ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চিটাগংকে বিদায় করে ফাইনালের পথে রাজশাহী

পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৪, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চিটাগংকে বিদায় করে ফাইনালের পথে রাজশাহী

ক্রীড়া প্রতিবেদক, মিরপুর থেকে : ১৪২ রান তাড়া করতে নেমে ৫৭ রানেই নেই ৬ উইকেট। তখনো জয়ের জন্য ৫৪ বলে চাই ৮৬ রান। সেখান থেকে কী দুর্দান্ত এক ইনিংসই না খেললেন ড্যারেন স্যামি।

 

অধিনায়কের ২৭ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের ঝোড়ো ইনিংসেই এলিমিনেটর ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে বিপিএলের ফাইনালের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল রাজশাহী কিংস। বিদায় নিল তামিম ইকবালের চিটাগং।

 

প্রথম কোয়ালিফায়ারে ঢাকা-খুলনা ম্যাচে হেরে যাওয়া দলের সঙ্গে রাজশাহী খেলবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার। সেখানে যারা জিতবে তারাই চলে যাবে ফাইনালে। আর প্রথম কোয়ালিফায়ারে ঢাকা-খুলনার জয়ী দল সরাসরি যাবে ফাইনালে।

 

মিরপুরে মঙ্গলবার মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় রাজশাহীর শুরটা মোটেই ভালো হয়নি। দলের স্কোর দুই অঙ্কে যাওয়ার আগেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে তারা। দ্বিতীয় ওভারে শুভাশিস রায়ের বলে আব্দুর রাজ্জাককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুমিনুল হক। আগের ম্যাচে বল হাতে জাদু দেখিয়ে ম্যাচ জেতানো আফিফ হোসেনকেওয়ান ডাউনে পাঠিয়েছি রাজশাহী। কিন্তু ১৭ বছর বয়সি অলরাউন্ডার ফেরেন গোল্ডেন আক মেরে। রাজশাহীর স্কোর তখন ২ উইকেটে ৮।

 

তৃতীয় উইকেটে নুরুল হাসান ও সাব্বির রহমান প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সাব্বিরের তাড়াহুড়োতে ভেঙে যায় ৩১ রানের এ জুটি। ষষ্ঠওভারে শুভাসিসের প্রথম বলে থার্ড ম্যানে তাসকিনকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন। পঞ্চম বলে হুক করতে গিয়ে মিড উইকেটে মোহাম্মদ নবীকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাব্বির (১৩ বলে ১১)।

 

পাঁচে নামা সামিত প্যাটেলও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। নবম ওভারে নবীর বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। তবে রাজশাহী সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায় এর পরের ওভারে। এই ওভারেই একপ্রান্ত আগলে রাখা নুরুল ও আগের দুই ম্যাচে ঝড় তোলা জেমস ফ্রাঙ্কলিনকে সাজঘরের পথ দেখান সাকলাইন সজীব। প্রথম বলে লং অনে দুর্দান্ত এক ক্যাচে বিদায় নেন নুরুল। প্রায় ছক্কা হতে যাওয়া বলটি তালুবন্দি করে সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছিলেন শোয়েব মালিক, বল ছুড়ে দেন শূন্যে, সেটি পরে তালুবন্দি করেন জহুরুল ইসলাম। নুরুল করেন ৩৪। ওভারের শেষ বলে বোল্ড ফ্রাঙ্কলিন।

 

তখন রাজশাহীর স্কোর ১১ ওভারে ৬ উইকেটে ৫৭। জয়ের জন্য ৫৪ বলে চাই ৮৬। তবে অধিনায়ক ড্যারেন সামি নেমে দ্রুত রান তুলে ব্যবধান কমিয়ে আনেন। মুখোমুখি হওয়া প্রথম তিন বলেই নবীকে মারেন টানা তিন চার। পরের ওভারে সজীবকে তার মাথার ওপর দিয়ে হাঁকান ছক্কা। তাকে ভালো সঙ্গ দিচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু ১৫তম ওভারে রানআউটে কাটা পড়েন মিরাজ। সজীবের বল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ওপর প্রান্ত থেকে স্যামি বের হননি। অর্ধেক ক্রিজে চলে যাওয়া মিরাজ আর ফিরতে পারেননি। তাসকিনের থ্রো থেকে স্টাম্প ভেঙে দেন এনামুল হক বিজয়। তখনো রাজশাহীর চাই ৩৫ বলে ৪৯।

