বন্ধু নির্বাচনই কি অমিতের অপরাধ ?
এমএ খান || রাইজিংবিডি.কম
নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী অমিত সাহার বন্ধু নির্বাচনই কি তার অপরাধ ছিল? বৃহস্পতিবার অমিত সাহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগে ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায়ের পর্যবেক্ষণে এ প্রশ্ন রাখেন।
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, তিন অক্ষরের ‘বন্ধু’ শব্দটির অর্থ যে কিনা শত্রু নয় এবং যার উপর বিশ্বাস রাখা যায়। বন্ধুত্ব হচ্ছে মমত্ব, আনুগত্য, ভালবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা ও গভীর বিশ্বাসের মিশ্রণ। বন্ধুত্বের মধ্যে লোভ-লালসা থাকবে কেন? কি অপরাধ ছিল অমিত সাহার এবং তার পরিবারের? বন্ধু নির্বাচনই কি তার অপরাধ ছিল? নাকি অমিত সাহার পরিবারের ভুল ছিল বন্ধু নামীয় শত্রুদের সাথে অমিত সাহাকে মিশতে দেওয়া।
বিচারক বলেন, বন্ধু নির্বাচন কখনই ভুল হবে না যদি বন্ধুটির মাঝে মানবিক গুনাবলী ও মূল্যবোধ থাকে, যদি বন্ধুটির মনের মাঝে লোভ-লালসা বাঁধা না থাকে। এক বন্ধু অন্য বন্ধুর জীবনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে সেই বন্ধুত্ব নাইবা হোক। নিহত অমিত সাহার বন্ধুদের দ্বারা নৃশংসভাবে হত্যা ‘বন্ধুত্ব’ শব্দটিকে কলঙ্কিত করেছে।
বন্ধুর মাঝে কোন লোভ-লালসা থাকবে না বলে বিচারক আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বন্ধুত্বের মাঝে থাকবে মমত্ব, ভালবাসা, শ্রদ্ধা। সেই চরিত্রের বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব করে নিজে নিরাপদ থাকা যায়। পরিবার নিশ্চিত হতে পারে বাড়ির ছেলে বা মেয়েটির বা অন্যদের বন্ধু সঙ্গ নিয়ে।
বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেন, আসামিগণ বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়ে যে নৃশংস ঘটনার অবতারণা করেছে তার পুনরাবৃত্তি না হোক, আদালত তা কামনা করে।
এদিকে মামলাটিতে দুইজনের মৃত্যুদ- এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন আদালত।
মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই আসামি হলেন, ‘আফতাব আহমেদ শিহাব এবং আল আমিন ইসলাম পিন্টু। রুহুল আমিন রুবেলকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়েছে। দ-প্রাপ্ত তিনজনই অমিতের বন্ধু।’
দ-বিধির ৩৯৪/৩৪ ধারায় শিহাব, পিন্টু এবং রুবেলকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন আদালত। তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাদের প্রত্যেককে আরো ছয় মাসের সশ্রম কারাভোগ করতে হবে।
দ-বিধির ৪১১/৩৪ ধারায় এতিনকে তিন বছরের কারাদ- এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদ- দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর অমিত সাহার বাবা শ্যামল চন্দ্র বলেন, ‘রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। ন্যায় বিচার পেয়েছি।’
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাফায়েত হোসেন সজিব বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।’
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর আসামিরা অমিত সাহার পল্লবীর ভাড়া বাসা থেকে ৮ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। লুটের টাকা অমিত সাহা দেখে ফেলায় জুসের মধ্যে অচেতন করার ওষুধ দিয়ে তা খাইয়ে গলা টিপে তাকে হত্যা করে আসামিরা। পরে লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। হত্যাকা-ের পর অমিতের বাবা পল্লবী থানায় মামলা করেন।
২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল তিন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালতে তিন আসামিই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ২০১৩ সালের ২৪ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলায় ৩২ সাক্ষীর মধ্যে ২১ জন সাক্ষ্য দেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ ডিসেম্বর ২০১৬/এমএ খান/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন