ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিপাকে বাড়িওয়ালা ও ব্যাচেলর

মুশফিকুর রহমান বাদল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৯, ৩০ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিপাকে বাড়িওয়ালা ও ব্যাচেলর

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

মুশফিকুর রহমান বাদল : জুলাই মাসে দেশে পর পর বড় ধরনের দুটি জঙ্গি হামলার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি রাজধানীতে বাড়িওয়ালা-ব্যাচেলরদের মধ্যে বেশ অস্বস্তি বিরাজ করছে।

 

গত ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানের আর্টিজান হোটেল অ্যান্ড বেকারিতে এবং কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সকালবেলা বড় ধরনের জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও নিহত হন। এরই প্রেক্ষাপটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিবিরোধী সাড়াশি অভিযান শুরু করে যা অব্যাহত রয়েছে।

 

১ জুলাই গুলশানের আর্টিজান হোটেলে অনেক দেশি-বিদেশি সেদিন রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন। আর জঙ্গিরা সেটাকেই মোক্ষম সুযোগ বলে মনে করে হোটেলে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে। পরে তারা খাবার খেতে আসা দেশি-বিদেশিদের নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিন দুই পুলিশ কর্মকর্তা, ২০ জন বিদেশিসহ ২৮ জন নিহত হয়। অবশ্য যৌথবাহিনীর অভিযানে সেদিন হামলাকারী ছয় জঙ্গি নিহত ও আহত অবস্থায় এক জঙ্গি আটক হয়। সেদিনের সে শোক কাটতে না কাটতেই ছয়দিন পরই কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সকালবেলা  চেকপোস্টে তল্লাশিকালে পুলিশের ওপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। এখানেও বেশ কয়েক জন হতাহত হন। হামলাকারী কয়েক জঙ্গি নিহত ও সেখানেও আহতাবস্থায় আটক হয় আরেক জঙ্গি। এ দুটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দেশের মানুষ  নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও হিমশিম খেতে হয়। এরপরই সরকার সিদ্ধান্ত নেয় জঙ্গি নির্মূলে সর্বাত্মক অভিযানের। খোদ রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জঙ্গি খোঁজার অভিযান শুরু হয়।

 

এরই মধ্যে জঙ্গিদের অবস্থান অনেকটা নিশ্চিত করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা কোথায় অবস্থান করেছে সেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাইয়ের পর শুরু হয় মূল অভিযান। এতে সাফল্যও আসতে শুরু করেছে। গুলশান হামলায় সংশ্লিষ্ট জঙ্গিরা যেসব বাসায় অবস্থান করছিল, সেসব বাসার মালিক, কেয়ারটেকারকে আটক করা হয়। তখন জানা যায়, এসব বাসার মালিক বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে কোনো তথ্য সংরক্ষণ করে থানায় জমা দেননি। অথচ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বছরখানেক আগেই নির্দেশ দিয়েছিল, বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় অবশ্যই ভাড়াটিয়াদের ছবি সংবলিত তথ্য ফরম পূরণ করে স্থানীয় থানায় জমা দিতে হবে।

 

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে নাগরিক তথ্যভাণ্ডার তৈরির লক্ষ্যে ২০ লাখ ১৫ হাজার ৩৭৪টি ফরম বিতরণ করে রাজধানীর ৪৯ থানা পুলিশ। এর মধ্যে ১৮ লাখ ৪ হাজার ৩১৯ বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার তথ্য পুলিশের কাছে জমা পড়েছে। এ তথ্যভাণ্ডারে ঢাকায় স্থায়ী এবং অস্থায়ীভাবে বাস করা ভূমির মালিক (বাড়িওয়ালা) এবং ভূমি ব্যবহারকারী (ভাড়াটিয়া) উভয়ের তথ্য রয়েছে। যাতে সহজেই যে কোনো প্রয়োজনে পুলিশের তথ্য পেতে সমস্যা না হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে অনেক বাড়িওয়ালা  ভাড়াটিয়াদের কোনো তথ্য সংরক্ষণ করেনি বা স্থানীয় থানায় সেগুলো জমা দেয়নি। এ অপরাধে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্যসহ তার বাড়ির কেয়ারটেকার আটক হয়েছে। গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারীরা ঝিনাইদহের যে বাড়িতে ভাড়া ছিল সেই বাড়ির মালিক ও সহযোগীকেও আটক করেছে।

 

সর্বশেষ ২৫ জুলাই রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। ২৬ জুলাই ভোরে সেখানে অভিযান চালানোর পর সশস্ত্র ৯ জঙ্গি নিহত ও একজন আহত অবস্থায় আটক হয়। কল্যাণপুরের এ বাড়িটিরও বিভিন্ন তলা মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া ছিল। জঙ্গিরা পঞ্চম তলা ভাড়া নিয়ে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। আর বাড়িওয়ালাও তাদের কোনো তথ্য সংরক্ষণ করে স্থানীয় থানায় জমা দেয়নি। এ অপরাধে বাড়িওয়ালার স্ত্রীকে পুলিশ আটক করেছে। এসব ঘটনায় বাড়িওয়ালাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ ঢাকা শহরের অনেক বাড়িওয়ালাই বেশি ভাড়া পাওয়ার আশায় মেস করে ব্যাচেলরদের ভাড়া দেন। আর মেসে কে এলো কে গেল সেসবের কোনো খোঁজ রাখার তাগিদ তারা বোধ করেন না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। অনেক বাড়িওয়ালা তো এরই মধ্যে মেস বন্ধ করে দেয়ার নোটিশ জারি করেছে।

 

ফার্মগেট এলাকায় বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের আধিক্য থাকায় সেখানেও বেশির ভাগ বাসায় ব্যাচেলরদের মেস করে ভাড়া দেওয়া হয়। সেখানে মেস করে পড়ালেখা করেন এমন কয়েকজন জানান, তারাও বাসা-বাড়ির মেসগুলোতে জঙ্গি আস্তানার খবরে বেশ হতাশ। বাড়িওয়ালারা এরই মধ্যে তাদের মেস ছেড়ে দিতে বলেছেন। বাসার সামনে এরই মধ্যে ‘ব্যাচেলরদের ভাড়া দেওয়া হবে না’ লিখে বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে তারা প্রচণ্ড হতাশ এবং ঢাকায় থাকার কী ব্যবস্থা হবে সে চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছেন। তাদের বাবা-মায়েরাও বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত। রেডিও-টিভিতে খবর শুনে তারাও সন্তানদের ঢাকায় থাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সব কিছু মিলিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বহু বাড়িওয়ালা এবং মেসে অবস্থানকারী ব্যাচেলরদের এখন জঙ্গিভীতি তাড়া করে ফিরছে।

 

লেখক : সংবাদকর্মী

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৬/মুশফিক/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়