ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ট্যারিফ ছাড় জটিলতা, মিলছে না কোস্টাল চুক্তির সুফল

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০০, ২৮ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ট্যারিফ ছাড় জটিলতা, মিলছে না কোস্টাল চুক্তির সুফল

হাসান মাহামুদ : ভারতের সঙ্গে কোস্টাল শিপিং চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। আলোচনা চলছে শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ডের সঙ্গে।

 

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোস্টাল চুক্তি হলেও ট্যারিফ ছাড় সংক্রান্ত জটিলতার নিরসন না হলে বাংলাদেশ এর কোনো সুফল পাবে না।

 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নৌবাণিজ্য বাড়ানো এবং কম খরচে পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে কোস্টাল শিপিং চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। চুক্তির আওতায় আনুষ্ঠিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ-ভারত নৌপথে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ৪০ শতাংশ ট্যারিফ ছাড় পাচ্ছে না বাংলাদেশের জাহাজ মালিকরা।

 

জানা গেছে, বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য কোস্টাল ট্যারিফ নামে পৃথক কোনো ট্যারিফ না থাকায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

 

এখনো সাতটি বন্দরে ট্যারিফ ছাড় দেয়নি ভারত। এ ছাড়া দুইদেশের অর্থ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে চুক্তি অনুযায়ী সুবিধা মিলছে না। এ অবস্থায় খুব শীঘ্রই এসব সমস্যা সমাধান না হলে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে এ রুটে জাহাজ চালানো যাবে না বলে মনে করছেন জাহাজ মালিকরা।

 

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলাম বলেন, ভারতের সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি হয়েছে। আগামীতে আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি হতে যাচ্ছে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে ট্যারিফ ছাড়ের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত করার হয়েছে। শিগগিরই গেজেট প্রকাশ হবে।

 

যদিও ট্যারিফ ছাড়ের গেজেট দ্রুত প্রকাশ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য পরিকল্পনাও থমকে আছে বলে জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারত কোস্টাল শিপিং চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সাতটি বন্দরে ট্যারিফ ছাড় পাওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। আবার দেশটির বেশিরভাগ বন্দরের চার্জ বেশি। এসব বিষয়ও জাহাজ পরিবহনের অন্তরায় হিসেবেও দাঁড়িয়েছে, ব্যবসায়ীদের মতে।

 

আর জাহাজ মালিকরা বলছেন, ট্যারিফ ছাড়ের পাশাপাশি ট্যাক্স ফ্রি জ্বালানি তেল নেওয়ার সুবিধা না পেলেও কোস্টাল শিপিং চুক্তির কোনো সুফল আসবে না। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি নৌ বাণিজ্যও বাড়বে না। এ ছাড়া শিপমেন্টের ক্ষেত্রে জ্বালানি তেল গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। একটি বড় জাহাজ ২০০ ডলারে তাদের একটন জ্বালানি সংগ্রহ করতে পারছে। সেখানে আমাদের প্রায় ৮৭২ ডলার খরচ করতে হচ্ছে।

 

এদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ট্যারিফ ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ছাড়া কোস্টাল শিপিং চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে দুদেশের একটি যৌথ কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশক্রমে এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে দুদেশ।

 

এক্ষেত্রে আশু সমস্যার সমাধান দেখছেন না জাহাজ মালিকরা। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ যতটা উদ্যোগী, ভারত ততটা নয়। এটি সমস্যা সমাধানের প্রধান অন্তরায় এবং দীর্ঘসূত্রিতার কারণ।

 

চুক্তি অনুযায়ী পানগাঁও থেকে ভারতের ৭টি বন্দরে বাংলাদেশের জাহাজ ভিড়তে পারবে। বন্দরগুলো হচ্ছে কলকাতা, হলদিয়া, বিশাখা, কৃষ্ণ, চেন্নাই, প্যারাদ্বীপ ও কাকিনাডা বন্দর। এই সাতটি বন্দরে ট্যারিফ ছাড় পাওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। একদিকে কলকাতাসহ বেশিরভাগ বন্দরের চার্জ বেশি, অন্যদিকে ট্যারিফ ছাড়ের কোন গেজেট এখনও হয়নি। ফলে সব প্রস্তুতি থাকলেও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন বাংলাদেশি মালিকরা।

 

প্রসঙ্গত, ভারতের বিভিন্ন পোর্ট থেকে নৌপথে পণ্য ঢাকায় পৌঁছাতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। কোনো কোনো সময় এর থেকে বেশি সময় লাগে। ভারত থেকে পণ্যবাহী কন্টেইনার প্রথমে কলম্বো কিংবা সিঙ্গাপুর যায়। এরপর সিঙ্গাপুর থেকে আবার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। কিন্তু ভারতের নির্দিষ্ট সংখ্যক পোর্ট থেকে পানগাঁও রুটে নৌপথে জাহাজ চলাচল করায় সময় লাগবে ৫ থেকে ৭ দিন।

 

বাংলাদেশের পতাকাবাহী এমভি হারবার-১ এর মাধ্যমে নৌপথে পণ্য পরিবহন শুরু হয়। ১৭৬টি কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতার কন্টেইনারবাহী জাহাজটি প্রথমে প্রায় দেড়শ কন্টেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। দেশীয় নিপা পরিবহনের মালিকানাধীন হারবার-১ এর পর আগামী মাসে এমভি স্যামুয়েল নামে আরো একটি জাহাজের সাথে যুক্ত হবে।

 

বর্তমানে বেনাপোল, বুড়িমারিসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সিংহভাগ পণ্য আমদানি হয়। এক্ষেত্রে পরিবহন খরচ বেশি লাগার পাশাপাশি দুর্ঘটনা ও পণ্য চুরির ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া সড়ক মহাসড়কগুলোতে বাড়ছে যানজট। তাই নৌপথে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগে ভারতের আগ্রহও রয়েছে। শুধু প্রয়োজন বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ অক্টোবর ২০১৬/হাসান মাহামুদ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়