বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।
সোমবার রাতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এ বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেওয়ার পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের আলোকে বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি ও আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে রেখেই এ গেজেট জারি করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনকারী বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আলোচনার পর গেজেট জারি করা হলো।
এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের অবসান হলো।
আগামী বুধবার এ গেজেট আপিল বিভাগে দাখিল করার জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ঐক্যমতে পৌঁছে এই শৃঙ্খলাবিধির গেজেট করা হয়েছে। এই শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে। কিন্তু আমি আজকে আপনাদের বলছি, বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। শুধু একজনে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা গেজেটটা করতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ও পরামর্শে এবং সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী শৃঙ্খলাবিধি করা হয়েছে। এর আগেও গেজেট করা হয়েছিল। কিন্তু এক ব্যক্তির কারণে গেজেট প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে।
বিচারকদের জন্য কখনো কোনো শৃঙ্খলাবিধি ছিল না। ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলাবিধির আওতায় বিচারকদের চাকরি, পদোন্নতি, নিয়োগ ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রিত হতো। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায় দেন। ওই রায়ে সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেন আদালত।
ওই ১২ দফার ৭ নম্বর দফায় বলা হয়েছিল, নিম্ন আদালতের বিচারকদের জন্য চাকরির শৃঙ্খলাবিধি করতে হবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে। ঐতিহাসিক এ রায়ের কিছু কিছু ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হলেও বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি এতদিন বাস্তবায়ন হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট করতে এ পর্যন্ত ২৫ বার সময় নেওয়া হয়। কিন্তু সর্বশেষ সময় নেওয়ার পর আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে সমঝোতার ভিত্তিতে গেজেট প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। এই সমঝোতার আলোকেই নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, অভিযোগের তদন্ত সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর এ বিষয়ে নতুন খসড়া করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। সুপ্রিম কোর্টের সবুজ সংকেত পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর গেজেট আকারে জারির মধ্য দিয়ে ১৮ বছর আগের নির্দেশনার বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
গেজেটটি দেখতে এখানে ।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ডিসেম্বর ২০১৭/মেহেদী/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন