ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মনা আর পাখিদিদি || রণজিৎ সরকার

রণজিৎ সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মনা আর পাখিদিদি || রণজিৎ সরকার

সকাল হয়েছে। মনা এখনও ঘুমিয়ে আছে। মর্নিং শিফটে মনার স্কুল। স্কুলে যেতে হবে। আর ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। মা বাসায় নেই। গতকাল জরুরি কাজে মামাদের বাসায় গেছেন মা।

মনার স্কুলে পাঠানোর দায়িত্ব আজ আমাকেই পালন করতে হবে। কাজেই মনার ঘুম এখনই ভাঙাতে হবে। আদর করে মনা আমাকে পাখিদিদি বলে ডাকে।

মনা শুয়ে আছে। বিছানার কাছে গেলাম। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ধীরে ধীরে বললাম, গুড মর্নিং মনা।

আমার কথা শুনে মনা নড়েচড়ে উঠল। আমি আবার বললাম, গুড় মর্নিং মনা।

বিছানায় উঠে বসল। আমার দিকে তাকাল। আমি বুঝতে পারলাম, আমার ডাকে খুশি হয়নি মনা।

মনা হাত দিয়ে চোখ নাড়তে নাড়তে বলল, ‘পাখিদিদি, তুমি তো বেশ ভালো করেই জানো, কাল বেশি রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। আজ একটু দেরি করে উঠব। তা না, তুমি ডাকাডাকি শুরু করেছ।’

আদর গলায় ধীরে ধীরে বললাম, মনা, আমি জানি, তুমি স্কুলের পড়া, মাস্টার মশাইয়ের পড়া, ক্লাস টেস্টের পড়া, ড্রইং করা, গানের রেওয়াজ করা সব তো তোমাকেই করতে হয়, আগামীতেও করতে হবে, এগুলো এমন কাজ, কেউ কারওটা করে দিতে পারে না। সহযোগিতা করতে পারে।

মনা মাথা নড়ায়।

আবার বললাম, তুমি আর দেরি করো না। তাড়াতাড়ি রেডি হও, স্কুলে যেতে হবে।

মনা বিছানা ছেড়ে বলল, ‘পাখিদিদি, আমাকে আজ স্কুলে নিয়ে যেতে হবে। আমার সঙ্গে যেতে হবে তোমার।’

মনার এলোমেলো চুলগুলো বেঁধে দিয়ে বললাম, আমি তো যাব। তুমি হাত মুখ ধুয়ে এসো। একসঙ্গে নাস্তা করব। তারপর দুজন বের হব।

মনা হাতমুখ পরিষ্কার করতে গেল। আমি নাস্তা রেডি করলাম। মনা ফ্রেস হয়ে এল। দুজন একসঙ্গে খেতে বসলাম।

মনা বলল, ‘পাখিদিদি, মা, কখন আসবে?’

বললাম, মা, সরাসরি অফিসে যাবে। অফিস শেষে বাসায় আসবে।
মনা মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘ও, আচ্ছা।’

বললাম, জানো মনা, শিশু, কিশোর-কিশোরীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।

মনা বলল, ‘এ কথা অনেক দিন থেকে শুনে আসছি।’

কিন্তু তুমি কি জানো মনা, শিশু, কিশোর-কিশোরীরা যদি সঠিক পথে এগিয়ে না নিয়ে যেতে পারে, তাহলে দেশ ও জাতির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে।

মনা রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলল, ‘আমি ছোট মানুষ। আমি কি আর এত কিছু বুঝি। আমাকে সঠিক পথে গড়ে তোলার জন্য তুমি আর মা তো আছ। তোমরা আমাকে যা বলো, আমি তাই শুনি। আমি তো কখনো তোমাদের অবাধ্য হইনি। তুমি তো আমাকে পরিচালনা করো। তোমার কথার বাইরে কোনো কাজ করেছি, করিনি। করবোও না কখনো।’

মনার দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমাকে নিয়ে আমার অনেক আশা, অনেক ইচ্ছা।

মনা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘পাখিদিদি, তোমার একটা ইচ্ছার কথা বলো আমাকে?’

বললাম, তোমাকে আমি সেই জায়গায় দেখতে চাই।
‘কোন জায়গা পাখিদিদি?’

বললাম, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবে তুমি গান গাইবে, আর আমি দর্শক সারিতে বসে তোমার গান শুনব।

মনা বলল, ‘পাখিদিদি, তুমি আর মা, আমাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সেভাবে গড়ে তুলবে। আমি সেভাবেই গড়ে উঠব। দেখবে কোন একদিন সে অনুষ্ঠানে আমি গান গাইছি।’

আমি বুক ভরা আশা নিয়ে বললাম, ঠিক আছে মনা, অবশ্যই তোমাকে সেভাবেই গড়ে তুলব আমরা।

একটু পর নাস্তা খাওয়া শেষ হলো। মনাকে নিয়ে স্কুলের পথে রওনা হলাম।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫/রণজিৎ/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়