 

১৬তম ওভারে স্যামি শুভাশিসের তানা তিন বলে মারেন তিন চার। এই ওভার থেকে আসে ১৬ রান। তাতে শেষ ৪ ওভারে রাজশাহীর দরকার পড়ে ২৭ রান। যেটি তিন ওভারে দাঁড়ায় ২০ রানে। ১৮তম ওভারে নবীর প্রথম বলই তার মাথার ওপর দিয়ে সীমানার বাইরে আছড়ে ফেলে ২৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন স্যামি। সব মিলিয়ে এই ওভার থেকে আসে ১৩ রান। পরের ওভারেই ১২ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে রাজশাহী। ২৭ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৫৫ রানে অপরাজিত ছিলেন স্যামি। ১১ বলে ১৯ রানে অপরাজিত ফরহাদ রেজা।

 

এর আগে টস জিতে চিটাগংকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন রাজশাহী অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। ব্যাট করতে নেমে চিটাগংয়ের শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি। একাদশে ফেরা ডোয়াইন স্মিথ দ্বিতীয় ওভারেই ডাক মেরে বিদায় নেন। কেসরিক উইলিয়ামসের বলে স্লিপে স্যামির হাতে ক্যাচ দেন স্মিথ। চিটাগংয়ের স্কোর তখন ১ উইকেটে ৮। এরপরই গেইল-তামিম মিলে গড়েন ৭৪ রানের বড় জুটি।

 

শুরুটা যদিও ধীর গতিতে করেছিলেন গেইল। মুখোমুখি প্রথম চার বলে থেকে কোনো রানই নিতে পারেননি। ষষ্ঠ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম দুই বলে হাঁকান দুই ছক্কা। প্রথমটি লং অন দিয়ে আর পরেরটি অং অফ দিয়ে আছড়ে পড়ে সীমানার বাইরে। পরের ওভারে আফিফ হোসেনের প্রথম ও শেষ বলেও হাঁকান দুই ছক্কা। অন্যদিকে তামিমও দারুণ সব চার মেরে রানের গত সচল রাখেন।

 

ছক্কা মেরে ফিফটি পূর্ণ করতে গিয়ে আউট হয়ে যান গেইল। ১১তম ওভারে জেমস ফ্রাঙ্কলিনের বলে লং অনে ফরহাদ রেজার হাতে ধরা পড়েন ক্যারিবীয় তারকা। ৩০ বলে ৫ ছক্কা ও ২ চারে গেইলের ব্যাট থেকে আসে ৪৪ রান। চিটাগংয়ের স্কোর তখন ১অ ওভার ৪ বলে ২ উইকেটে ৮২।

 

এরপর তৃতীয় উইকেটে শোয়েব মালিককে সঙ্গে নিয়ে ৩০ রানের জুটি গড়েন তামিম। তবে দুই ওভারের মধ্যে এই দুজনের বিদায়ে চিটাগংয়ের রানের গতি কমে যায়। রেজার বলে মিরাজকে ক্যাচ দেওয়ার আগে মালিক করেন ১২ বলে ১৪ রান। তামিম ৪৪ বলে ফিফটি তুলে নিয়ে পরের ওভারে উইলিয়ামসের বলে কভারে সামিত প্যাটেলকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ৪৬ বলে ৬টি চারে তামিম করেন ৫১।

 

তামিমের বিদায়ের পরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে চিটাগংয়ের ব্যাটিং। পরের দুই ওভারেই চিটাগং হারায় ৪ উইকেট। এর মধ্যে উইলিয়ামসের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারেই ৩ উইকেট। শেষ ৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে চিটাগং তুলতে পারে মাত্র ৩০ রান।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ডিসেম্বর ২০১৬/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়