ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

মজুদ খাদ্য নিয়ে বিপাকে সরকার

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মজুদ খাদ্য নিয়ে বিপাকে সরকার

কেএমএ হাসনাত : দেশে মজুদ করা খাদ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার। সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল ও গম মজুদ রয়েছে।

 

বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে এসব চাল ও গম কম দামে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

 

মঙ্গলবার সচিবালয়ে খাদ্য মজুদ সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী রাইজিংবিডিকে এ কথা বলেন। বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদসহ অর্থসচিব, খাদ্য সচিব ও কৃষি সচিব উপস্থিত ছিলেন।

 

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিবছরই খাদ্য মজুদ গড়ে তোলে। চলতি বছর দেশে খাদ্য মজুদের ধারণ ক্ষমতা যেমন বেড়েছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য মজুদ ও বেড়েছে। বর্তমানে দেশে খাদ্য মজুদের ক্ষমতা ১৯ লাখ টন আর মজুদ রয়েছে ১৫ লাখ টনের মত।

 

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন গুদামে যে চাল ও গম  রয়েছে সেগুলোর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এর মধ্যে চালের অবস্থা বেশি খারাপ। এসব চাল খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা না হলে ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি হবে। এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় জরুরি বৈঠক ডেকেছিল। বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে মজুদ করা খাদ্য কম দামে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ওএমএসে প্রতি কেজি চাল ২০ টাকা এবং গম ১৯ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এ চাল এখন আর এ দামে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। দাম কিছুটা কমিয়ে বিক্রি করার চিন্তা করতে হবে। পুরোটাই এখন নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের উপর।

 

তবে খাদ্য মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে, চাল ও গমের দাম প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা করে কমালে সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে। এরপরও দ্রুত সময়ের মধ্যে বিক্রি প্রক্রিয়া শুরু করতে না পারলে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে।

 

সূত্র জানায়, মজুদকৃত চাল ও গম গুদাম থেকে বের করতে না পারলে আগামী মওসুমে ধান-চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। দেশে এখন পর্যাপ্ত পরিমান খাদ্য রয়েছে বিধায় মানুষ আর খোলা বাজার থেকে চাল কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। আর এর ফলে সরকারি গুদামগুলোতে চাল ও গমের মজুদ স্থবির হয়ে রয়েছে। মজুদ কমাতে না পারলে একদিকে যেমন মজুদ করা খাদ্য নষ্ট হয়ে যাবে অন্যদিকে নতুন খাদ্য মজুদ করা সম্ভব হবে না।

 

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি গুদামগুলোতে মজুদকৃত  চাল ও গমের অবস্থা এতটাই খারাপ যে গ্রামের গরীব জনগোষ্ঠিও এ চাল নিতে চাচ্ছে না। কারণ খোলা বাজারে বিক্রির জন্য সরকারি গুদাম থেকে যে চাল সরবরাহ করা হয় তা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। চালগুলো অপেক্ষাকৃত মোটা। অথচ বাজারে যে চাল পাওয়া যায় তার দাম প্রতি কেজি ২৪ টাকা। স্বাভাবিক ভাবে সাধারন মানুষ চার টাকা বেশি দিয়ে হলেও ফ্রেশ এবং কিছুটা সরু চাল কিনতে পারছেন। ফলে ক্রেতারা ওএমএসের চাল কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

 

সূত্র জানায়, এ মূহুর্তে সরকারি গুদামের চাল কম দামে বাজারে ছাড়া হলে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে সে নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আগামী ৩/৪ মাসের মধ্যে কৃষকের ঘরে নতুন ধান উঠতে শুরু করবে। সে সময় সরকারি গুদামগুলোর জন্যও চাল সংগ্রহ করা হবে। কম দামে ছেড়ে দেওয়া চাল সংগ্রহ করে সে গুলোই আবার সরকারি গুদামে সরবরাহ করার আশংকা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয়ে কড়া নজর রাখার বিষয়েও খাদ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, মজুদকৃত চাল ও গম কম দামে খোলা বাজারে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সাড়া পাওয়ার পরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে গ্রামীন এলাকার চেয়ে শিল্পাঞ্চলে গরীব মানুষদের মধ্যে এসব চাল ও গম বিক্রির জন্য প্রাথমিক ভাবে আলোচনা হয়েছে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/হাসনাত/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