধতির অবলম্বনের ফলে সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ অপুষ্টি, পেটব্যথা, ডায়রিয়া, বমিভাব, রক্তস্বল্পতা এবং জ্বরের মতো রোগ ঐতিহ্যের মতো নিজের দেহে বহন করে নিয়ে আসছে।

* মৃতদেহ থেকে তৈরি ওষুধ

প্রাচীনকালে মরা মানুষের মাথার খুলি গুঁড়া করে তৈরি করা হতো বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। সেই রোমান জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের রাজত্বকালের সময় পর্যন্ত মরা মানুষ থেকে ওষুধ তৈরির প্রথা প্রচলিত ছিল। এমনকি মিশরের বিভিন্ন পিরামিডে মৃতদেহ চুরির ঘটনা ঘটতো বলে জানা যায়। ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিকার্ডো সাগ বলেন, ‘মানবদেহের মাংস, হাড়, রক্ত প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, এমনকি আধুনিক চিকিৎসাও এর ব্যতিক্রম নয়।’

* পাদের গন্ধ শোঁকা

১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনে কালাজ্বর নিরাময় করতে চিকিৎসকেরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। তাছাড়া সেই সময়ের মারাত্মক রোগ প্লেগ চিকিৎসায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। মানুষজন পাত্রে সংরক্ষিত পাদের গন্ধ গ্রহণ করতো অথবা কোনো দুর্গন্ধময় প্রাণী বাড়িতে কোনো পাত্রে সংরক্ষণ করতো। যদিও এই পদ্ধতি সেসময় বহুলপ্রচলিত ছিল কিন্তু প্লেগ চিকিৎসায় এটা কোনো কাজে আসেনি।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়