ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘ভুয়া পাসপোর্ট দিয়ে তাজউদ্দিনকে বিদেশে পাঠানো হয়’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ভুয়া পাসপোর্ট দিয়ে তাজউদ্দিনকে বিদেশে পাঠানো হয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য গ্রেনেড সরবরাহকারী মাওলানা তাজউদ্দিনকে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে করা পাসপোর্ট দিয়ে পরিকল্পিতভাবে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হামলার পর অবিস্ফোরিত আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার করে তা মামলার আলামত হিসেবে জব্দ না করে আদালতের যথাযথ নির্দেশ ছাড়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধ্বংস করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলী সৈয়দ রেজাউর রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মঙ্গলবার ১৯তম দিনের মতো যুক্তিতর্কে এ তথ্য উপস্থাপন করেন।

সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা বাস্তবায়নে দেওয়া আশ্বাস অনুযায়ী প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ডিজিএফআই ও পুলিশের কর্মকর্তারা।

রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে।

এদিন রাষ্ট্রপক্ষ ১৮ জন সাক্ষী- অবসরপ্রাপ্ত মেজর সৈয়দ মুনিরুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার, মো. খালেক, মো. ওবায়দুল হক, আশিক সাঈদ, খন্দকার ফজলে রহিম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রফিকুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক খন্দকার রেজাউল হাসান, হাফেজ হুমায়ূন কবির, রফিকুল ইসলাম, আলমাস উদ্দিন, পুলিশ কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান খন্দকার, পুলিশ কর্মকর্তা মো. মারুফুল হাসান, এইচ এম সোহরাওয়ার্দী, মো. মাহবুবুর রহমান, খন্দকার মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী শামস, মেজর আবুল মারুফ আশরাফুল কবীরের দেওয়া জবানবন্দির আলোকে যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়।

এ মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নিরীহ জজ মিয়ার (জজ মিয়ার জবানবন্দি আদায় করে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হয়) মা জোবেদা খাতুনের জবানবন্দির আলোকে যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে।

সাক্ষীদের জবানবন্দির আলোকে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, গ্রেনেড সরবরাহকারী জঙ্গি মাওলানা তাজউদ্দিনকে (বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই) ভুয়া নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে পাকিস্তানে পাঠানো, ভয়াবহ ওই হামলার আলামত নষ্ট এবং অপরাধীদের বাঁচাতে বিভিন্ন তৎপরতার বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে।

গত ১১ অক্টোবর মামলাটিতে আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষ্য শেষ হয়। মামলাটিতে বিভিন্ন সময়ে ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দেন।

এর আগে মামলাটিতে গত ১২ জুন জামিনে ও কারাগারে থাকা ৩১ আসামির আত্মপক্ষ শুনানি হয়। আত্মপক্ষ শুনানিতে ৩১ আসামির সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। মামলাটিতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ জন আসামি পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ শুনানির সুযোগ পাননি।

মামলাটিতে আসামি খালেদা জিয়ার ভাগ্নে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক, প্রাক্তন আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও প্রাক্তন ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম জামিনে আছেন।

অন্যদিকে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, প্রাক্তন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ১৯ জন পলাতক। এ মামলার আসামি হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন কয়েক শ’ মানুষ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন অল্পের জন্য বেঁচে যান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ডিসেম্বর ২০১৭/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়